Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Cricket Bat

বিশ্বকাপে বাংলাদেশই ভরসা কোহলি, রোহিতদের! কেন পদ্মাপারের উপর নির্ভরশীল বিরাটদের সাফল্য?

ছ’মাস পরে এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা সাফল্যের জন্য অনেকটাই নির্ভর করছেন বাংলাদেশের উপর।

picture Rohit Sharma and Virat Kohli

বিশ্বকাপে সাফল্যের জন্য রোহিত, কোহলিরা তাকিয়ে বাংলাদেশের দিকে। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৪৩
Share: Save:

আগামী অক্টোবরে হবে এক দিনের বিশ্বকাপ। এখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে দলগুলি। প্রস্তুতি শুরু করেছেন ক্রিকেটাররাও। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদবরা বিশ্বকাপের জন্য নতুন ব্যাটের বরাত দিয়েছেন একটি ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সংস্থাকে। বিশ্বকাপের অনেক আগেই তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন ব্যাট।

কোহলি, রোহিত, সূর্যকুমারদের ব্যাট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। একই সংস্থার হলেও প্রত্যেকের ব্যাট আলাদা। ব্যাটের ওজন, হাতলের মাপ সবই আলাদা। আপাত ভাবে দেখতে এক রকম হলেও প্রত্যেকের ব্যাটের রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি করতে হয় বিশেষ যত্ন সহকারে। পছন্দ না হলে ব্যাট ফিরিয়ে দিতে দু’বার ভাবেন না কোহলি, রোহিতরা। ব্যাট নিয়ে ক্রিকেটারদের খুঁতখুঁতে স্বভাব নতুন কিছু নয়। তা অজানা নয় সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংস্থা প্রস্তুতকারী সংস্থারও। তাই তাঁদের ভরসা হুসেন মহম্মদ আফতাব আকা শাহিন। তিনি বেশি পরিচিত আফতাব শাহিন নামেই। ক্রিকেটারদের কাছে তিনি ‘ব্যাট ডাক্তার’।

পাকিস্তানে শাহিন শাহ আফ্রিদির ব্যাটের কাজ সম্পূর্ণ করে এখন তিনি হাত দিয়েছেন সূর্যকুমারের ব্যাট তৈরির কাজে। আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন কোহলি এবং রোহিতের পছন্দ মতো ব্যাট। ক্রীড়া সংস্থা প্রস্তুতকারী সংস্থাটি সাধারণ ব্যাট তৈরি করে পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা আফতাবের কাছে। তিনি ক্রিকেটারের নির্দেশ মতো গড়ে দেন তাঁদের বিশেষ ব্যাট। ব্যাটের ওজন, ব্লেডের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা সব কিছুই নির্ভর করে আফতাবের দক্ষতার উপর। বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই আফতাবের তৈরি ব্যাট ব্যবহার করেন। ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু প্রথম সারির ক্রিকেটারও আফতাবের তৈরি ব্যাট ছাড়া হাতে তোলেন না। এশিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে এমনই কদর আফতাবের।

Picture of Imrul Kayes

ব্যাট শিল্পী আফতাবের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটার কাইস। ছবি: টুইটার।

প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে বেছে নিয়েছেন ব্যাট তৈরির কাজ। আন্দ্রে রাসেল, সিকান্দার রাজার মতো ক্রিকেটাররাও ব্যাটের জন্য বাংলাদেশের আফতাবের স্বারস্থ হন। অস্ট্রেলিয়ার কিছু ক্রিকেটারও এখন ব্যাট তৈরি করান বাংলাদেশের এই শিল্পীর কাছে। আফতাব যে ব্যাট তৈরি করেন, তার কাঠ আনা হয় ইংল্যান্ড থেকে, ইংলিশ উইলো ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি করেন না তিনি। এক সময় সচিন তেন্ডুলকর, কুমার সাঙ্গাকারা, আজহার মাহমুদ, ডোয়েন ব্র্যাভোর জন্য ব্যাট তৈরি করতেন ‘ব্যাট ডাক্তার’। শাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা ব্যাটের জন্য তাঁর উপরই নির্ভর করেন।

আফতাব বলেছেন, ‘‘২৪ বছর ধরে কাজ করছি। ব্যাটের মডিফিকেশন এবং কাস্টমাইজেশনের কাজ প্রথমে ছিল নেশা। এখন পেশা হয়ে গিয়েছে। প্রতি দিন চেষ্টা করি আগের দিনের থেকে আরও ভাল এবং নিখুঁত ব্যাট তৈরি করতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ভরসাই আমার প্রাপ্তি।’’ নতুন ব্যাট তৈরির পাশাপাশি তিনি সারিয়েও দেন পুরনো ব্যাট।

এখন তাঁর স্বপ্ন বাংলাদেশে প্রথম ব্যাট তৈরির কারখানা গড়ে তোলা। তাঁর এই স্বপ্নপূরণের সঙ্গী জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজ এবং ইমরুল কাইস। রাজশাহীতে তৈরি হবে কারখানা। মেহেদি বলেছেন, ‘‘বিদেশ থেকে প্রচুর খরচ করে ব্যাট আনাতে হয় আমাদের। বাংলাদেশে ভাল ব্যাট তৈরি হয় না। ভারতীয় সংস্থাগুলো সব সময় আমাদের সেরা মানের ব্যাট দেয় না। সেগুলো মূলত ভারতীয় ক্রিকেটারকেই দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কারখানা তৈরি করা গেলে সেই সমস্যার সমাধান হবে। সেই চেষ্টা করছি আমরা।’’

তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ক্লাব পর্যায় থেকে জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারদের আমরা ভাল মানের ব্যাট সরবরাহ করতে চাই। মহিলা ক্রিকেটারদেরও ব্যাট দেব আমরা। কাউকে আর ব্যাট কিনতে হবে না। ভাল ব্যাটের অভাবে কারও খেলা ক্ষতিগ্রস্ত হোক চাই না আমরা। সেই লক্ষ্যেই আফতাব ভাইয়ের সঙ্গে আমি আর কাইস হাত মিলিয়ে ব্যাট কারখানা তৈরি করছি।’’

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট ব্যাট কারখানা কতদূর সাফল্য পাবে, তা অনিশ্চিত। কোহলি, রোহিত, সূর্যকুমারদের ভরসা কিন্তু রাজশাহীর আফতাবই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE