Advertisement
১১ মে ২০২৪
steve smith

Steve Smith: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অ্যাডিলেড ওভাল, কলঙ্কের অধ্যায় থেকে শাপমুক্তি স্মিথের

ব্যাট করতে নামার সময় অ্যাডিলেড ওভাল উঠে দাঁড়িয়ে বরণ করে নিয়েছে অস্থায়ী অধিনায়ককে। বোঝা যায়, অতীত তিক্ত হলেও এখনও দেশবাসী ভালবাসেন তাঁকে।

স্টিভ স্মিথ।

স্টিভ স্মিথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২৭
Share: Save:

সাড়ে তিন বছর আগের সাংবাদিক সম্মেলন এখনও ভোলেনি ক্রিকেটবিশ্ব। পাশে বাবা। অঝোরে কাঁদছেন স্টিভ স্মিথ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বল বিকৃতির অভিযোগে তখন সদ্য অধিনায়কত্ব খোয়াতে হয়েছে তাঁকে। ‘স্যান্ডপেপার গেট’-এর (শিরিষ কাগজ ঘষে ঘষে বলের পালিশ তুলে তা বিকৃত করার কেলেঙ্কারিকে ওই নামেই ডেকেছিল ক্রিকেটদুনিয়া) অভিঘাত এমনই ছিল, গোটা ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে ছি-ছি পড়ে গিয়েছিল স্মিথদের নিয়ে। শুধু অধিনায়কত্বই যায়নি, ক্রিকেট থেকে এক বছর নির্বাসিত হতে হয়েছিল। অধিনায়কত্বের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল দু’বছরের।

হতে পারে কাকতালীয়। হতে পারে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স না-খেলায় স্মিথকে পাঠানো হয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে টস করতে। কিন্তু ঘটনা বলছে, সেই স্মিথের নেতৃত্বেই অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জিতল অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট-কলঙ্কের সাড়ে তিন বছর পর শাপমুক্তি ঘটল তাঁর। ১,৩৬২ দিন পর তিনি দেশের অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। প্রথম টেস্টেই জয়। পুনরুত্থান? প্রত্যাবর্তন? নাকি শাপমুক্তি?

শাপমুক্তিই বলা ভাল সম্ভবত। আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার থেকে স্মিথের পতন ঘটেছিল নিমেষের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম, প্রাক্তন ক্রিকেটার, ভক্তকুল ছিঁড়ে খেয়েছিল। নির্বাসন কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অধিনায়কত্বে নয়।

স্মিথের গায়ে আবার অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সবুজ ব্লেজার উঠেছিল গত বৃহস্পতিবার। অধিনায়ক কামিন্স কোভিড-সংশয়ে না খেলায় স্মিথকেই অধিনায়ক করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। টস জেতার পর বিনয়ী, নম্র স্মিথ বলেছিলেন, ‘‘অবশ্যই এটা একটা বড় সম্মান। কামিন্সের জন্য খারাপ লাগছে। চেষ্টা করব, ও যে ভাবে প্রথম টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সে ভাবেই নেতৃত্ব দিতে।’’

আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার থেকে স্মিথের পতন ঘটেছিল নিমেষের মধ্যে।

আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার থেকে স্মিথের পতন ঘটেছিল নিমেষের মধ্যে।

এমনিতে অবশ্য কামিন্সের অধিনায়ক হওয়ারই কথা ছিল না। অধিনায়ক টিম পেন যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যান। নেতৃত্বে আসেন কামিন্স। যিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম আপাদমস্তক বোলার-অধিনায়ক।

ক্রিকেটার হিসেবে স্মিথের প্রত্যাবর্তন ছিল দারুণ। ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ জিতেছিল তাঁর কাঁধে ভর দিয়েই। চারটি টেস্টে ৭৭৪ রান করেছিলেন। তিনটি শতরান। তার মধ্যে একটি দ্বিশতরান। গড় ১১০.৫৭। গত তিন বছরে মার্নাস লাবুশানের পরে স্মিথই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে সবথেকে বেশি রান করেছেন। দু’-এক বার বলেওছেন, তাঁর ইচ্ছা ফের অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়া। এ-ও জানিয়েছেন, যে অন্য কারও অধিনায়কত্বে খেলতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।

সে পথে এক ধাপ এগিয়েছিলেন অ্যাশেজের আগে, যখন তাঁকে কামিন্সের সহকারী করা হয়। অধিনায়ক হওয়ার পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই কামিন্স বুঝিয়ে দেন, তিনি স্মিথকে পাশে পেয়ে কতটা নিশ্চিন্ত। অধিনায়ক কামিন্স বলেন, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা তিনি স্মিথের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই করবেন। এ-ও বলে দেন, ভবিষ্যতে স্মিথের হাতেই আবার অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের দায়িত্ব থাকবে।

ক্রিকেটার হিসেবে স্মিথের প্রত্যাবর্তন ছিল দারুণ।

ক্রিকেটার হিসেবে স্মিথের প্রত্যাবর্তন ছিল দারুণ।

সেই দায়িত্ব হঠাৎ করেই চলে আসে অ্যাডিলেডে। তাঁকে নেতৃত্ব দিতে হবে, কী করে জেনেছিলেন, তা-ও বলেছেন স্মিথ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কামিন্সের দুটো মিস্‌ড কল, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের (অস্ট্রেলিয়ার কোচ) মেসেজ। তাতে লেখা, ‘জেগে আছো?’ তারপর বাকিটা জানতে পারি।’’ এতটাই অপ্রস্তুত ছিলেন যে, নিজের ব্লেজারও ছিল না সঙ্গে। কামিন্সেরটাই পরে নিয়েছিলেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির কামিন্সের ব্লেজার ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির স্মিথের গায়ে বেশ ঢোলা হয়েছিল।

কিন্তু অধিনায়কত্ব স্মিথের গায়ে বসে গিয়েছিল একেবারে খাপে-খাপে। ব্যাট করতে নামার সময় অ্যাডিলেড ওভাল উঠে দাঁড়িয়ে বরণ করে নিয়েছিল অস্থায়ী অধিনায়ককে। বোঝা গিয়েছিল, অতীত যতই তিক্ত হোক, এখনও অস্ট্রেলীয়রা ভালই বাসেন তাঁকে।

তবে সকলেই কি আর প্রত্যাবর্তনে খুশি হন? স্বদেশের কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন বলেছিলেন, তিনি আর কখনও স্মিথকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক দেখতে চান না। তখন স্মিথ বলেছিলেন, ‘‘জানি, অনেকেই এটা পছন্দ করছেন না। হয়ত সেটাই স্বাভাবিক। আমি বুঝি। কিন্তু নিজে জানি, গত সাড়ে তিন বছরে নিজেকে কতটা বদলাতে পেরেছি। মানুষ হিসেবে এখন আমি অনেক পরিণত। মনে হয় সেটা আমাকে অধিনায়ক হিসেবে আরও একটু ভাল হতে সাহায্য করবে।’’

সেই পরিণতিবোধের সাহায্যই সম্ভবত পেলেন স্মিথ। তাঁরই হাত ধরে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ২-০ ফলাফলে। শাপমুক্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE