নাটকের পর নাটক। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪০ ওভার। তার পর সুপার ওভার। রাইজ়িং স্টার এশিয়া কাপের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত এবং বাংলাদেশ ম্যাচে নাটকের কোনও কমতি থাকল না। শেষ পর্যন্ত নিজেদের বোকামিতে সুপার ওভারে হেরে গিয়ে বিদায় নিল ভারত। সুপার ওভারে নামানোই হল না বৈভব সূর্যবংশীকে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। যে ব্যাট শুক্রবারও রান করেছেন ওপেন করতে নেমে, গোটা প্রতিযোগিতায় ছন্দে রয়েছেন তাঁকে কেন সুপার ওভারে নামানো হবে না?
প্রথমে ব্যাট করে ১৯৪/৬ তুলেছিল বাংলাদেশ। ভারতেরও ইনিংস শেষ হয় ১৯৪/৬ স্কোরে। সুপার ওভারে ভারত কোনও রান করতে পারেনি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বলেই রান তুলে নেয়।
টসে জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান ভারতের অধিনায়ক জিতেশ শর্মা। শুরুতে কয়েক ওভার দেখে মনে হয়েছিল, তাঁর সিদ্ধান্তে ভুল হয়েছে। শুরু থেকেই বাংলাদেশের ওপেনারেরা স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন। ভারতের কোনও বোলারকেই রেয়াত করছিলেন না। প্রতি ওভারে দশের উপর রান উঠছিল। পঞ্চম ওভারে গুরজপনীত সিংহ ফেরান জিশান আলমকে (২৬)।
এর পর ভারতের স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশের রানের গতি অনেকটাই কমে যায়। দশম ওভারে জ়াওয়াদ আবরারকে (১৩) ফিরিয়ে দেন রমনদীপ সিংহ। বাংলাদেশের হয়ে ভাল খেলছিলেন ওপেনার হাবিবুর রহমান। উল্টো দিক থেকে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছিল তারা। তিনটি চার এবং পাঁচটি ছয়ের সাহায্যে ৪৬ বলে ৬৫ রান করে হাবিবুর ফিরতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
চাপ কেটে যায় শেষ দু’ওভারে। যে বাংলাদেশের স্কোর ১৮ ওভারের শেষে ছিল ১৪৪/৬, তারাই শেষ করে ১৯৪ রানে। অর্থাৎ শেষ দু’ওভারে ওঠে ৫০ রান। নেপথ্যে এসএম মেহেরোব। একটি চার এবং ছ’টি ছয়ের সাহায্যে তিনি ১৮ বলে ৪৮ রান করেন। ১৯তম ওভারে নমন ধীর দেন ২৮ রান। সেই ওভারে একটি চার এবং চারটি ছয় মারেন মেহেরোব। পরের ওভারে বিজয়কুমার বিশাখকে দু’টি ছয় এবং দু’টি চার মারেন।
১৯৫ রান তাড়া করা ভারতের কাছে খুব একটা কঠিন ছিল না। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে বৈভব ছন্দে থাকায়। বৈভব শুরুটাও করে দারুণ ভাবে। রিপন মণ্ডলের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে ছয় মারে সে। পঞ্চম বলে মারে চার। দ্বিতীয় ওভারে মেহেরবকে দু’টি ছক্কা মারে।
প্রিয়াংশ আর্য কয়েকটি বল ধরে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন। তিনি তৃতীয় ওভারে জিশানকে দু’টি ছয় মারেন। ৩.১ ওভারেই ভারতের রান ৫০ পেরিয়ে যায়। চলতি প্রতিযোগিতায় যা দ্রুততম দলগত ৫০। তবে বৈভব নিজের ইনিংস বেশি দূর টানতে পারেনি। সে চতুর্থ ওভারেই আব্দুল সাকলাইনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ফিরে যায় (৩৮)।
উল্টো দিক থেকে প্রিয়াংশ চালিয়ে খেললেও নমন একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। অনেক বেশি বল খেলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১২ বলে সাত রান করেন। কিছু ক্ষণ পরে আউট হয়ে যাান প্রিয়াংশও (৪৪)। চারে নামা জিতেশও চালিয়ে খেলতে থাকেন। তিনিও বেশি দূর ইনিংস এগিয়ে যেতে পারেননি। ২৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরে যান।
পরের দিকে নেহাল ওয়াধেরাও একটু বেশি বল খেলায় ভারতের কাজ কঠিন হয়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংও ভারতকে চাপে ফেলে দেয়। শেষ দু’ওভারে ২১ রান দরকার ছিল। তবে রিপন মাত্র পাঁচ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬। তৃতীয় বলে রাকিবুল হাসানকে ছয় মারেন আশুতোষ শর্মা। পরের বলে সোজা ক্যাচ তুলেছিলেন লং অফে। জিশানের হাতে যাচ্ছিল বল। অদ্ভুত ভাবে সহজতম ক্যাচ ফস্কান তিনি। বল চার হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
তবে নাটকের তখনও বাকি ছিল। পঞ্চম বলে রাকিবুল আশুতোষকে ফেরানোয় আবার চাপে পড়ে ভারত। শেষ বলে দরকার ছিল চার রান। হর্ষ দুবে লং অনে শট মারেন ফিল্ডারের হাতে। দু’রানের বেশি হতই না। হঠাৎই উইকেটকিপার আকবর আলি ভারতের হর্ষকে রান আউট করতে যান। উল্টো দিকে কোনও ফিল্ডার ছিলেন না। ফলে আরও একটি রান নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। তিন রান হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
নিয়ম অনুযায়ী, সুপার ওভারে আগে ব্যাট করার কথা ছিল ভারতের। ভাবা হয়েছিল, চার-ছক্কা মেরে ভারতের অনেকটা রান তুলে দেবে বৈভব। অদ্ভুত ভাবে বৈভবকে নামানোই হল না। নামেন জিতেশ এবং রমনদীপ। প্রথম বলে চামচের মতো ব্যাট চালাতে গিয়ে বোল্ড হন জিতেশ। পরের বলেই চালাতে গিয়ে আউট হন আশুতোষ। অর্থাৎ কোনও রান ছাড়াই দু’উইকেট হারায় ভারত।
বাংলাদেশের দরকার ছিল এক রান। প্রথম বলে খুচরো রান নেওয়ার বদলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন ইয়াসির আলি। দ্বিতীয় বলে সুযশ শর্মা ওয়াইড করায় জিতে যায় বাংলাদেশ।