Advertisement
E-Paper

বন্ধু শুভমনকে পিছনে ফেলে কি ভারতীয় ক্রিকেটের আনকোরা ‘পোস্টারবয়’ অভিষেক? বিপণন দুনিয়ায় শর্মার চাহিদা ক্রমবর্ধমান

তরুণ প্রজন্মের যা যা পছন্দ, তার অনেক কিছুই রয়েছে অভিষেক শর্মার মধ্যে। পোশাক-আশাক, কথা বলার সপ্রতিভ ভঙ্গি, দু’কানের লতিতে হিরের ছটা। তাঁর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগাতে চাইছে বিপণন দুনিয়া।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৯
picture of cricket

(বাঁ দিকে) অভিষেক শর্মা এবং শুভমন গিল (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হো-হো করে হাসছিলেন অভিষেক শর্মা। সঙ্গে ঠেট পঞ্জাবি ভাষায় টিপ্পনী, ‘‘আরে! এত বড় করে কেউ হাঁ করে নাকি?’’ যাঁকে লক্ষ্য করে ওই রসিকতা, তিনি খানিকটা বিড়ম্বিত। খানিক অপ্রতিভ। তাঁর নাম শুভমন গিল। টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়ক।

ঘটনাস্থল অস্ট্রেলিয়ার এক শহর। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ় শুরুর আগে ফোটোশুট হচ্ছে। সেখানে শুভমনকে আগ্রাসী মুখভঙ্গি করতে বলেছিলেন ফোটোগ্রাফার। এত দিনে তিনি ফোটোশুটের খেলাও বুঝে নিয়েছেন। মুষ্টিবদ্ধ হাত এবং তৎসহ মুখব্যাদান করে সাধ্যমতো ‘পোজ়’ দিয়েছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন অভিষেক। এবং তিনি হেসেই কুটোপাটি!

এমনিতে দুই বাল্যবন্ধুর নির্দোষ রঙ্গ-তামাশা। কিন্তু খানিক তলিয়ে দেখলে ততটাও সহজ-সরল নয়। এখন ক্রিকেটে সাফল্য মানে বিপণন দুনিয়ার অমোঘ বাজি। বীরেন্দ্র সহবাগ যেমন ওপেন করতে নেমে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাকরণ বদলে দিয়েছিলেন, তেমনই ওপেনিংয়ে টি-টোয়েন্টির এত দিনের ব্যাকরণ দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছেন শর্মা অভিষেক। ব্যাট হাতে ধুন্ধুমার সমস্ত ইনিংস খেলছেন। জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাঠের বাইরে জোরে বোলারদের ফেলে দিচ্ছেন যুবরাজ সিংহের ছাত্র।

Abhishek Sharma

বরাবরই নিজেকে কেতাদুরস্ত রাখতে ভালবাসেন অভিষেক। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এই মারকাট সাফল্যের সঙ্গে যোগ করুন চেহারা। সুদর্শন তো বটেই, কথাবার্তাতেও দারুণ সপ্রতিভ। আধুনিক পোশাকে স্বচ্ছন্দ, দু’কানে হিরের ছটা, গলায় মোটা রুপোর চেন, চোখে ডিজ়াইনার রোদচশমা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিপণন দুনিয়ার জন্য তৈরি। এতটাই তৈরি যে, শুভমনকেও টেক্কা দিতে বসেছেন প্রায়। এশিয়া কাপের সাফল্য তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ৭০ লাখেরও বেশি।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বরাবর কোনও একজন বিশেষ ক্রিকেটারকে ‘পোস্টারবয়’ হিসাবে সামনে রেখে দেশে এবং বিদেশে ক্রিকেটের বিপণন করে। একদা সেই আসনে ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। তার পরে বিরাট কোহলি। মাঝখানে ব্যতিক্রম ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যিনি নিজের ক্রিকেটের বলেই বলীয়ান এবং তার ভিত্তিতেই নিজেকে ‘ব্র্যান্ড’ হিসাবে বিপণনের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কোহলি-যুগের শেষে এখন সেই জুতোয় বিসিসিআই শুভমনের পা গলিয়ে দিয়েছে। ঝকঝকে তরুণ। অমলিন হাসি। খানিকটা ভাবুক। ব্যাটে রান। আইপিএল দলের অধিনায়ক। জীবনবিমা বা ওই ধরনের পণ্যের বিপণনের জন্য আদর্শ।

অভিষেকের মধ্যে এই সব গুণ তো আছেই। সঙ্গে আছে ‘জ়েন জ়ি’ সুলভ হাবভাব। তাঁর চেহারা সেলুলয়েডের হিরোর মতো। মাঠে আগ্রাসী। মাঠের বাইরে সুনীল গাওস্করের পা ছুঁয়ে প্রণাম করায় বিনম্র। মেজাজ থাকলেও নিয়ন্ত্রিত, আবেগ থাকলেও সংযত, আগ্রাসন থাকলেও পরিমিত। সেই কারণেই তিনি বিপণনের দুনিয়ায় আরও বেশি ‘নির্ভরযোগ্য’।

