২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর। পুণের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত ২৫৪ রানের ইনিংস বিরাট কোহলিকে তুলে দিয়েছিল শিখরে। সেই সময় টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৫৫.১০। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ পরের পাঁচ বছর ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। সোমবার কোহলি যখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন তখন তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৬.৮৫। এই পতন হয়েছে শেষ পাঁচ বছরে। এই সময়ে ৩৯টি টেস্টে ব্যাটিং খরা কোহলিকে পিছিয়ে দিয়েছে সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সুনীল গাওস্করের থেকে।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে সর্বাধিক গড় বিনোদ কাম্বলির। ৫৪.২০ গড় নিয়ে শীর্ষে থাকলেও কাম্বলি কেরিয়ারে মাত্র ১৭টি টেস্ট খেলেছেন। তিন নম্বরে ৫২.৮৮ গড় নিয়ে থাকা যশস্বী জয়সওয়ালও এখনও পর্যন্ত ১৯টি টেস্ট খেলেছেন। ফলে তাঁদের এই তালিকায় ধরা হচ্ছে না। ভারতের হয়ে ১০০-র বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে ৫০-এর বেশি গড় সচিন (৫৩.৭৮, সচিন ভারতের হয়ে ২০০টি টেস্ট খেলেছেন), দ্রাবিড় (৫২.৬৩) ও গাওস্করের (৫১.১২)। বীরেন্দ্র সহবাগেরও গড় কোহলির থেকে বেশি (৪৯.৪৩)।
কেন কোহলি এতটা পিছিয়ে পড়লেন সচিন, দ্রাবিড়, গাওস্করের থেকে? কারণ, একটা বড় সময় ব্যাটে রান না থাকা। সচিনের কেরিয়ারেও খারাপ সময় এসেছে। দ্রাবিড়েরও তাই। কিন্তু তাঁরা পড়ে থেকেছেন। গাওস্কর ধ্রুপদী ক্রিকেটের পূজারি। তাঁর খেলার আসল শক্তি ধৈর্য। পরবর্তী সময়ে সেই ঘরানা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন দ্রাবিড়। সচিন তাঁদের তুলনায় আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছেন। কিন্তু তিনিও খারাপ সময়ে ধৈর্য দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট হচ্ছিলেন বলে সিডনিতে ২৪১ রানের ইনিংসে অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা কোনও বল খেলেননি তিনি। এতটা ধৈর্য দেখাতে পারেননি কোহলি। বার বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট হয়েছেন। বার বার ভুল শট খেলেছেন। সেই কারণেই ধারাবাহিকতার অভাব বাকিদের থেকে বেশি ভুগিয়েছে তাঁকে। সেই কারণেই পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিন-রাতের টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। তার পর থেকে খরা শুরু হয়েছিল তাঁর ব্যাটে। একের পর এক ইনিংসে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন। বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন। মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন কোহলি। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, এক মাস ক্রিকেট ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি তিনি। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসাটাই যেন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন:
ইডেনের সেই টেস্টের পর ৪৩টি ইনিংস পরে আবার তিন অঙ্কের রান করেন কোহলি। মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে চার বছর। সেই শতরানের দু’টেস্ট পরে আবার শতরান করেন কোহলি। মনে হচ্ছিল, পুরনো ফর্ম ফিরে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেই আবার বিরতি। আবার ১৭টি ইনিংস কোহলিকে অপেক্ষা করতে হয় শতরান করার জন্য। সেই শেষ। পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তাঁর শতরান কোহলির টেস্ট কেরিয়ারের শেষ শতরান হয়ে থাকল।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
টেস্টে সেরাদের তালিকায় থাকতে হলে কেরিয়ারে অন্তত ৫০ গড় রাখতে হয় ব্যাটারদের। সচিন, দ্রাবিড়, গাওস্কর তো বটেই, বর্তমান ক্রিকেটে সেরা চার ব্যাটারের তালিকায় থাকা বাকি তিন জনেরও তাই। সেরা চার ব্যাটারের তালিকায় কোহলি ছাড়া রয়েছেন নিউ জ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন, ইংল্যান্ডের জো রুট ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ। সমসাময়িক এই চার ক্রিকেটারের মধ্যে টেস্টে ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি উইলিয়ামসনের (৫৮.৮৮)। তার পরে স্মিথ (৫৬.৭৪)। তিন নম্বরে রুট (৫০.৮৭)। তাঁদের থেকেও পিছিয়ে পড়েছেন কোহলি। শেষ পাঁচ বছরের ধসই এতটা পিছিয়ে দিয়েছে তাঁকে।