শেষ হল আইপিএল। প্রতি বারের মতো এ বারও নজর কেড়েছেন একাধিক ক্রিকেটার। একের পর এক ম্যাচে জিতিয়েছেন দলকে। কেউ হয়তো ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছেন, আবার কারও দল প্লে-অফে উঠতে পারেনি। আইপিএলে খেলা সব ক্রিকেটারের মধ্যে থেকে সেরা একাদশ বেছে নিল আনন্দবাজার ডট কম।
সাই সুদর্শন: ওপেনিং ব্যাটার বেছে নিতে গেলে সবার আগে আসবে সুদর্শনের নাম। আইপিএলে সবচেয়ে ভাল খেলেছেন তিনিই। ১৫টি ম্যাচে ৭৫৯ রান করে কমলা টুপি উঠেছে তাঁর মাথাতেই। একটি শতরান এবং ছ’টি অর্ধশতরান করেছেন। তাঁর সঙ্গে শুভমন গিলের ওপেনিং জুটি আইপিএলের অন্যতম সেরা।
বিরাট কোহলি: বেঙ্গালুরুর হয়ে ওপেন করতে নেমে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রান করেছেন কোহলি। একটা সময় কমলা টুপির দৌড়ে ছিলেন। শেষ দিকে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে ফিল সল্টের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি বেঙ্গালুরুকে শুরুতেই কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বেঙ্গালুরুর ফাইনালে ওঠার নেপথ্যে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। ১৫টি ইনিংসে ৬৫৭ রান করেছেন কোহলি। শতরান না পেলেও আটটি অর্ধশতরান রয়েছে। স্ট্রাইক রেটও (১৪৬.৫৩) ভাল।
কেএল রাহুল: লখনউ থেকে বিদায় নিয়ে দিল্লিতে গিয়েছিলেন ১৪ কোটি টাকায়। লখনউয়ে অপমানিত হওয়ার পর নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিল কর্ণাটকের ব্যাটারের। সে কাজে তিনি সফল। দল হয়তো প্লে-অফে ওঠেনি। তবে রাহুল ব্যক্তিগত ভাবে সফল। ১৩টি ম্যাচে ৫৩৯ রান করেছেন। একটি শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধে দলকে জিতিয়েছেন। তিন নম্বরের লড়াইয়ে তাঁর খুব কাছাকাছি থাকলেও সুযোগ পেলেন না নিকোলাস পুরান।
শ্রেয়স আয়ার: এই দলে শ্রেয়স শুধু চারেই নামবেন না, তিনি দলের অধিনায়কও। পঞ্জাব কিংসকে ফাইনালে তোলার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তাঁরই। ব্যাট হাতে বা মাঠে শুধু সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াই নয়, গোটা দলকে এক সুতোয় গেঁথেছেন তিনি। তাঁর জন্য যে ২৬.৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, সেই অর্থের দাম দিয়েছেন। ১৭টি ইনিংসে শ্রেয়স ৬০৪ রান করেছেন। ছ’টি অর্ধশতরান রয়েছে। মুম্বইকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে দলকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে তাঁর ইনিংস আইপিএলের অন্যতম সেরা।
সূর্যকুমার যাদব: আইপিএলের প্লে-অফে তোলার নেপথ্যে সূর্যের অবদান অনস্বীকার্য। দল জিতুক বা হারুক, সূর্য ধারাবাহিক ভাবে রান করেছেন। ১৬টি ইনিংসে ৭১৭ রান করেছেন পাঁচটি অর্ধশতরানের সাহায্যে। তবে ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের জন্য কখনও খেলেননি। না হলে আরও তিন-চারটি অর্ধশতরান করে ফেলতে পারতেন। যখনই নেমেছেন, চালিয়ে খেলে দলকে সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৯১, যা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
হার্দিক পাণ্ড্য: এই দলে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের তুলনায় হার্দিকের পরিসংখ্যান অত ভাল নয়। ব্যাট হাতে রান মোটে ২২৪। বল হাতে নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। তবে এই তালিকায় হার্দিককে রাখা হয়েছে মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, দলে একজন অলরাউন্ডার দরকার। এই আইপিএলে হার্দিকের চেয়ে ভাল অলরাউন্ড দক্ষতা কারও নেই। দ্বিতীয়ত, হার্দিকের অভিজ্ঞতা। জাতীয় দল এবং মুম্বইয়ে দীর্ঘ দিন খেলার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভাল খেলার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর।
শশাঙ্ক সিংহ: পঞ্জাব কিংসের ব্যাটার এই দলে থাকবেন ফিনিশার হিসাবে। রান তাড়া করা হোক বা রান তোলা, দুই বিভাগেই তিনি স্বচ্ছন্দ। পঞ্জাবে ফিনিশার হিসাবে খেলেছেন। তাই সব ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। ১৭ ম্যাচে ১৪ ইনিংসে ৩৫০ রান করেছেন। তবে শেষ দিকে নেমে অনেক ম্যাচে পঞ্জাবকে সাহায্য করেছেন তিনি।
নূর আহমেদ: আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় সবার নীচে শেষ করেছে চেন্নাই। তবে নজর কেড়েছেন নূর আহমেদ। ১৪টি ম্যাচ খেলে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। গুজরাত ছেড়ে মহানিলামে ১০ কোটি টাকায় চেন্নাইয়ে যোগ দিয়েছিলেন। রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন। প্রতি ওভারে ৮.১৬ রান দিয়েছেন।
জসপ্রীত বুমরাহ: উইকেটপ্রাপকদের তালিকায় তিনি ষষ্ঠ স্থানে। তবে যে কোনও সেরা দলেই বুমরাহের প্রথম একাদশে জায়গা প্রাপ্য। পারফরম্যান্সও তাঁর হয়ে কথা বলে। ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। প্রতি ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৬.৬৭ রান। সবচেয়ে বড় কথা, ডেথ ওভারে বোলিংয়ের জন্য এখনও বুমরাহের মতো দক্ষ বোলার খুব কমই আছেন।
আরও পড়ুন:
-
ক্রিকেট থেকে ফুটবল, ২০২৫ সাল ‘প্রথম’-এর, কেউ জিতলেন প্রথম ট্রফি, কেউ লিখলেন প্রত্যাবর্তনের কাহিনি
-
আঠারোয় স্বপ্নপূরণ কোহলির, প্রথম বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু, দুই দলের হয়ে ট্রফি জেতার রেকর্ড হল না শ্রেয়সের
-
‘ই সালা কাপ নামদু’ স্লোগান অবশেষে সার্থক! ১৭ বছর পর বিরাটরাজার হাতে ‘সাবালক’ হয়ে উঠল আঠারোর আইপিএল
প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ: কলকাতায় দীর্ঘ দিন খেলেছেন। তখন বেশি সাফল্য পাননি। কিন্তু গুজরাতের হয়ে অন্য মূর্তিতে দেখা গিয়েছে কর্ণাটকের বোলারকে। ১৫ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে আইপিএলের বেগনি টুপির মালিক হয়েছেন তিনি। প্রসিদ্ধের ইকনমি রেট ৮.২৭। মাঝেমধ্যে রান হজম করেন। তবে উইকেট তোলার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি নেই।
জশ হেজ়লউড: প্রসিদ্ধের মতোই নজর কেড়েছেন হেজ়লউডও। আইপিএল খেলছেন দীর্ঘ দিন। তবে এতটা বিধ্বংসী ফর্মে আগে দেখতে পাওয়া যায়নি তাঁকে। ইনিংসের শুরু হোক বা শেষ, দু’জায়গাতেই বল করতে সিদ্ধহস্ত তিনি। ১২ ম্যাচে ২২টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। চোট-আঘাতে ভুগে কিছু ম্যাচে খেলতে পারেননি। না হলে উইকেটের সংখ্যা আরও বাড়ত।
আইপিএলের সেরা একাদশ: সাই সুদর্শন, বিরাট কোহলি, নিকোলাস পুরান (উইকেটকিপার), শ্রেয়স আয়ার (অধিনায়ক), সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, শশাঙ্ক সিংহ, নূর আহমেদ, জসপ্রীত বুমরাহ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং জশ হেজ়লউড।