Advertisement
১১ মে ২০২৪
India

Rishabh Pant: নিজেকে বদল না করে সাফল্য পন্থের

এক জন নিজের স্টান্সটা বদল করে খেলল। অন্য জন, নিজের পুরনো স্টান্সে। প্রথম জন, বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় জন, ঋষভ পন্থ।

লড়াই: সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকলেন ঋষভ পন্থ।

লড়াই: সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকলেন ঋষভ পন্থ।

লক্ষ্মীরতন শুক্ল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১০
Share: Save:

বৃহস্পতিবার কেপ টাউনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াইটা দেখতে দেখতে ইংরেজি সাহিত্যের একটা বিখ্যাত উপন্যাসের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। চার্লস ডিকেন্সের ‘আ টেল অব টু সিটিজ়।’ ভারতের ইনিংসটা দেখার পরে মনে হচ্ছে ‘আ টেল অব টু স্টান্স’-এর একটা কাহিনি দেখলাম।

এক জন নিজের স্টান্সটা বদল করে খেলল। অন্য জন, নিজের পুরনো স্টান্সে। প্রথম জন, বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় জন, ঋষভ পন্থ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোহলি এখন বল ছাড়ার মুহূর্তে ‘শাফল’ করে অফস্টাম্পের উপরে চলে আসছে। ওর পিছনের পা-টা থাকছে অফস্টাম্পের লাইনে। এতে করে কী হচ্ছে, ভারত অধিনায়কের তূণ থেকে কাট এবং ব্যাকফুট ড্রাইভের মতো অস্ত্রগুলো বাদ পড়ে যাচ্ছে। ওই সব শট খেলার জায়গা পাচ্ছে না বিরাট। রানটা আসছে সামনের পায়ে ড্রাইভের থেকে।

উল্টো দিকে, ঋষভ কিন্তু নিজের পুরনো স্টান্সটাই ধরে রেখেছে। অর্থাৎ নড়ছে না। এবং, ব্যাকফুটেও সাবলীল ভাবে শট খেলে যাচ্ছে। পুল শটও যেমন খেলল, সে রকম কাটও মারল। ব্যাকফুটে পাঞ্চও করল।

দিনের শুরুতে দ্রুত দু’টো উইকেট হারানোর পরে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। চার উইকেটে ৫৪ রান থেকে খেলাটা ধরল বিরাট-ঋষভ জুটি। ৯৪ রান যোগ করল ওরা দু’জনে। বিরাটের খেলায় সেই জেদ, কিছুতেই উইকেট দেব না মনোভাব বারবার ফুটে উঠছিল। কিন্তু তাও বলব, ১৪৩ বলে ২৯ রানটা কিন্তু একটু মন্থর হয়ে গেল। কেপ টাউনের উইকেটটা এমনই যে একটা বিষাক্ত বল যে কোনও মুহূর্তে ছোবল মারতে পারে। তাই রানটা তোলার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। অধিনায়ক আর একটু স্ট্রোক খেললে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লক্ষ্যটা অনায়সে ২৬০-২৭০ দেওয়া যেত, ২১২ রানের পরিবর্তে। যে স্টান্স আর মানসিকতা নিয়ে বিরাট অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এক সিরিজ়ে চারটে টেস্ট সেঞ্চুরি করে এসেছিল, তা বদলানোর কোনও কারণ কিন্তু নেই।

ঋষভ যেমন নিজেকে বদলায়নি। জোহানেসবার্গে আগের টেস্টে ও রকম বিশ্রী শট খেলে আউট হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ডরহীন ক্রিকেটই খেলে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা উইকেট থেকে ভাল বাউন্স পাচ্ছিল। সে সব সামলে ঋষভ (১৩৯ বলে অপরাজিত ১০০) কিন্তু পাল্টা শট খেলে গেল। ৮০ রান পর্যন্ত তো প্রায় একশো স্ট্রাইক রেট ছিল। এই আগ্রাসী, প্রতিআক্রমণেই এল টেস্টের চতুর্থ সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও।

সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে বিরাট কোহলি— সবাই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার মশালকে বহন করেছে। এদের মন্ত্রই হচ্ছে, মাঠে নেমে নিজেকে মেলে ধরো। গুটিয়ে থেকো না। অথচ এই সিরিজ়ে ভারতের ব্যাটিংকে গুটিয়েই থাকতে দেখলাম।

এই দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং বেশ অনভিজ্ঞ। অনরিখ নখিয়া নেই। মার্কো জানসেনের অভিষেক সিরিজ়। আর ওদের বিরুদ্ধেই প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস ছাড়া দু’শো রান তুলতেই গলদঘর্ম হয়ে পড়ছে ভারতীয় ব্যাটাররা। মনে হচ্ছে, শট খেলতে ভয় পাচ্ছে। এ রকম দু’শোর আশেপাশে রান তুলে সিরিজ় জেতা কঠিন। ভারত যদি কেপ টাউন টেস্ট এবং সিরিজ় জেতেও, ব্যাটিং নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকবে।

অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার কিগান পিটারসেনকে দেখুন। ওর পাঁচ নম্বর টেস্ট। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চাপের মুখেও কেমন খোলা মনে শট নিয়ে গেল। ওর ৬১ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের সুবাদে তৃতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান দু’উইকেটে ১০১। শেষ ওভারে জোহানেসবার্গ টেস্টের নায়ক ডিন এলগারকে ফিরিয়ে আশা একটু বাড়িয়েছে যশপ্রীত বুমরা। কিন্তু তাও ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই ঝুঁকে। চতুর্থ দিন সকালে দ্রুত কয়েকটা উইকেট তুলে নিতে না পারলে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে টেস্ট সিরিজ় জয় অধরাই থেকে যাবে ভারতের।

দু’দলের মধ্যে এই টেস্টে আর একটা তফাত দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ব্যাটিং। কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাডা, ডুয়ান অলিভিয়ে কিন্তু অল্প হলেও রান করে গিয়েছে। সেখানে এ দিন আমাদের সাত নম্বর থেকে আত্মসমর্পণ শুরু। শেষ পাঁচ ব্যাটারের মিলিত সংগ্রহ ১৪ রান! কিন্তু শার্দূল, অশ্বিন, এমনকি উমেশ যাদব-মহম্মদ শামিদের এর চেয়ে ভাল খেলার ক্ষমতা আছে। একটু দৃঢ়তা দেখিয়ে এরা যদি ১০-১৫ রান করে করত, তা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ২১২ রানের চেয়ে বড় লক্ষ্য দেওয়া যেত।

আরও একটা ব্যাপার বলতেই হচ্ছে। এই টেস্টের পরে কিন্তু চেতেশ্বর পুজারা আর অজিঙ্ক রাহানেকে বাইরে রাখার সময় হয়েছে। এর পরেও যদি তরুণ মুখদের সুযোগ দেওয়া না হয়, তবে কবে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India south africa Rishabh Pant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE