সমস্যা বাড়ছে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস’-এ। ভারতীয় ক্রিকেটারদের চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছেন আয়োজকেরা। বাতিল হয়ে গিয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এ বার প্রতিযোগিতার স্পনসরও বয়কট করল পাকিস্তানকে। তাদের কোনও ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না ভারতীয় স্পনসর। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা।
১৮ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। চলবে ২ অগস্ট পর্যন্ত। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম মালিক বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগণ। প্রতিযোগিতার অন্যতম স্পনসর ‘ইজ়মাইট্রিপ ডট কম।’ তারা জানিয়েছে, “দু’বছর আগে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে। তার পরেও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। আমরা ভারত চ্যাম্পিয়ন্সকে সমর্থন করি। ওদের পাশে আমরা রয়েছি। নীতিগত ভাবে পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের প্রচার আমরা করব না।” ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বার্তাও দিয়েছে ‘ইজ়মাইট্রিপ ডট কম।’ তারা আরও লিখেছে, “আমরা শুরু থেকেই প্রতিযোগিতার আয়োজকদের আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। পাকিস্তানের কোনও ম্যাচে আমরা নেই। ভারত আমাদের কাছে সকলের আগে। কাপ জিতে দেশে ফেরো।”
বিভিন্ন দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে ইংল্যান্ডের এজবাস্টনে চলছে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস’। ভারতীয় দলের অধিনায়ক যুবরাজ সিংহ। রবিবার এজবাস্টনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই ম্যাচ নিয়ে আপত্তি জানান ভারতীয় সমর্থকেরা। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন। তার পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে ভারত। সীমান্তে বেশ কয়েক দিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। তার পরে কী ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত খেলতে রাজি হল সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন ভারতীয় সমর্থকেরা।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর নিজের নিজের দেশের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। ভারতীয়দের মধ্যে সকলেই পাকিস্তানের নিন্দা করেছিলেন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ভারতকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন শাহিদ আফ্রিদি। তার জবাবে শিখর ধাওয়ান লিখেছিলেন, “কার্গিলেও তোমাদের হারিয়েছিলাম। এত নীচে নেমেছ, আর কত নামবে? উল্টোপাল্টা মন্তব্য করার চেয়ে নিজের দেশের ভাল হয় এমন কোনও কাজ করো। ভারতীয় সেনাদের নিয়ে আমরা গর্বিত।” আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের খেলা নিয়েই সরব হন অনেকে।
আরও পড়ুন:
এই পরিস্থিতিতে হরভজন সিংহ, সুরেশ রায়না, ইরফান ও ইউসুউ পাঠান জানিয়ে দেন, তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন না। ভারতের আর এক ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ানও সমাজমাধ্যমে জানান যে, তিনি এই ম্যাচ খেলবেন না। পাশাপাশি আয়োজকদের ম্যাচ বাতিলের জন্য তাঁরা একটা চিঠিও লেখেন। সেই চিঠিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধাওয়ান। তার পরে আয়োজকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই ম্যাচ হচ্ছে না। এজবাস্টন স্টেডিয়ামের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়, “ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডসের আয়োজকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল করা হচ্ছে। স্টেডিয়ামে দয়া করে কেউ আসবেন না। যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন তাঁদের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।”
ভারতীয় সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আয়োজকেরা। কেন এই ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তাঁরা। আয়োজকদের কথায়, “আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেট সমর্থকদের আনন্দ দেওয়া। আমরা খবর পেয়েছিলাম এই বছর পাকিস্তানের হকি দল ভারতে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভলিবলেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হচ্ছে। সেই কারণে আমরা ভেবেছিলাম, এই প্রতিযোগিতাতেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলে দর্শকদের ভাল লাগবে। আমরা বুঝতে পারিনি এতে ভারতের অনেক ক্রিকেট সমর্থকের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। এই ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে।” এই ম্যাচের আয়োজন করায় ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁদেরও অনেক কথা শুনতে হয়েছে। সেই কারণে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন আয়োজকেরা। এ বার স্পনসরও কড়া বার্তা দিল পাকিস্তানকে।