ছক কষেই কি ড্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বেন স্টোকস? তিনি কি চাননি রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের শতরান হোক? ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট শেষ হয়ে গেলেও এই বিষয়ে বিতর্ক এখনও থামেনি। তার পরেও নিজের অবস্থান বদলাচ্ছেন না তিনি। যুক্তি দিয়েছেন ইংরেজ অধিনায়ক। স্টোকসের মতে, ১০ রান না করলে কিছু বদলে যেত না।
ম্যাঞ্চেস্টারে শেষ দিন ৬৫ ওভারের বেশি ব্যাট করেছেন জাডেজা ও ওয়াশিংটন। তাঁদের ব্যাটে সসম্মানে ম্যাচ বাঁচিয়েছে ভারত। দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের মতে, দুই ব্যাটারেরই শতরান প্রাপ্য ছিল। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “কেউ যদি ৯০ বা ৯৫ রানে ব্যাট করে তা হলে তাঁকে সেঞ্চুরি করতে দেওয়া কি উচিত নয়?” কিন্তু স্টোকস তা মানতে রাজি নন। তাঁর মতে, দলকে বাঁচানোই আসল। শতরানের আলাদা করে কোনও গুরুত্ব সেখানে নেই।
স্টোকস প্রশংসা করেছেন দুই ভারতীয় ব্যাটারের ইনিংসের। তাঁর মতে, ম্যাচ বাঁচানোর তৃপ্তির থেকে শতরান বড় নয়। খেলা শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয়ে স্টোকস বলেন, “ভারত চাপে ছিল। আমরা জেতার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু ওদের জুটি আমাদের আটকে দিল। জাডেজা ও ওয়াশিংটন দুর্দান্ত খেলেছে। আমার মনে হয়, কঠিন পরিস্থিতিতে ৮০-৯০ অপরাজিত থেকে দলকে বাঁচিয়ে মাঠ ছাড়ার থেকে বেশি তৃপ্তি শতরান দিতে পারে না। তোমরা দলের জন্য কী করেছ দেখো। তোমরাও জানো, ১০ রান না করলে কিছু বদলে যেত না। যে কঠিন পরিস্থিতি থেকে তোমরা সিরিজ় হারের হাত থেকে দলকে বাঁচিয়েছ, তার গুরুত্ব শতরান দিয়ে মাপা যায় না।”
স্টোকসের ড্রয়ের প্রস্তাবের পর নিজেদের শতরান করতে মাত্র তিন ওভার নেন জাডেজা ও স্টোকস। সেই সময়টুকু বল করলে কোনও সমস্যা হত না ইংল্যান্ডের। তা হলে কেন ড্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্টোকস? তারও জবাব দিয়েছেন ইংরেজ অধিনায়ক। তিনি বলেন, “আমাদের বোলারেরা অনেক চেষ্টা করেছে। নিজেদের সবটা দিয়েছে। যদি জেতার সুযোগ থাকত তা হলে খেলা চালিয়ে যেতাম। কিন্তু যখন দেখলাম, ড্র ছাড়া অন্য কিছু হবে না, তখন আর দলের পেসারদের উপর চাপ দিতে চাইনি। আমি চাইনি বল করতে গিয়ে ওরা চোট পাক। তাই ১৫ ওভার আগে ড্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।”
ভারত খেলা চালিয়ে যেতে চাওয়ায় দুই পার্ট টাইম স্পিনার জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের হাতে বল তুলে দেন স্টোকস। তবে তাঁদেরও তিনি বলে দিয়েছিলেন, শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ না দিতে। স্টোকস বলেন, “গোটা টেস্টে একমাত্র ব্রুক বল করেনি। তাই ওকে বল দিয়েছিলাম। সঙ্গে রুটও বল করছিল। তবে ওদের বলে দিয়েছিলাম, বেশি চেষ্টা করার কোনও দরকার নেই। কোনও রকমে ওভার শেষ করতে হবে। কারণ, বল না করলেও দু’দিন ওদের ফিল্ডিং করতে হয়েছে। ওদেরও ধকল কম হয়নি। আমি শুধু নিজের ক্রিকেটারদের শরীরের কথা ভেবেছি।”
আরও পড়ুন:
টেস্টে পঞ্চম দিন শেষ এক ঘণ্টায় ১৫ ওভারের খেলা বাকি ছিল। তখনও ক্রিজ়ে জাডেজা ও ওয়াশিংটন। ভারতের লিড তখন ৭৫ রান। স্টোকস বুঝে গিয়েছিলেন, ভারতের বাকি ছয় উইকেট ফেলে আর এই ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। তাই তিনি ড্রয়ের প্রস্তাব দিতে যান। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভারতের দুই ব্যাটার। সেটা দেখে ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথ আম্পায়ারদের কাছে অভিযোগ করেন যে আলো কমে গিয়েছে। সেই অভিযোগে পাত্তা দেননি আম্পায়ারেরা। তাঁরা খেলা চালিয়ে যেতে বলেন। বাতিস্তম্ভের আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
স্টোকস নিজেও জানতেন জাডেজা ও ওয়াশিংটনের শতরানের সুযোগ রয়েছে। তার পরেও তিনি ড্রয়ের প্রস্তাব দেন। তাঁর এই কাজ অবাক করে ধারাভাষ্যকারদেরও। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, “স্টোকসের এটা করা উচিত হয়নি। ক্রিকেট জেন্টলম্যানদের খেলা। স্টোকসের সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।” আর এক ধারাভাষ্যকার সুনীল গাওস্কর বলেন, “ওরা এই শতরানের যোগ্য। এত পরিশ্রম ওরা করেছে। কেন এখন খেলা ছেড়ে দেবে? স্টোকস কী ভেবে ড্রয়ের প্রস্তাব দিতে গেল? আমি তো বলব ওরা বাকি ১৫ ওভারই ব্যাট করুক।”
ভারত ড্রয়ে রাজি না হওয়ায় ব্রুকের হাতে বল তুলে দেন স্টোকস। অপর প্রান্তে ছিলেন রুট। ভাবখানা এমন, যাও তাড়াতাড়ি শতরান করে খেলা শেষ করো। সেই সুযোগ নেন জাডেজারাও। দ্রুত চার-ছক্কা মেরে দু’জনেই শতরান করেন। তাঁরা যাতে বড় শট মারতে পারেন, তার জন্য ফিল্ডারদেরও ৩০ গজ বৃত্তে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন স্টোকস। ভারতের দুই ব্যাটারকে বড় শট মারার কথাও বলছিলেন তিনি। তাঁর এই মনোভাবেরই সমালোচনা হচ্ছে। স্টোকসকে দেখে মনে হয়েছে, ভারতের আগে তিনিই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। খেলা শেষে ভারত অধিনায়ক শুভমনও জানিয়েছেন, জাডেজারা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এই শতরান তাঁদের প্রাপ্য ছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও জাডেজাদের খেলা চালিয়ে যেতে বলতেন বলেও জানিয়েছেন শুভমন।