E-Paper

ভারত লাও, কাপ বাঁচাও, স্লোগান উঠে গেল বোধনেই

আইসিসি কর্তাদের মধ্যে মনে হল, বেশ ঝোড়ো ময়নাতদন্ত চলছে। ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের ম্যাচগুলোয় টিকিট বিক্রির কী হাল, তার হিসাবপত্তর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হায়দরাবাদে পাকিস্তান নামছে জুম্মাবারে। সেখানে কী অবস্থা?

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৭
উদ্বেগ: বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ফাঁকা গ্যালারি।

উদ্বেগ: বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ফাঁকা গ্যালারি। ছবি: পিটিআই।

বিশ্বকাপ বোধনের দিনে এমন বেজার মুখে তাঁকে আবিষ্কার করতে হবে, কে জানত! ‘তাঁকে’ মানে আইসিসি কর্তাকে। দেখে মনে হল, বলিউডের বড় বাজেটের ফিল্ম রিলিজ় ছিল। মহাতারকা সব কাস্টিং ছিল। প্রথম দিনেই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাংশু মুখে ঘুরছেন আর বিলাপ করে চলেছেন, ‘‘আমদাবাদের অবস্থা দেখেছেন? মাঠ একদম ফাঁকা। হাজারখানেক সিটও ভরেছে কি না সন্দেহ। ভাবতেই পারছি না।’’

বলে তিনি নিজেই চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের (অতীতের চিপক) একটি ঘরের টিভির সামনে এসে দাঁড়ালেন। পর্দায় তখন সত্যিই আঁতকে ওঠার মতো ছবি। দেখে কে বলবে, গত বারের দুই ফাইনালিস্ট খেলছে! এর চেয়ে তো একটু আগে বিরাট কোহলিদের প্র্যাক্টিসে আগমন দেখতে বেশি লোক হাজির ছিল চেন্নাইয়ের মাঠের বাইরেটায়। উল্টো দিকের দোকানপাট ফেলে রেখে সবাই ছুটে এসেছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা তড়িঘড়ি ভিড় সরিয়ে না দিলে ব্যারাজের জল ছাড়ার মতো জনরাশি আছড়ে পড়ত।

অতঃপর? প্রথম দিনেই খোঁজ পড়েছে ভারত কবে কবে নামছে? আমদাবাদে বোধনের গ্যালারি যদি আতঙ্ক হয়, তা হলে আশ্বাসের কথা হচ্ছে, চেন্নাইয়ে ৮ অক্টোবরের টিকিট নিঃশেষ। আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দর্শকাসন এক লক্ষ ৩২ হাজার। চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরমে ৩৫ হাজার মতো। তাই তুলনা চলে না। কিন্তু বেশি দর্শকাসন হলেও একটাও টিকিট যে পড়ে থাকত না, সন্দেহ নেই। বৃহস্পতিবারও অনেক ভক্তকে চেন্নাইয়ের মাঠের সামনে ঘুরঘুর করতে দেখা গেল। যদি কোনও ভাবে কোহলি বনাম কামিন্স দ্বৈরথের লটারি জিতে নেওয়া সম্ভব হয়। যদি কোনও আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ায় রোহিত বনাম স্টার্ক দেখার ভাগ্য খুলে যায়! আমদাবাদে ১৪ অক্টোবর ভারত-পাক দ্বৈরথ। মহালয়ার দিন। নবরাত্রি শুরু হচ্ছে পরের রাত থেকে। এখন থেকেই মারমার-কাটকাট শুরু হয়ে গিয়েছে। আইসিসি কর্তাদেরও বলতে শোনা গেল, ‘‘১৪ অক্টোবর সব ঘাটতি পুষিয়ে দেবে।’’ চেন্নাইয়ে কোহলি-রোহিতদের অনুশীলন ঘিরে উন্মাদনা আর আশেপাশের আবহ দেখে মনে হল, ২০২৩ বিশ্বকাপের স্লোগান ঠিক হয়ে গিয়েছে— ভারত লাও, কাপ বাঁচাও। যত দ্রুত পারো, কোহলিদের মাঠে নামাও।

তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার শীর্ষ কর্তা আবার অন্য মেজাজ যোগ করে দিলেন। ‘‘এ আর কী দেখছেন? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এখানে হলুদ জার্সি পরে এসে দাঁড়ালে যা হত, তার তুলনায় এটা কিছুই নয়। তখন ভিড় সামলানো যেত না।’’ স্টেডিয়ামের বাইরে বেরিয়ে একটু বাঁ দিকে চোখ গেলেই বোঝা যাবে টিএনসিএ কর্তা মোটেও ভুল বলেননি। খেলাধুলোর সরঞ্জামের দোকানের নাম— ‘এম এস ধোনি স্টোর্স।’ চেন্নাইয়ে জনপ্রিয়তায় ধোনির একমাত্র তুলনা রজনীকান্ত। তাঁকে ডাকা হয় ‘থালা’ বলে। যার অর্থ, নেতা। তাঁর চেয়ে বড় নেতা আর কে আছে! এখানে বাড়তি আবেগ যোগ হওয়ার কারণ, ১২ বছর বাদে দেশের মাঠে বিশ্বকাপ, আর শেষ বার, ২০১১-তে কাপজয়ী দলের অধিনায়কের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি! এ বার ‘থালা’ ধোনির হলুদ ডেরাতেই অভিযান শুরু করছে রোহিত-বাহিনী। ২০১১-র অন্যতম সারথি সহবাগ গান ধরেছেন, ‘‘ফির এক বার, ঘর পে জিতো ইয়ার!’’

ক্রিকেটীয় দিক থেকে দেখতে গেলে বোধন মোটেও খারাপ হয়নি। ২০১৯-এর চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২৩-এরও অন্যতম ফেভারিট হিসেবে আসা ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল নিউ জ়িল্যান্ড। দারুণ চমক। দুর্ধর্ষ সব আগ্রাসী শট খেলে গেলেন রাচিন রবীন্দ্র, ডেভন কনওয়ে-রা! নিউ জ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন নেই। টিম সাউদি নেই। লকি ফার্গুসন নেই। ব্রেসওয়েল নেই। তাতেও ৮২ বল বাকি থাকতে গোলাবারুদে বোঝাই ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দেবে, কে ভেবেছিল! সাধারণত, এই ধরনের অঘটন দিয়ে শুরু মানে তো প্রতিযোগিতা জমে গেল। এখানে আশার পাশে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘোরাফেরা করার কারণ গ্যালারির প্লেটলেট উদ্বেগজনক ভাবে কমে যাওয়া। রিভার্স সুইপ বা সুইচ হিট ধুয়ে কি জল খাব, যদি মাঠই খাঁ-খাঁ করে!

আইসিসি কর্তাদের মধ্যে মনে হল, বেশ ঝোড়ো ময়নাতদন্ত চলছে। ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের ম্যাচগুলোয় টিকিট বিক্রির কী হাল, তার হিসাবপত্তর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হায়দরাবাদে পাকিস্তান নামছে জুম্মাবারে। সেখানে কী অবস্থা? বোর্ডের শীর্ষ মহলও নিশ্চয়ই চিন্তিত। বোর্ড সচিব জয় শাহদের শহর আমদাবাদ। এখন ভারতীয় ক্রিকেটের রাজধানী। মনে হয় না, তিনি— জয় শাহ বোধনের এই ধাক্কা সহজ ভাবে নেবেন। নিশ্চয়ই খোঁজ চলবে, এমন কী করে হল? টিকিট বিক্রির ফর্মুলা কি তা হলে ঠিক ছিল না? নাকি আইসিসি বেশি মাতব্বরি করতে গিয়ে ডোবাল? ঐতিহাসিক ভুল হয়ে গেল কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না রাখা? অনেকেই তর্ক তুলে দিচ্ছেন, ভারতে বিশ্বকাপ হচ্ছে আর বলিউডের রং মেশাব না? শাহরুখ খান, ক্যাটরিনা কাইফ বা দীপিকা পাড়ুকোন ‘পারফর্ম’ করছেন শুনলে উদ্বোধনে লোকে ভিড় করত না? আইপিএল ফর্মুলা তো হাতের সামনেই ছিল। স্রেফ ফটোকপি করতে হত।

যা মনে হচ্ছে, কোহলি-রোহিতদের শুধু জিতলেই হবে না। আইসিসি আর নিজেদের দেশের বোর্ডকে জেতানোর জন্যও ব্যাট ধরতে হবে। বিশ্বকাপের প্রথম দিনেই সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, নীল জার্সিতে ‘বসতে
ক্রিকেট-লক্ষ্মী’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ICC World Cup 2023 Narendra Modi Stadium

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy