ফুটবলে যে গোলই শেষ কথা বলে তা আরও এক বার প্রমাণ করে দিল মোহনবাগান। চলতি মরসুমে হয়তো সবচেয়ে খারাপ খেলাটা কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে খেলল তারা। শুভাশিস বসু ও বিশাল কাইথ না থাকলে প্রথম ৩০ মিনিটেই অন্তত চারটি গোল খেতে পারত তারা। কিন্তু ওই যে, ফুটবলে গোলই শেষ কথা বলে। একের পর এক আক্রমণ করলেও গোলের মুখ খুলতে পারল না কেরল। অন্য দিকে যে কয়েকটি সুযোগ বাগান পেল, তা কাজে লাগালেন জেমি ম্যাকলারেন, আলবের্তো রদ্রিদেসরা। ফলে ৩-০ গোলে কেরলকে হারাল মোহনবাগান। এই জয়ের ফলে আইএসএলের সেমিফাইনালে উঠল বাগান। কোনও হিসাবেই আর দ্বিতীয় স্থানের নীচে নামতে পারবে না। এই জয়ের পর ২১ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট হল সবুজ-মেরুনের। বাকি তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটি জিতলেই পর পর দু’বার আইএসএলের লিগ-শিল্ড জিতবে মোহনবাগান। প্রথম দল হিসাবে এই কীর্তি গড়বে তারা। পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে ওড়িশাকে হারাতে পারলে সমর্থকদের সামনেই ভারতসেরা হবে বাগান।
কেরলের আক্রমণের ঝড়
প্রথম থেকেই ঘরের মাঠের সুবিধা তুলতে শুরু করে কেরল। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনতে থাকে তারা। চাপে পড়ে যায় বাগান রক্ষণ। ৯ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারত কেরল। বক্সের মধ্যে পর পর দু’বার গোলমুখী শট বাঁচান শুভাশিস। মাঝমাঠে বলের দখল ছিল না বাগান ফুটবলারদের পায়ে। এই ম্যাচে খুব খারাপ খেললেন বাগানের মিডফিল্ডের দুই ভরসা দীপক টাংরি ও আপুইয়া। তাঁদের জন্য কোনও আক্রমণ তৈরি হচ্ছিল না। বার বার ফিরতি বল পাচ্ছিল কেরল। আক্রমণের পর আক্রমণ করছিলেন আদ্রিয়ান লুনা, জেসুস গিমেনেজ়রা। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেননি তাঁরা। ২৫ মিনিটের মাথায় অবধারিত গোল বাঁচান বিশাল। শরীর ছুড়ে বল বার করে দেন তিনি।
রক্ষণে প্রাচীর শুভাশিস
বাগানের বেশির ভাগ ফুটবলার খারাপ খেললেও অনবদ্য ফুটবল খেললেন শুভাশিস। তিনি দেখিয়ে দিলেন, অধিনায়কের দায়িত্ব কী ভাবে পালন করতে হয়। শুভাশিস থাকায় কোনও আক্রমণ থেকেই ফসল তুলতে পারেনি কেরল। চাপ সামলে দেন তিনি। শটের সামনে শরীর ছুড়তে ভয় পাননি। শুধু রক্ষণ নয়, আক্রমণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন তিনি। এই ম্যাচে যদি মোহনবাগানের কাউকে ১০-এ ১০ দেওয়া যায়, তা হলে তিনি শুভাশিস।
সুযোগ কাজে লাগালেন ম্যাকলারেন
বক্স স্ট্রাইকারের কাজ ঠিক কী তা এই ম্যাচে দেখালেন ম্যাকলারেন। গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে দাপট দেখিয়েছে কেরল। হাতে গোণা কয়েকটি সুযোগ পায় মোহনবাগান। সেখান থেকেই গোল করে তারা। ২৮ মিনিটের মাথায় দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে বল বাড়ান লিস্টন কোলাসো। ঠিক জায়গায় ছিলেন ম্যাকলারেন। গোল করতে ভুল করেননি তিনি। আবার ৪১ মিনিটের মাথায় জেসন কামিংসের পাসে চলতি বলে কেরলের গোলরক্ষক সচিন সুরেশকে পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধে আরও একটি গোল করেছিলেন ম্যাকলারেন। অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। দ্বিতীয়ার্ধে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করতে পারতেন অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় উন্নতি বাগানের
প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি উন্নতি হল মোহনবাগানের খেলায়। মাঝমাঠের দখল কিছুটা হলেও নিল তারা। ফলে আক্রমণ হল। রক্ষণেও শুভাশিস নির্ভরতা কমল। আলবের্তো রদ্রিগেস ও টম অলড্রেড অনেক বেশি দায়িত্ব নিলেন। ফলে দ্বিতীয়ার্ধে অনেক কম সুযোগ তৈরি করেছে কেরল। যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা থেকে গোল আসেনি। বক্সের বাইরে বাগানের রক্ষণ ছিল জমাট। তা ভাঙতে পারেনি কেরল।
আবার গোল আলবের্তোর
এক জন ডিফেন্ডার হয়ে চলতি মরসুমে ছ’টি গোল করে ফেললেন আলবের্তো। ৬৬ মিনিটের মাথায় কামিংসের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে শট মারেন অলড্রেড। ফিরতি বল যায় আলবের্তোর পায়ে। মাটি ঘেঁষা শটে গোল করেন তিনি। ৩-০ এগিয়ে যাওয়ায় খেলার ফল তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
আরও একটি ম্যাচে ক্লিনশিট বিশালের
চলতি মরসুমে অনবদ্য বিশাল। তাঁকে টপকে গোল করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিপক্ষ। এই ম্যাচেও তাই হল। যত বার কেরল বল নিয়ে উঠল, দেখল ঠিক জায়গায় দাঁড়িয়ে বিশাল। কয়েকটি ভাল সেভ করলেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস দিন দিন বাড়ছে। আরও একটি ম্যাচে ক্লিনশিট রাখলেন তিনি।
সুযোগ নষ্টের খেসারত দিল কেরল
গোটা ম্যাচে অন্তত ছ’টি ভাল সুযোগ পেয়েছিল কেরল। কিন্তু কাজের কাজটাই করতে পারল না তারা। গোলে বল রাখতে পারল না। কোনও শট প্রতিহত হল। কোনও শট আবার বার উঁচিয়ে বেরিয়ে গেল। সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় ভাল খেলেও হেরে মাঠ ছাড়তে হল তাদের।