জয়ের কাছে ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেখান থেকে হারতে হল তাদের। পিছিয়ে পড়েও লড়াই ছাড়েনি দিল্লি ক্যাপিটালস। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই ম্যাচে দেখা গেল। বোলার পরিবর্তন করতে ভুল করলেন মুম্বইয়ের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউর। বাংলার সাইকা ইশাক রান দিচ্ছেন দেখেও অন্য কোনও বোলারকে বল দিলেন না। নিজেও বল করলেন না। ফলে শেষ ওভারে নতুন বোলারের হাতে বল তুলে দিতে হল। সেটাই কাল হল। শেষ বলে ২ রান নিয়ে ম্যাচ জিতল দিল্লি। ২ উইকেটে হেরে মাঠ ছাড়তে হল হরমনপ্রীতদের।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি মুম্বইয়ের। শিখা পাণ্ডের তৃতীয় বলেই আউট হন হেলি ম্যাথুজ়। রান পাননি অপর ওপেনার যস্তিকা ভাটিয়াও। দুই ওপেনার ফেরার পরে মুম্বইয়ের ইনিংস সামলান ন্যাট শিভার-ব্রান্ট ও হরমনপ্রীত কউর। দু’জনেই দ্রুত রান করছিলেন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগান তাঁরা। পাওয়ার প্লে শেষ হলেও মুম্বইয়ের রানের গতি কমেনি।
৭৩ রানের জুটি হয় দুই ব্যাটারের মধ্যে। অর্ধশতরান করেন শিভার-ব্রান্ট। অধিনায়ক হরমনপ্রীতও অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ২২ বলে ৪২ রান করে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের বলে আউট হন হরমনপ্রীত। সেখান থেকে ভাঙন ধরে মুম্বইয়ের ব্যাটিংয়ে। বাকি কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি।
এক দিকে বড় শট খেলতে থাকেন শিভার-ব্রান্ট। কিন্তু তাঁকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেনি। দিল্লির বোলারেরা নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট নিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৯.১ ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে যায় মুম্বই। ৫৯ বলে ৮০ রান করে অপরাজিত থাকেন শিভার-ব্রান্ট। দিল্লির বোলারদের মধ্যে সাদারল্যান্ড ৩ উইকেট নেন। ২ উইকেট নেন শিখা। ১টি করে উইকেট নেন অ্যালিস ক্যাপসি ও মিন্নু মণি। ইনিংসে পাঁচটি বল খেলতে পারেনি মুম্বই। সেই পাঁচ বলই তফাত গড়ে দিল।
আরও পড়ুন:
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে উল্টো ছবি। প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন শেফালি বর্মা। অপর ওপেনার মেগ ল্যানিং ধীরে খেললেও শেফালি একের পর এক বড় শট মারছিলেন। বাংলার স্পিনার সাইকা ইশাকের এক ওভারে ২২ রান নেন তিনি। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৬০ রান হয়ে যায় দিল্লির। দেখে মনে হচ্ছিল, সহজেই ম্যাচ জিতে যাবে দিল্লি। কিন্তু পাওয়ার প্লে-র শেষ বলে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন শেফালি। ১৮ বলে ৪৩ রান করেন তিনি।
শেফালি আউট হওয়ার পরে সমস্যায় পড়ে দিল্লি। ১৫ রানে আউট হন অধিনায়ক ল্যানিং। জেমাইমা রদ্রিগেজ ও সাদারল্যান্ড রান পাননি। নতুন বলে শবমন ইসমাইল দুর্দান্ত। টানা চার ওভার বল করেন তিনি। দেন ১৮ রান। ল্যানিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। পরে মুম্বইয়ের তিন স্পিনার ম্যাথুজ়, শিভার-ব্রান্ট ও অ্যামেলিয়া কারের সামনে রান করতে সমস্যা হচ্ছিল দিল্লির ব্যাটারদের। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়ছিল। সেই সময়ই যদি অন্য কোনও বোলারকে হরমনপ্রীত ব্যবহার করতেন তা হলে শেষ ওভারে পার্টটাইম বোলারকে বল করাতে হত না। সেখানেই ভুল করেন অধিনায়ক।
কঠিন পরিস্থিতি থেকে লড়াই করেন নিকি প্রসাদ ও সারা ব্রাইস। এ বারই প্রথম খেলছেন নিকি। যথেষ্ট পরিণত ব্যাটিং করেন তিনি। তাড়াহুড়ো করেননি। খেলা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যান। ব্রাইস মাত্র ১০ বলে ২১ রান করে দিল্লিকে লড়াইয়ে রাখেন। ম্যাচ জিততে শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ২১ রান। শিখা আউট হলেও সেই ওভারে ১১ রান ওঠে।
শেষ ৬ বলে দিল্লিকে করতে হত ১০ রান। ক্রিজ়ে ছিলেন নিকি ও রাধা যাদব। হরমনপ্রীত বল তুলে দেন সঞ্জীবন সাজানার হাতে। ইনিংসে প্রথম বার বল করতে যান তিনি। সাইকা ৩ ওভারে ৪৩ রান দেওয়ায় তাঁর উপর ভরসা রাখতে পারেননি হরমনপ্রীত। অধিনায়কের এই ভয় দলকে হারিয়ে দিল। সাজানার প্রথম বলেই চার মারেন নিকি। পরের বলে নেন ২ রান। পরের দু’বলে দু’টি সিঙ্গল আসে। শেষ দু’বলে দরকার ছিল ২ রান। বড় শট মারতে গিয়ে ৩৫ রানের মাথায় আউট হন নিকি। খেলা শেষ করতে না পারলেও অভিষেকে নজর কাড়লেন তিনি। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। রান আউটের সুযোগ থাকলেও হয়নি। দুই ব্যাটার দৌড়ে রান পূর্ণ করেন। ২ উইকেটে ম্যাচ জেতে দিল্লি।