প্রকৃতিগত ভাবে শুভমন-অভিষেক বিপরীত মেরুর। অবসর সময়ে শুভমন জাদুঘরে ঘুরে বেড়ান। ঘুরে ঘুরে ভাস্কর্য দেখেন। পেন্টিং দেখেন। আর অভিষেক ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ান। এমনই তাঁর ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা যে, দিল্লি-চণ্ডীগড় সকালের উড়ান মিস্ করে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে অমৃতসর পৌঁছে সেখান থেকে বিমান ধরে বিকেল হওয়ার আগে চণ্ডীগড় পৌঁছেছিলেন! এবং ছাদে উঠে উড়ন্ত ঘুড়ির লাটাই ধরেছিলেন।

Abhishek Sharma

কেতাদুরস্ত গাড়িতেও ঝোঁক অভিষেকের। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এখন ক্রিকেট তাঁর হাতে বিপণন দুনিয়ার লাটাই ধরিয়ে দিয়েছে। ফ্যাশন এবং বিপণনের দুনিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল পোশাকশিল্পী (অধুনা রাজনীতিক) অগ্নিমিত্রা পালের কথায়, ‘‘শুভমনের মধ্যে একটা চকোলেট বয় ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু অভিষেক মাচো হিরোর মতো। এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সে অভিষেক শুভমনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। তাই তিনিই এখন সকলের নজরে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, আমাদের দেশে সিনেমা এবং ক্রিকেট, এই দু’টি ক্ষেত্রে পোস্টারবয় বা পোস্টারগার্ল দেখা যায়। ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনও খেলায় সেটা দেখা যায় না। কিন্তু অগ্নিমিত্রা সুদর্শন হওয়াকে তার ‘মাপকাঠি’ বলে ধরতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল দেখতে হওয়াটা মাপকাঠি বলে মনে হয় না। পারফরম্যান্সটাই আসল। একটা সময়ে মহম্মদ আজহারউদ্দিন ছিলেন ক্রিকেটের পোস্টারবয়। তিনি কিন্তু সেই অর্থে দারুণ হ্যান্ডসাম ছিলেন না। তাঁকে নেওয়া হত তাঁর পারফরম্যান্সের কারণে।’’

আইপিএলে সফল অভিষেকের উপর আগেই নজর পড়েছিল বিজ্ঞাপনজগতের। আশ্চর্য নয় যে, এশিয়া কাপের পর বিপণনের দুনিয়ায় তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়েছে। পুরুষদের প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক থেকে শুরু করে আইসক্রিম, মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিন সামগ্রী— অভিষেকের ঝুলিতে বিজ্ঞাপনের তালিকা ক্রমশ বাড়ছে।

পোশাক পরিকল্পক পৌলমী গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল তরুণদের চাহিদা বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় সব সময়েই থাকে। অতীতে ইমরান খান, কপিল দেবদের কথা আমরা জানি। সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়েরা এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তবে অভিষেকের বয়স কম। তরুণদের পছন্দের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসাবে সফল। সুদর্শন, শারীরিক গঠন ভাল।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘অভিষেক পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন, সময়োপযোগী এবং আধুনিক। যে গুণাবলি বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের কাছে লোভনীয়। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সমাজমাধ্যমে কে কতটা সক্রিয় এবং জনপ্রিয় সেটাও দেখা হয় এখন। সে দিক দিয়েও অভিষেক সক্ষম।’’

ছোটবেলা থেকে শুভমন-অভিষেক একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন। এক স্কুলে পড়েছেন। দু’জনেই যুবরাজের অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ক্রিকেটের সাফল্যের নিরিখে শুভমন এখনও যোজন যোজন এগিয়ে আছেন বন্ধু অভিষেকের চেয়ে। শুভমন দেশের হয়ে তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটই খেলেন। দু’টি ফর্ম্যাটে তিনিই অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হওয়াও সময়ের অপেক্ষা। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে সূর্যকুমার যাদবের পর শুভমনই ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে টস করতে যাবেন। সেখানে অভিষেক এখনও পর্যন্ত ভারতের হয়ে শুধু টি-টোয়েন্টিই খেলেছেন। কিন্তু যে হারে তিনি এগোচ্ছেন, তাতে এমন ফর্মে থাকলে একদিনের ক্রিকেট তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের দরজাও তাঁর জন্য খুলবে। তখন মাঠের ভিতরেও দু’জনের ‘স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা’ হবে।

কারণ, মাঠের বাইরের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Indian Cricket BCCI Brand Endorsements
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy