সোমবার দিল্লি ক্যাপিটালস। মঙ্গলবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পর পর দু’দিন পয়েন্ট নষ্ট করল আইপিএলের এই দুই দল। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লির ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যায়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ঘরের মাঠে হারল গুজরাত টাইটান্সের কাছে। এই দুই ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। দিল্লি ও মুম্বই পয়েন্ট নষ্ট করায় আবার জমে গিয়েছে আইপিএল। প্লে-অফে ওঠার সম্ভাবনা বেড়েছে কেকেআরের।
আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় কলকাতা এখন ছ’নম্বরে। চার নম্বরে থাকা মুম্বইয়ের পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ১৪। পাঁচ নম্বরে থাকা দিল্লির পয়েন্ট ১১ ম্যাচে ১৩। কলকাতা যদি বুধবার ঘরের মাঠে লাস্ট বয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে দেয় তা হলে অজিঙ্ক রাহানেদের পয়েন্ট হবে ১২ ম্যাচে ১৩। অর্থাৎ, দুই দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে কলকাতা। দিল্লি ও মুম্বইয়ের নিজেদের মধ্যে ম্যাচ রয়েছে। ফলে একটি দল আবার পয়েন্ট নষ্ট করবে। সে ক্ষেত্রে কেকেআরের প্রথম চারে চলে আসার সম্ভাবনা থাকবে। মুম্বইয়ের এই হারের পর চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবেন রাহানেরা। যে সুযোগ তাঁরা পেয়েছেন তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন।
ওয়াংখেড়েতে মাঠে খেলা চললেও সকলের চোখ ছিল আকাশের দিকে। তখন ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জোরে হাওয়া বইছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১৫৬ রান তাড়া করতে নেমে তখন গুজরাত টাইটান্সের রান ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২১। জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখাচ্ছিল, পাওয়ার প্লে শেষে ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে জিততে হলে ৪০ রান করতে হবে গুজরাতকে। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্যও হয়তো ভাবলেন ৬ ওভারে শেষ হবে খেলা। সেটা ভাবতে গিয়েই ভুল করলেন তিনি। অধিনায়ক হার্দিকের সিদ্ধান্ত হারিয়ে দিল মুম্বইকে।
হার্দিক ভেবেছিলেন, বৃষ্টিতে যদি খেলা ভেস্তে যায় তা হলে ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে জিততে হবে তাঁদের। তাই প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে দুই সেরা বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ও জসপ্রীত বুমরাহের ৫ ওভার শেষ করিয়ে দিলেন। পাওয়ার প্লে শেষে গুজরাতের রান হল ২৯। কিন্তু শুভমন জানতেন, উইকেট হারালে চলবে না। যে গতিতে হাওয়া বইছিল তাতে বৃষ্টির বেগ দ্রুত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সেটাই হল।
আগের ম্যাচগুলিতে শুরুতে বুমরাহকে পাওয়ার প্লে-র পরেও ব্যবহার করেছেন হার্দিক। কিন্তু এই ম্যাচে সেই সুযোগ ছিল না। তাই তিনি নিজেই অষ্টম ওভারে বল করতে এলেন। আর সেই ওভারেই গুজরাতের উপর থেকে সব চাপ কমিয়ে দিয়ে গেলেন। ওভারে মোট ১১টি বল করলেন হার্দিক। তিনটি ওয়াইড ও দু’টি নো বলের খেসারত দিতে হল। এ বারের আইপিএলে আরও দুই বোলার ১১ বলের ওভার করেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে চেন্নাই সুপার কিংসের শার্দূল ঠাকুর ও দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে রাজস্থান রয়্যালসের সন্দীপ শর্মা। দু’টি ম্যাচে হেরেছে চেন্নাই ও রাজস্থান। মুম্বইয়ের ম্যাচেও তা-ই হল। আসলে তার আগের সাত ওভারে মুম্বইয়ের বোলারেরা যে চাপ রেখেছিলেন, তা কমিয়ে দিলেন হার্দিক। তার আগে ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে পিছিয়ে ছিল গুজরাত। সেই ওভার তাদের এগিয়ে দিল।
আরও পড়ুন:
প্রথম কয়েকটি ম্যাচে হার্দিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু বুমরাহ দলে ফেরার পরে মুম্বইয়ের দলে ভারসাম্য ফিরেছিল। শুরুতে দীপক চহর ও বোল্ট, মাঝের ওভারে বুমরাহ, ডেথ ওভারে বোল্ট ও বুমরাহ, এই ছিল হার্দিকের পরিকল্পনা। কিন্তু গুজরাতের বিরুদ্ধে নিজের পরিকল্পনা ঠিক রাখতে পারলেন না তিনি। বোধহয় জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাই পুরো ম্যাচের কথা ভাবলেন না। শুধু পাওয়ার প্লে মাথায় রাখলেন তিনি। যেখানে দলে বোল্ট, বুমরাহ ও চহরের পরে অশ্বনী কুমার, কর্ণ শর্মারা রয়েছেন সেখানে কেন তিনি নিজে বল করতে এলেন। হতে পারে এ বার বল হাতে তিনি উইকেট পেয়েছেন, কিন্তু হার্দিককে বুঝতে হবে গুজরাতের লক্ষ্য ছিল ১৫৬ রান। ২০০ রান নয়। অল্প রানের ম্যাচে তো নিজের সেরা বোলারদের ব্যবহার করবেন তিনি। হার্দিকের ভুলের মাসুল দিতে হল মুম্বইকে।
হার্দিকদের হারের জন্য দায়ী করা যায় আরও একটি ওভারকে। উইল জ্যাকসের ১৩তম ওভার। তার আগের ওভারেই আউট হয়েছেন জস বাটলার। নেমেছেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার শারফেন রাদারফোর্ড। জ্যাকসের প্রথম তিন বলে একটিও রান আসেনি। ডাকওয়ার্থ লুইসের নিয়মে তখন আবার ৫ রানে এগিয়ে গিয়েছে মুম্বই। সেই সময় সাহস দেখালেন রাদারফোর্ড। পরের তিনটি বলে দু’টি চার ও একটি ছক্কা মারলেন তিনি। পরের ওভারে এলে ১৩ রান। এই ২৮ রানের মধ্যে ২৬ রান করলেন রাদারফোর্ড। ১৪ ওভারের পর যখন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হল তখন ৮ রানে এগিয়ে গুজরাত।
তার পরেও মুম্বইকে খেলায় ফেরান বুমরাহ। কোনও পিচ, কোনও পরিস্থিতি তাঁকে দমাতে পারে না। আসলে বুমরাহের হাতে অনেক অস্ত্র। যেমন লেংথে বল করতে পারেন, তেমনই ইয়র্কার করেন। বলের গতির হেরফের তাঁর থেকে ভাল বোধহয় বিশ্ব ক্রিকেটে কেউ করতে পারেন না। বুমরাহ জানতেন, শুভমন ও রাদারফোর্ড তাঁর বলে বড় শট মারার চেষ্টা করবেন না। তাই উইকেটে বল রাখলেন তিনি। বল পড়ে সামান্য ভিতরের দিকে ঢুকল। শুভমন ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি। তাঁর প্যাডে লেগে বল গিয়ে লাগল উইকেটে। ৪৩ রানে বোল্ড হয়ে ফিরলেন শুভমন। পরের ওভারে তাঁকে কভার দিয়ে একটি চার মেরেছিলেন শাহরুখ। কিন্তু তাঁকে বুঝতে হবে, বুমরাহের সব বল মারা যায় না। পরে আবার তাঁকে শট মারতে গিয়ে বোল্ড হলেন শাহরুখ।
বুমরাহকে সাহায্য করলেন ট্রেন্ট বোল্টও। শুরুতে সাই সুদর্শনের পর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিনি আউট করলেন রাদারফোর্ডকে। একটিই ওভার পেয়েছিলেন বোল্ট। সেটিই কাজে লাগালেন তিনি। মুম্বইকে সাহায্য করল প্রকৃতিও। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হলে বোলারদের থেকে ব্যাটারদের বেশি সমস্যা হয়। আগেও তা বার বার দেখা গিয়েছে। এ বারও দেখা গেল। ব্যাট করার সময় কর্বিন বশের হেলমেটে বল লাগায় কনকাসন পরিবর্ত হিসাবে অশ্বনী কুমারকে নামায় মুম্বই। সেই সিদ্ধান্তও কাজে লাগল। জস বাটলার ও রশিদ খানের উইকেট নিলেন এই বাঁহাতি পেসার।
দ্বিতীয় বার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার পর যখন খেলা শুরু হয় তখন গুজরাতের লক্ষ্য ৬ বলে ১৫ রান। শেষ বলে সেই রান তুলে দলকে জিতিয়ে দেন গুজরাতের ব্যাটারেরা।