ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের দ্বিতীয় টেস্টে জনি বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সেই ঘটনাই দলকে অ্যাশেজের লড়াইয়ে ফেরাবে বলে মনে করছেন ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই ঘটনার জন্য অনুশোচনা করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। সারা জীবন এই রান আউটের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে তাদের।
ইংল্যান্ডের তিন প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছেন, বেয়ারস্টো নিজের দোষেই আউট হয়েছেন লর্ডসে দ্বিতীয় ইনিংসে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলও জানিয়েছে, ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের আউট ক্রিকেটের নিয়মের বাইরে নয়। তবু রাগ কমছে না বেন স্টোকসদের। ইংল্যান্ড শিবির অনড় ক্রিকেটীয় নীতি নিয়ে। অধিনায়কের সুরে কথা বলেছেন কোচ ম্যাকালামও। তিনি মনে করছেন বেয়ারস্টোর বিতর্কিত আউটই ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা স্টোকসদের অ্যাশেজের লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনবে। ওই ঘটনা পরের তিনটি টেস্টে দলকে উজ্জীবিত করবে।
ম্যাকালাম বলেছেন, ‘‘রাগ কিনা বলতে পারব না। তবে ওই ঘটনার জন্য গোটা দল তেতে রয়েছে। কোচ হিসাবে কোনও কোনও সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। মনের মধ্যে অস্বস্তি থাকলে পরের সিদ্ধান্ত ভুল হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময় আবেগ দিয়েই দলকে চাঙ্গা করতে হয়।’’
গত এক বছর ধরে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের কোচ হিসাবে কাজ করছেন ম্যাকালাম। তাঁর প্রশিক্ষণে টেস্টেও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে ইংরেজরা। যাকে বলা হচ্ছে বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।)। এক বছরেই স্টোকসদের সাজঘরে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন ম্যাকালাম। তিনি বলেছেন, ‘‘আমারও ক্রিকেটারদের মতোই মনে হচ্ছে। একটা আবেগ কাজ করছে। ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছি, সকলেই একটু বিরক্ত। এই বিষয়টা যদি আমাদের পরের টেস্টগুলি জিততে সাহায্য করে, তা হলে ঠিক আছে।’’
ম্যাকালাম মনে করছেন, তাঁর ক্রিকেটারেরা যে রকম তেতে রয়েছেন, তাতে পরের তিনটি টেস্টে অন্য রকম ফল হতেই পারে। তা হলে বেয়ারস্টোকে বিতর্কিত ভাবে আউট করার জন্য অনুশোচনা করতে হবে প্যাট কামিন্সদের।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy