E-Paper

অভিষেকের ফোন লারাকে: টেস্টে খেলতে চাই, কী করতে হবে বলুন

মুম্বইয়ে সিয়াট সিসিআর অ্যাওয়ার্ডসে জীবনকৃতি সম্মান পেলেন লারা। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা সেরে নেন তিনি।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৩৫
অভিষেক শর্মা।

অভিষেক শর্মা। —ছবি : সংগৃহীত

ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের ভয়াবহ যুগ চলছে বর্তমানে। আমদাবাদে ভারতের বিরুদ্ধে আড়াই দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে টেস্ট। পরের ম্যাচ দিল্লিতে। তার আগে রস্টন চেজ়দের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসতে চলেছেন কিংবদন্তি ব্রায়ান চার্লস লারা।

তিনি মনে করেন, টেস্ট খেলার ইচ্ছেই চলে গিয়েছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের। সব চেয়ে বড় কারণ, অর্থের অভাব। তবুও শেই হোপদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে চলেছেন লারা। জানিয়েছেন, তাঁদের সময়ও পরিকাঠামো উন্নত ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে ভাল খেলার তাগিদ প্রত্যেক মুহূর্তে এগিয়েদিত তাঁদের।

মুম্বইয়ে সিয়াট সিসিআর অ্যাওয়ার্ডসে জীবনকৃতি সম্মান পেলেন লারা। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা সেরে নেন তিনি। লারা বলছিলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটারেরা আর টেস্ট খেলতে চায় না। সারা বিশ্বেই সেই প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আমদাবাদেও খুব একটা দর্শক ছিল না মাঠে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্ট খেলার যে তাগিদ দেখা যায়। বিশ্বের বাকি দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তা দেখা যাচ্ছে না। এই দিকটাই আমাদের দেখতে হবে।’’

লারা জানিয়েছেন, অভিষেক শর্মার মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানও টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখেন। এক সময় সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের মেন্টর ছিলেন লারা। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন অভিষেক। এখনও ফোনে যোগাযোগ করেন ভারতীয় ওপেনার। এশিয়া কাপে বিধ্বংসী মেজাজে থাকলেও তাঁর টেস্ট খেলার তাগিদ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কিংবদন্তি। বলছিলেন, ‘‘অভিষেকের মতো প্রতিভা ক্রিকেটবিশ্বে খুব একটা নেই। ওর মধ্যে বিশেষক্ষমতা আছে। বোলারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে।’’ যোগ করেন, ‘‘কিন্তু ওর সব চেয়ে ভাল ব্যাপার কী বলুন তো? আমাকে ফোন করে বলেছিল, স্যর আমি টেস্ট খেলতে চাই। তার জন্য কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে? এক জন উঠতি ক্রিকেটার যখন টেস্ট খেলার চিন্তা করছে, তা হলে অভিজ্ঞরা কী ভাবে আগ্রহ হারাচ্ছে? আমি নিশ্চিত, ভারতীয় ক্রিকেটকে শাসন করবে অভিষেক।’’

কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টস বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় হিসেবে খেলার ফলেই ক্রিকেটারেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। প্রত্যেকটি দ্বীপরাষ্ট্রের আলাদা ভাবে খেলা উচিত। যেমন ফুটবল অথবা অ্যাথলেটিক্সে হয়। লারা যদিও রবার্টসের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমি ১৭ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে খেলেছি। আগেও যেমন গর্বিত ছিলাম, এখনও গর্বিত। আমি কখনও মনে করিনি আলাদা দ্বীপরাষ্ট্র হিসেবে খেলা উচিত। ভিভ রিচার্ডস, কার্টলি অ্যামব্রোসকে প্রশ্ন করলে ওরাও একই কথা বলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবেই আমাকে সকলে চেনেন। শুধুমাত্র ত্রিনিদাদের মানুষ হিসেবে কিন্তু চেনেন না। আসল হচ্ছে ভাল খেলার আগ্রহ। সেটা থাকলে কিছুই যায় আসে না।’’

লারা মনে করেন, ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহই টেস্ট ক্রিকেটের পতনের কারণ। তাঁর কথায়, ‘‘আর কোন দেশে কী হয়েছে জানি না। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটারেরা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগের দিকেই বেশি আগ্রহ দেখায়। কারণ, সেখানে অর্থ আছে। আর্থিক ভাবে আমাদেরও উন্নত হতে হবে। কোথা থেকে অর্থ আনা যায়, দেখতে হবে। তবেই না ক্রিকেটারদের আগ্রহ ফিরবে।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে আমি আবারও বলব। টেস্ট খেলার ইচ্ছে থাকতে হবে প্রত্যেকের মধ্যে। না হলে কিছুই ঠিক হবে না।’’

নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন মনে করেন, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাচের মাত্রা বাড়ানো উচিত। দ্বিস্তরীয় টেস্ট নিয়েও বিশেষ আগ্রহ দেখালেন না তিনি। কেনের কথায়,‘‘দুর্বল দলগুলো যদি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে না পারে, তা হলে ওদের উন্নতি হবে কী করে? টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। নিউ জ়িল্যান্ড যেমন দুই অথবা তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ় খেলে। সেই সংখ্যাও বাড়ানো উচিত। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো আমাদেরও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ় দেওয়া হোক।’’

ভারতীয় ক্রিকেটে পটপরিবর্তন দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তিনি মনে করেন, রোহিত শর্মার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে শুভমন গিলের। বলছিলেন, ‘‘কেন রোহিত শর্মাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হল সেটা নির্বাচকেরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি মনেকরি, রোহিতের উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে শুভমন। এটাই সুযোগ রোহিতের থেকে ওর শিখে নেওয়ার। আর দু’বছর পরে বিশ্বকাপ। শুভমনকে তাই সময় দেওয়া হোক।’’ যোগ করেন, ‘‘রোহিত কিংবদন্তি। ওর কি আর বাড়তি অনুপ্রেরণার প্রয়োজন আছে? ভারতীয় দলকে এত বছর ধরে ভাল ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। আশা করব, শুভমনের নেতৃত্বেও ও ভাল ক্রিকেট খেলবে। ভারতীয় দলের এখনও অনেক কিছু পাওয়ার আছে ওর থেকে।’’

দুই তারকার কথোপকথন শেষে একটাই বার্তা ভেসে এল। টেস্ট ক্রিকেটকে শেষ হতে দেওয়া যাবে না। টি-টোয়েন্টি হতে পারে বিনোদনের মঞ্চ। আসল পরীক্ষা দিতে হয়সাদা জার্সিতেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Brian Lara test cricket

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy