যিনি হাল টানেন, তিনিই উইকেট নেন!
বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটার মারুফা আক্তারের কাহিনিটা এমনই। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপে বল হাতে নজর কাড়ছেন। তাঁর সুইং মুগ্ধ করছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের। লড়াই যাঁর রক্তে, সেই মারুফাই কেঁদে ফেললেন অতীতের কথা বলতে গিয়ে।
করোনা কালে ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি ছবি। বলদের বদলে হাল টানছেন একটি মেয়ে। কাদা ভর্তি চাষের জমিতে বাবাকে কাজে সাহায্য করছে সে। সেই মেয়েই এক দিনের বিশ্বকাপে সমীহ আদায় করে নিচ্ছে প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটারদের। যে অদম্য জেদ মারুফাকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে শিখিয়েছে, সেটাই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বকাপে ভাল কিছু করার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের লড়াইয়ের কথা বলেছেন মারুফা। গত ২৩ অগস্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছিল। দলে নিজের নাম দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন মারুফা। তিনি বলেছেন, ‘‘দল ঘোষণা হয়েছে জানার পর সমাজমাধ্যমে নিজের নাম দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়া তো সহজ নয়। বাবা-মাকে ফোন করে জানিয়েছিলাম সঙ্গে সঙ্গে। দু’জনেই খুশি হয়েছিল। তবে ওরা এত কিছু বোঝে না। ওরা খালি দেখে আমি খেলছি কিনা। তাতেই খুশি হয়। সত্যি বলতে, ওরা ক্রিকেট খেলাটাই বোঝে না।’’
খেলা না বুঝলেও মারুফার বাবা-মার বিশ্বাস ছিল, তাঁদের মেয়ে বিশ্বকাপ খেলবেই। ২০ বছরের বোলার বলেছেন, ‘‘বাবা-মাকে বলেছিলাম, বিশ্বকাপ খুব বড় প্রতিযোগিতা। সকলে সুযোগ পায় না। শুনে, বাবা-মা বলেছিলেন, ‘আমরা জানতাম তুই পারবিই।’ এখন বাবা আমার খেলা নিয়ে খুব উৎসাহী। কাজের চাপ থাকলেও খেলা শুরুর ৫ মিনিট আগে বাবা টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েন।’’
মারুফা শুনিয়েছেন দারিদ্রের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ের কথাও। বাংলাদেশের জোরে বোলার বলেছেন, ‘‘আমার বাবা কৃষক। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। যে গ্রামে বড় হয়েছি, সেখানকার লোকজনকেও আমরা সে ভাবে পাশে পাই না। বেশির ভাগ মানুষই আমাদের কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেন না। কারণ ভাল জামাকাপড় নেই আমাদের। কোথাও গেলেও আমাদের সম্মান থাকে না। একট সময় ইদে নতুন জামা কেনার মতো টাকাও ছিল না আমাদের।’’ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছেন মারুফা।
এখন অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ক্রিকেট খেলে মারুফা যে আয় করেন, তা দিয়ে বাবাকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এখন পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। পরিবারকে খানিকটা সাহায্য করতে পারি। আমার বয়সের অনেক ছেলেও যা করতে পারে না। এটা আমাকে উৎসাহ দেয়। আরও ভাল খেলার শক্তি পাই। ছোটবেলায় মনে হত, মানুষ কবে আমাদের একটু ভাল চোখে দেখবে। আমাদের প্রশংসা করবে। কিন্তু এখন নিজেকে টেলিভিশনে দেখলে আমারই লজ্জা লাগে।’’
আরও পড়ুন:
২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর আবার দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত মারুফা। বাংলাদেশের হয়ে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চান। তাঁর বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন লসিথ মালিঙ্গা। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন জোরে বোলারের প্রশংসা পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসাবে দেখছেন মারুফা।