ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ে পাঁচটা টেস্টের প্রতিটা সেশনে হয়েছে উত্থান-পতন। এই রোলার-কোস্টার সিরিজ়ে যে কোনও টেস্ট যে কোনও দল জিততে পারত। শেষ টেস্টের শেষ দিন সিরিজ়ের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে রোলারের চাকা!
ভারতের দুটো ইনিংস শুরু হওয়ার আগেই হালকা রোলার ব্যবহার করেছিলেন শুভমন গিলেরা। কিন্তু ইংল্যান্ড অন্য পথে চলছে। তারা ভারী রোলার ব্যবহার করছে। ওভালে টেস্ট জিতে সিরিজ় নিজেদের দখলে করতে ইংল্যান্ডের দরকার ৩৫ রান। পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর আগে পিচে ভারী রোলার ব্যবহার করবে ইংল্যান্ড। ওলি পোপদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এই সিদ্ধান্ত কি কাজে দেবে? না ব্যুমেরাং হয়ে ভারতের সুবিধা করে দেবে?
ওভালে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সমাজমাধ্যমে ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে লেখেন, “আমি খুশি হয়েছি যে আমার মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন সময়ের মধ্যে খেলা শুরু করা গেল না। তা হলে দুর্দান্ত একটা টেস্টের শেষটা দেখতে পেতাম। খেলা পঞ্চম দিন শেষ হবে। কিন্তু ইংল্যান্ড ভারী রোলার ব্যবহার করবে। সেটা খেলার ফলে প্রভাব ফেলতে পারে।”
কী এই ভারী রোলার?
টেস্টে খেলা চলাকালীন পিচের উপর দু’ধরনের রোলার ব্যবহার করা হয়। হালকা ও ভারী। আকারে বড় রোলারটা হালকা। ছোট রোলার ভারী। বড় রোলারের চাকার ভিতরের অংশ ফাঁপা থাকে। তাই এর ওজন কম। ছোট রোলারের ক্ষেত্রে উল্টো। তাই এর ওজন বেশি। কখন কোন রোলার ব্যবহার করা হবে সেটা ব্যাট করা দল ঠিক করে।
কখন কখন রোলার ব্যবহার করা যায়?
টেস্টের প্রতি দিনের খেলা শুরু হওয়ার আগে রোলার ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া প্রতি ইনিংসের আগেও রোলার ব্যবহার করা হয়। প্রতি ক্ষেত্রে যে দল ব্যাট করে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোন রোলার ব্যবহার করা হবে।
কত ক্ষণের জন্য রোলার ব্যবহার করা যায়?
প্রতি ক্ষেত্রে সাত মিনিট রোলার ব্যবহার করার নিয়ম। দুটো ইনিংসের মাঝে সাধারণত ১০ মিনিটের বিরতি থাকে। তার মধ্যেই রোলার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দিনের খেলা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে ব্যবহার করা হয় রোলার। ব্যাটিং দল চাইলে সেই সময় আর একটু কমাতে পারে। তবে খেলা শুরুর ১০ মিনিট আগে তা ব্যবহার করতেই হবে।
আরও পড়ুন:
কেন ইংল্যান্ড ভারী রোলার ব্যবহার করছে?
ওভালে দুটো ইনিংসেই ইংল্যান্ড ভারী রোলার ব্যবহার করেছে। চতুর্থ দিনের শুরুতে তার প্রভাব দেখা গিয়েছে। ভারী রোলার ব্যবহার করলে পিচ কিছু ক্ষণের জন্য পাটা হয়ে যায়। অসমান বাউন্স থাকে না। ফলে ব্যাট করতে সুবিধা হয়। চতুর্থ দিনের শুরুতে সেই সুবিধা পেয়েছে ইংল্যান্ড। পাটা পিচে উইকেট তুলতে বোলারদের সমস্যা হয়।
রোলারের যে গুরুত্ব রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জো রুট। চতুর্থ দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত ম্যাচে ভারী রোলার প্রভাব ফেলেছে। পঞ্চম দিনেও আমরা সেটাই আশা করব। দেখা যাক আমাদের সিদ্ধান্ত কাজে লাগে কি না।” ইংল্যান্ডের ভারী রোলার ব্যবহারের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি বললেন, “ওরা একেবারে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারী রোলার ব্যবহার করলে প্রায় এক ঘণ্টা পিচ পুরো পাটা হয়ে যায়। তখন ব্যাট করতে সুবিধা হয়। ইংল্যান্ডের ৩৫ রান দরকার। ওই সময়ের মধ্যেই ওরা জেতার চেষ্টা করবে।”
ভারত অবশ্য পিচ, রোলার এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ। তারা শুধু নিজেদের কাজটা করতে চায়। দলের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল বলেন, “পঞ্চম দিন আমরা ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে নামব। বোলারেরা ঠিক জায়গায় বল রাখার চেষ্টা করবে। চারটে ভাল বল আমাদের দরকার। আশা করি সেটা করতে পারব।” ইংল্যান্ডের ভারী রোলারের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হতে পারে বলে মনে করছেন ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “পিচ কেমন পরিস্থিতিতে আছে সেটা না দেখে বলা সম্ভব নয় যে কোন রোলার ব্যবহার করা উচিত। ভারী রোলারে পিচ পাটা হয় ঠিকই, কিন্তু পিচের নীচে জল জমে থাকলে তা উপরের দিকে উঠে আসতে পারে। ওভালে যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে, তাই এই সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে বোলারদেরও সুবিধা হতে পারে। তাই অনেক সময় এই সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হতে পারে।”
ইংল্যান্ডের ভারী রোলারের ব্যবহার কাজে লাগবে কি না তা সোমবার খেলা শুরু হলে বোঝা যাবে। ক্রিকেটে সাধারণত পিচ নিয়ে আলোচনা চলে। টেস্টে সেই আলোচনা আরও বেশি হয়। কিন্তু ওভালে পিচকে ছাপিয়ে গেল রোলার। আলোচনার কেন্দ্রে খেলা শুরুর আগের সাত মিনিট।