এ ভাবেও ব্যাট করা যায়! তা-ও ১৪ বছরের একটা ছেলে। বিহারের ক্রিকেটকে যাঁরা এত দিন পাত্তা দিতেন না, তাঁদের ক্রিকেট মস্তিষ্কের ধোলাই করে দিল বৈভব সূর্যবংশী।
সূর্যবংশী! এই একটা শব্দই যেন বৈভবের বীরত্ব, সাহসিকতাকে বুঝিয়ে দেয়। গুজরাত টাইটান্সের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করার পর ১৪ বছরের কিশোর বলেছে, সে বোলার দেখে না, শুধু বল দেখে। মারার মতো বল মনে হলেই ব্যাট চালায়। তাই বলে বোলারের মুখ দেখবে না! বোলারদের কথা ভাববে না! পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারকে প্রশ্নটা করেই ফেললেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন স্পিনার মুরলি কার্তিক।
সূর্যবংশীর বৈভব মুগ্ধ করেছে তার সতীর্থদের। বাক্রুদ্ধ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদেরও। গুজরাত অধিনায়ক শুভমন গিল বলেই ফেললেন, ‘‘পাওয়ার প্লেতেই (প্রথম ছ’ওভার) ম্যাচটা ছিনিয়ে নিল। আমরা খারাপ রান করিনি। কিন্তু দিনটা সূর্যবংশীর ছিল। দুর্দান্ত সব শট মারল। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।’’ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, আগামী দিনে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হতে পারেন শুভমন। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনিই ছিলেন রোহিত শর্মার ডেপুটি। আইপিএলের ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কিছুটা সংযত মনে হল শুভমনকে। হতে পারে হতাশায় বেশি কথা বলতে চাইলেন না। হতে পারে পেশাদার ক্রিকেটার মোড়ক আলগা করলেন না। তবে নিশ্চিত ভাবেই আগামী দিনের দেশের সম্ভাব্য অধিনায়কের ‘নোটবুক’এ সূর্যবংশীর নাম উঠে গিয়েছে।
শুভমন সংযত থাকলেও জাতীয় দলে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী যশস্বী জয়সওয়াল উচ্ছ্বাস প্রকাশে কার্পণ্য করলেন না। ১৪ বছরের সতীর্থ সম্পর্কে যশস্বী বললেন, ‘‘অসাধারণ ইনিংস। আমার দেখা অন্যতম সো ইনিংস। আশা করব সূর্যবংশী আমাদের দলের হয়ে এমন ইনিংস আরও খেলবে। এক সঙ্গে ব্যাট করার সময় ওকে শুধু বলেছিলাম, চালিয়ে যেতে। অবিশ্বাস্য। অসাধারণ সব শট মারল।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করে সূর্যবংশী। তারই ফল পেল। ওর ব্যাটিংয়ে একটা আলাদা মেজাজ রয়েছে। ওর জন্য আমার শুভকামনা থাকল।’’
সঞ্জু স্যামসনের অনুপস্থিতিতে রাজস্থান রয়্যালসকে নেতৃত্ব দেওয়া রিয়ান পরাগও উচ্ছ্বসিত। অসমের ক্রিকেটার বললেন, ‘‘অবিশ্বাস্য। আমাদের সঙ্গে দু’মাস মতো রয়েছে। আমরা দেখেছি, ব্যাট হাতে ও কী করতে পারে। তবে গুজরাতের বিশ্বমানের বোলারদের বিরুদ্ধে এমন ইনিংস খেলবে ভাবতে পারিনি। প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই আমার। আমাদের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব জয়ের রান তোলা। সেটা এ ভাবে হবে ভাবতেই পারিনি।’’
আইপিএলে তৃতীয় ম্যাচ খেলা হয়ে গেল সূর্যবংশীর। প্রথম ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ৩৪, দ্বিতীয় ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ১৬ রান করেছিল বিহারের কিশোর। গুজরাতের বিরুদ্ধে খেলল ১০১ রানের ইনিংস। শতরানের ইনিংস খেলার পথে গড়ল একের পর এক রেকর্ড। আগের ম্যাচে সূর্যবংশী আউট হওয়ার পর রাজস্থানের কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে পরের ম্যাচেই বড় রান পাবে সূর্যবংশী।’’ নিজের হাতে তৈরি করবেন বলে রাজস্থান কর্তৃপক্ষকে দিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করিয়েছিলেন আইপিএল নিলামে। নিজের প্রতি কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এমন ‘ঝুঁকি’ নেওয়া যায়! দ্রাবিড় পেরেছেন। নিজের নেওয়া চ্যালেঞ্জ জিতেছেন। আসলে তাঁকে জিতিয়ে দিয়েছে সূর্যবংশী। ডাগআউটে বসে ১৪ বছরের ছাত্রকে দেখে শিশুর মতো হাসছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন কোচ।
আরও পড়ুন:
অযোধ্যা থেকে ৪৩৯ কিলোমিটার দূরে বিহারের সমস্তিপুর। আর এক সূর্যবংশীকে উপহার দিল ভারতীয় ক্রিকেট। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনার সময়ই আবির্ভাব!