আড়াই দিনে ইডেন টেস্টে হারের পরেও দমে যাননি ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর। বলেছেন, পিচ বিপজ্জনক ছিল না। দল ভাল খেলতে পারেনি বলেই হেরেছেন। ভারতের কোচের এমন মন্তব্যে অবাক অনিল কুম্বলে। ইডেনে দীর্ঘ দিন খেলার সুবাদে কুম্বলে জানিয়েছেন, জীবনে এমন পিচ দেখেননি তিনি। গম্ভীরের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন পেসার ডেল স্টেনও। আরও এক ধাপ এগিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, এ বার হয়তো গম্ভীর বাকিদের কথা শুনে পিচ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা ছেড়ে দেবেন। চেতেশ্বর পুজারার পরামর্শ, তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার মতো পিচ না বানিয়ে আরও ভাল পিচে খেলা উচিত ভারতের।
২০০১-এ এই ইডেনেই স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার জয়রথ থামিয়ে দিয়েছিল ভারত। সেই সব ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কুম্বলে। বলেছেন, “ইডেনের ঐতিহ্যের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, এখানে অনেক ভাল ভাল ম্যাচ হয়েছে। আমি অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে এখানে খেলতে আসছি। তিন দিন ধরে পিচ এ রকম আচরণ করছে, এমনটা কোনও দিন দেখিনি। গৌতম কী বলেছে সেটা শুনেছি। সত্যি বলতে, ওর কথায় আমি দ্বিধাগ্রস্ত। বুঝতে পারছি না ও কী বলতে চাইছে।”
কুম্বলে যোগ করেছেন, “এই তরুণ দলটা ইংল্যান্ডে গিয়ে খুব কঠিন পিচে ভাল খেলে এসেছে। ২-২ ড্র করেছে সিরিজ়। আমি নিশ্চিত, ইডেনেও ও রকম পরিবেশ পেলে ওরা ভাল খেলত। ওরা যাতে রান করতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস জোগানো উচিত। তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নতি চাইলে ওদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। ব্যাটারদের শতরান করার সুযোগ দিতে হবে। বোলারদের কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলতে হবে, যাতে উইকেট পেতে ঘাম ঝরাতে হয়। ভারতের হাতে যে দক্ষ বোলার রয়েছে তাতে কোনও পরিবেশেই ওদের উইকেট নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
গম্ভীরের মন্তব্যে সমালোচনা করে স্টেন বলেছেন, “ও বলতে পারল যে পিচে কোনও জুজু ছিল না? আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, ছিল। অনিল (কুম্বলে) একটু আগেই বলছিল, স্পিনারের কোনও বল ব্যাটারের দু’ফুট পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, কোনও বল কিপারের কাঁধে লাগছে। পরেরটা পিছলে যাচ্ছে, প্যাডে লাগছে এবং আপনি আউট। এই পিচে ব্যাট করা খুব শক্ত।”
ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন স্টেন। তবু তাঁর মতে, যে কোনও মুহূর্তে আউট হতে পারতেন দুই ব্যাটারই। স্টেনের কথায়, “চতুর্থ ইনিংসে ওয়াশিংটন এবং বাভুমা খুব ভাল ব্যাট করেছে। তবু ওদের দেখে মনে হয়েছে যে কোনও সময়ে আউট হতে পারে। দু’জনেরই রক্ষণ ভাল বলে ক্রিজ় কামড়ে পড়েছিল। নিশ্চিত ভাবেই এই উইকেটে জুজু ছিল। তিন দিনে কোনও টেস্ট শেষ হয়ে গেলে পিচে জুজু থাকবেই।”
ম্যাচের পর ‘এনডিটিভি’-তে সৌরভ বলেছেন, “ভাল পিচে খেলা উচিত। আশা করি গম্ভীর এ বার বাকিদের কথা শুনতে পাবে। ম্যাচের আগে পিচ নিয়ে ভাবাই উচিত নয় আর। কারণ ব্যাটারেরা যদি ৩৫০-৪০০ রান তুলতে না পারে, তা হলে কোনও দিন টেস্ট জিততে পারবে না। মনে রাখতে হবে, এই কারণেই ওরা ইংল্যান্ডে জিতেছিল। কারণ ওর দলের ব্যাটারেরা স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান তুলতে পেরেছিল। অবশ্যই ভারতের উচিত ভাল পিচে খেলা। গম্ভীরের উচিত নিজের দলের উপর ভরসা রাখা এবং তিন দিনে নয়, পাঁচ দিনে টেস্ট জেতা।”
দরকার হলে গম্ভীরকে তিনিও যে পরামর্শ দিতে পারেন, সেটাও জানিয়ে রেখেছেন সৌরভ। বলেছেন, “ওর জন্য আমার অনেক সময় রয়েছে। ওকে সমীহ করি। ওর মধ্যে লড়াকু মানসিকতা রয়েছে। ভারতের কোচ হিসাবে ওর পারফরম্যান্সও ভাল। তবে ওকে ভাল পিচে খেলতে হবে। কারণ ওর দলে বুমরাহ, সিরাজ, শামির মতো বোলার রয়েছে। কুলদীপ, জাডেজার মতো স্পিনার রয়েছে।”
পুজারা জানিয়েছেন, ভারতের এমন পিচে খেলার দরকারই যেখানে তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। ভারতের প্রাক্তন ব্যাটারের কথায়, “র্যাঙ্ক টার্নার পিচে খেলতে নামলে ভাগ্যের দরকার। ভারতের উচিত আরও ভাল পিচে খেলা। আমি বলছি না যে ঘূর্ণি পিচে খেলো না। তোমরা বরাবরই সেটা করে এসেছ। তবে এমন পিচে খেলো যেখানে অন্তত শতরান করতে পারো। এমন পিচে খেলো যেখানে তোমাদের জেতার সুযোগ থাকবে। যদি দক্ষ হও, সেই দক্ষতাটা দেখাও।”
ইডেনের মতো পিচ বানিয়ে আদৌ যে ভারতের কোনও লাভ হবে না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন পুজারা। বলেছেন, “২০২০ থেকে র্যাঙ্ক টার্নার (যে পিচে বল শুরু থেকেই ঘোরে) পিচে খেলে আসছে ভারত। বেশির ভাগ ম্যাচই শেষ হয়ে গিয়েছে তিন দিনে। ভারতের এমন পিচে খেলা উচিত যেখানে ম্যাচ অন্তত চার, পাঁচ দিনে গড়ায়। প্রথম ইনিংসে যেন ভাল ব্যাট করা যায়। কারণ সকলেই জানে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় পিচে বল ঘুরবে। অন্তত প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাট করুক।”
আরও পড়ুন:
-
কোনও অজুহাত দিতে চাই না, আমরাই চাপ সামলাতে পারিনি, আড়াই দিনে ইডেন টেস্ট হেরে স্বীকারোক্তি পন্থের
-
শুভমনের চোট ঘিরে ধোঁয়াশা অব্যাহত, রবিবারই ভারতের অধিনায়ককে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দল, জানালেন গম্ভীর
-
জঘন্য পিচ বানিয়ে হারল ভারত, হারল ক্রিকেটও! ইডেনে তিন দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৩০ রানে হার, সিরিজ়ে পিছিয়ে পড়ল ভারত
উল্লেখ্য, ইডেনে হারের পর গম্ভীর বলেছেন, “‘ইডেনের পিচ বিপজ্জনক ছিল না। খেলার উপযোগী ছিল। টেম্বা বাভুমা তো রান করল। ওয়াশিংটন সুন্দরও ভাল ব্যাট করল। অক্ষর পটেলও তো খেলল। খেলা যাবে না, এমন উইকেট তো ছিল না। জানি না কেন বার বার স্পিন সহায়ক পিচ বলা হচ্ছে! জোরে বোলারেরাই বেশি উইকেট পেয়েছে এই টেস্টে। ব্যাটারদের টেকনিক, মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় এ রকম পিচে। আমরা পারিনি। এমন পিচে রক্ষণ ভাল হওয়া দরকার।’’
পিচ নিয়ে বিতর্ক উড়িয়ে গম্ভীর আরও বলেছেন, ‘‘আমরা যেমন পিচ চেয়েছিলাম, ঠিক তেমনই পেয়েছি। কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় অত্যন্ত সাহায্য করেছেন। ভাল খেলতে না পারলে তো এমনই হবে। ১২৪ রান তাড়া করতে না পারার কোনও কারণ ছিল না।’’