অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ভারতের। এক দিনের বিশ্বকাপে সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল ২০২৩ সালে। সে বার প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। রবিবার সামনে ছিল নিউ জ়িল্যান্ড। তাদের হারিয়ে ট্রফি তুলেনিলেন রোহিত শর্মারা। তবে শুধু ফাইনাল নয় গোটা প্রতিযোগিতাতেই অপ্রতিরোধ্য ছিল ভারত। কোন পাঁচটি কারণে ভারতীয় এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল?
কোহলির ব্যাটিং
এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৫ ম্যাচে ২১৮ রান করেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে মাত্র ১ রান করে আউট হলেও, গোটা প্রতিযোগিতায় ফর্মে ছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর শতরানে ভর করেই ম্যাচ জিতেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে করেছিলেন ৮৪ রান। সেই ম্যাচেও সেরা হয়েছিলেন কোহলি। ভারতকে দু’টি বড় ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ ব্যাটার যে ভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করে দলকে ভরসা দিলেন, তাতে গোটা দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কোহলি চাপটা কাটিয়ে দিতেই শ্রেয়স আয়ার, লোকেশ রাহুলেরা নিশ্চিন্তে রান করে ম্যাচ জেতালেন ভারতকে। ফাইনালে যদিও কোহলি নন, ভারতকে ম্যাচ জেতালেন রোহিত।
৪ স্পিনারের ২৬ উইকেট
ভারত গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ থেকে চার জন স্পিনার নিয়ে খেলতে নামছিল। রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল এবং কুলদীপ যাদব ছিলেন। সেই সঙ্গে যোগ হন বরুণ চক্রবর্তী। তাঁরা চার জন মিলে পুরো প্রতিযোগিতায় ২৬টি উইকেট তুলে নিলেন। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে বরুণ নিলেন ৯ উইকেট। তিনিই ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। শুধু উইকেট নেওয়াই নয়, তাঁরা মিডল ওভারে যে ভাবে রান আটকে রেখেছিলেন, সেটাও ভারতীয় দলকে ভয়ঙ্কর করে তোলে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সব দল চায় মিডল ওভারে উইকেট ন হারাতে। সেই সময় স্ট্রাইক রোটেট (সিঙ্গলস নেওয়া) করাই মূল লক্ষ্য থাকে দলগুলির। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের ফাঁদে আটকে যায় সেটা। ফলে ভারতের প্রতিপক্ষের উপর চাপ বেড়ে যায়। পরের দিকে মারতে গিয়ে উইকেট হারিয়ে আরও বেকায়দায় পড়ে দলগুলি।
আরও পড়ুন:
ব্যাটিং গভীরতা
ভারতীয় দলের হয়ে আট নম্বরে ব্যাট করতে নামেন রবীন্দ্র জাডেজা। এটাই বুঝিয়ে দেয় দলটির ব্যাটিং গভীরতা কত বেশি। যে কারণে যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ব্যাটারকে ভারতে রেখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যেতে পারে একটা দল। বসিয়ে রাখতে পারে ঋষভ পন্থকে। রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল ওপেন করেন। তিন নম্বরে বিরাট কোহলি। চারে নামেন শ্রেয়স আয়ার। চমক এর পরেই। পাঁচ নম্বরে অক্ষর পটেলকে নামায় ভারত। তিনি গোটা প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ভাবে রান করে গিয়েছেন। তাঁর ইনিংস দলের মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করেছে। সেই সঙ্গে রয়েছেন লোকেশ রাহুল, হার্দিক পাণ্ড্য এবং জাডেজা। তাঁরা তিন জন ফিনিশারের কাজ করতে পারেন, আবার ইনিংসও ধরতে পারেন। যে কারণে শুরুর দিকে উইকেট হারালে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় না ভারত।
শামির ৯ উইকেট
স্পিনারদের দাপটের মাঝেই ৯ উইকেট তুলে নিয়েছেন মহম্মদ শামি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহকে পায়নি ভারত। তিনি চোটের কারণে খেলতে পারেননি। যে কারণে শামির উপর বড় দায়িত্ব ছিল। ভারতীয় দল শুরুতে তাঁর সঙ্গে হর্ষিত পটেলকে খেলালেও পরের দিকে এক জন পেসার নিয়েই খেলতে নামে। সেই দায়িত্বটা ছিল শামির কাঁধে। নিজের কাজটা করে গিয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। পরের ম্যাচগুলিতেও নতুন বলে চাপ তৈরি করেছেন বার বার। ফাইনালে যদিও ডেথ ওভারে রান দিয়ে ফেলেন, তবুও শামি না থাকলে ভারতের পেস আক্রমণ নেতৃত্বহীন হয়ে যেত এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
সব ম্যাচ দুবাইয়ে
ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ অবশ্যই দুবাইয়ে সব ম্যাচ খেলা। বাকি সব দলকে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ঘুরতে হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউ জ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে দুবাইয়েও যেতে হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দল দুবাইয়েই ছিল। রোহিতদের শুধু হোটেল থেকে মাঠে যেতে হয়েছে এবং মাঠ থেকে হোটেলে ফিরতে হয়েছে। যাতায়াতের পরিশ্রম থেকে বেঁচে গিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে একই মাঠে সব ম্যাচ হওয়ায়, পরিকল্পনা করাও সহজ হয়েছে রোহিতদের জন্য। তারা সেই অনুযায়ী দল বেছে নিতে পেরেছেন। যা বাকি দলগুলির থেকে এগিয়ে দিয়েছে ভারতকে। যদিও গম্ভীর, রোহিতেরা মানতে চাননি একই মাঠে খেলায় তারা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। এক মাত্র শামি স্বীকার করেছিলেন, বাড়তি সুবিধার কথা।