সাদা ও লাল বলের ক্রিকেটের তফাতটা কি ভুলে গিয়েছেন গৌতম গম্ভীর? এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে যে দল তিনি নামিয়েছেন তাতে তিন জন অলরাউন্ডার। ক্রিকেটে অলরাউন্ডারের গুরুত্ব অনেক বেশি এক দিন ও টি-টোয়েন্টিতে। টেস্ট বিশেষজ্ঞদের খেলা। সেখানে ভারত চলছে অন্য পথে। তার ফলও মিলেছে। শেষ ন’টা টেস্টে মাত্র একটা জিতেছে তারা। এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে জসপ্রীত বুমরাহকে খেলায়নি ভারত। নেওয়া হয়নি কুলদীপ যাদবকেও। ভারতের এই দল নিয়ে শুরু হয়েছে প্রশ্ন। নিশানায় দলের কোচ গম্ভীর ও অধিনায়ক শুভমন গিল।
চোট সারিয়ে ফেরা বুমরাহ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডে পাঁচ টেস্টের মধ্যে তিনটে তিনি খেলবেন। কিন্তু কোন তিনটে টেস্ট তা ঠিক করেননি। হেডিংলেতে হেরে ০-১ পিছিয়ে ভারত। এই পরিস্থিতিতে এজবাস্টনে বুমরাহকে খেলানো উচিত ছিল। বুমরাহ যে এই টেস্ট খেলতে তৈরি তা জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে। তার পরেও ভারত বুমরাহকে খেলাল না। কেন?
টসের পর অধিনায়ক শুভমন জানিয়েছেন, তাঁদের মনে হয়েছে লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে পিচ থেকে বেশি সাহায্য পাবেন বুমরাহ। তাই তাঁকে সেখানে খেলানো হবে। কিন্তু লর্ডসে যাওয়ার আগে যদি ভারত ০-২ পিছিয়ে পড়ে, তা হলে বুমরাহ তৃতীয় টেস্টে একা কী করবেন? সে ক্ষেত্রে তো সিরিজ় জিততে হলে বাকি তিনটে টেস্টই জিততে হবে। শুভমন কি সেটা জানেন না? না কি কোচ যা বলছেন, পাখি পড়ার মতো তা তিনি আউড়ে যাচ্ছেন?
বুমরাহ কোন তিনটে টেস্ট খেলবেন তা ঠিক করার দায়িত্ব কোচ ও অধিনায়কের নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ভারতের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। গম্ভীরদের সিদ্ধান্তে খুশি নন তিনি। শাস্ত্রী বলেন, “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এক সপ্তাহ ছুটি পেয়েছে দল। বুমরাহকে না দেখে আমি একটু অবাক হচ্ছিল। কোন টেস্টে কে খেলবে তা ক্রিকেটারেরা ঠিক করবে না। এটা কোচ ও অধিনায়কের কাজ। এই টেস্টে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল বুমহারকে।” এখন থেকে লর্ডসের কথা ভাবতে নিষেধ করেছেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, “আগে এটা খেলে জেতো। সিরিজ় ১-১ করো। তার পর তো লর্ডসের ভাবনা। আমি নিশ্চিত, যদি ভারত এটা জিতত তা হলে বুমরাহ লর্ডসেও খেলত।”
গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারত লাল বলের ক্রিকেটে যেন জিততে ভুলে গিয়েছে। প্রথমে নিউ জ়িল্যান্ড। তার পর অস্ট্রেলিয়া। আর এখন ইংল্যান্ড। বার বার হারতে হচ্ছে। দলকে জয়ে ফিরতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে বুমরাহের খেলা দরকার। সেটা মনে করেন শাস্ত্রীও। তিনি বলেন, “ভারতের গত এক বছর টেস্টে খুব খারাপ গিয়েছে। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে তিনটে টেস্ট হেরেছে। তার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে তিনটে টেস্ট হেরেছে। ইংল্যান্ডের কাছেও প্রথম টেস্ট হেরেছে। জয়ে ফিরতে গেলে বিশ্বের সেরা বোলারকে তো খেলাকে হবে। সাত দিন বিশ্রাম পাওয়ার পরেও বুমরাহকে খেলানো হল না। এই সিদ্ধান্তে আমি অবাক হচ্ছি।”
আরও পড়ুন:
ভারতের দল দেখে বোঝা যাচ্ছে, কত জন ব্যাটার ও কত জন বোলার খেলাবেন, সেই চিন্তায় পড়েছেন গম্ভীর। গত টেস্টে ভারতের লোয়ার আর্ডার রান পায়নি। সেই কারণে ব্যাটিং গভীরতাও বাড়াতে চেয়েছেন তিনি। সেই কারণে এতগুলো অলরাউন্ডার খেলাচ্ছেন। কিন্তু এই টেস্টে বুমরাহ ও কুলদীপকে ভারতের খেলানো উচিক ছিল বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তিনি বলেন, “বুমরাহ ফিট থাকলে বিশ্বের সেরা বোলারকে তো নিতেই হবে। অন্তত কুলদীপকে খেলাতে হত। ২০টা উইকেট তো নিতে হবে। বুমরাহের পর ভারতের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কুলদীপ। কিন্তু দু’জনেই নেই।”
অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও টেস্টে বোলিং আক্রমণ নিয়ে ঝুঁকি নেয় না। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হেজ়লউড ও নেথান লায়নের অভিজ্ঞ আক্রমণ নামায় তারা। টেস্টে বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটারদের গুরুত্ব অনেক বেশি। সেখানে এজবাস্টনে ভারত মাত্র পাঁচ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলাচ্ছে। গম্ভীরের অলরাউন্ডারের প্রতি ভালবাসা অবাক করেছে টম মুডিকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক ও কোচ বলেন, “ভারতের দল নির্বাচন দেখে অবাক হচ্ছি। বুমরাহ নেই। মাত্র পাঁচ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলছে। এটা তো জুয়ো খেলা। অলরাউন্ডারদের প্রতি নির্ভরতা টেস্টে কখনও কাজে লাগে না। টেস্ট বিশেষজ্ঞদের খেলা।”
ভারতের কোচ হওয়ার পর থেকে লাল বলের ক্রিকেটে গম্ভীর চাপে রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়া কোনও দলকে হারাতে পারেননি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে পারেনি দল। নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পর যদি এ বার ইংল্যান্ডের কাছেও ভারত হারে তা হলে চাপ আরও বাড়বে গম্ভীরের উপর। তিনি সেটা জানেন। কিন্তু যে ভাবে তিনি দল নির্বাচন করছেন তাতে ভারত কতটা জিতবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নিশানায় গম্ভীর। বুমরাহকে না খেলিয়ে কি বড় ভুল করে ফেললেন ভারতের কোচ?