Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
IPL

IPL: নিলাম উঠলে কি কোটিপতির স্বপ্নে লাগাম তরুণদের

অতীতে ‘আনক্যাপ্‌ড’ বিভাগ থেকে কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকে চেন্নাই সুপার কিংস কিনেছিল ৯.২৫ কোটি টাকা দিয়ে। গৌতমের ‘বেস প্রাইস’ কত ছিল?

নিলাম প্রথা থেকে সরে আসতে চলেছে আইপিএল

নিলাম প্রথা থেকে সরে আসতে চলেছে আইপিএল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩২
Share: Save:

আইপিএলের শেষ বড় নিলাম নিয়ে বাজনা বেজে গিয়েছে। তার মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে, এর পরে তা হলে কী?

এত দিন আমেরিকান নকশা অনুসরণ করে নিলাম করা হচ্ছিল। এ বার ইউরোপীয় ফুটবলের ঢংয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা চাইছেন, নিলাম তুলে দিয়ে ট্রান্সফার উইন্ডো চালু করতে। কারও কারও আশঙ্কা, নিলাম তুলে দিলে আইপিএলে এত দিন যে নতুন নতুন মুখদের দুম করে কোটিপতি হয়ে যাওয়ার চমক দেখা যেত, তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অতীতে ‘আনক্যাপ্‌ড’ বিভাগ থেকে কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকে চেন্নাই সুপার কিংস কিনেছিল ৯.২৫ কোটি টাকা দিয়ে। গৌতমের ‘বেস প্রাইস’ কত ছিল? না, ২০ লক্ষ টাকা। ক্রুণাল পাণ্ড্যকে নিলামে তুলে দিয়ে ফের কিনতে গিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে খরচ করতে হয়েছিল ৮.৮ কোটি টাকা। ২০১৬-তে পবন নেগিকে ৮.৫ কোটি টাকায় কিনেছিল দিল্লি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি।

অথবা দু’বছর আগে অনামী সি ভি বরুণকে অবিশ্বাস্য ৮.৪ কোটি টাকায় কিনেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তখন সদ্য তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলে নজর কেড়েছেন বরুণ। ছড়িয়ে যায় তিনিই দেশের নতুন বিস্ময় স্পিনার। নিলাম টেবলে তাঁকে নিয়ে প্রবল টানাটানি শুরু হয়ে যায় পঞ্জাব এবং কলকাতার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত শাহরুখ খানের দলই জেতে এবং বরুণ এখন কেকেআরের অন্যতম প্রধান সদস্য। এতটাই আস্থা রাখা হচ্ছে তাঁর উপরে যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খুব ভাল করতে না পারলেও এ বারে ধরে রাখা চার পুরনো ক্রিকেটারের মধ্যে রয়েছেন বরুণ। এমনকি শুভমন গিলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বরুণকে রেখে দিয়েছে কেকেআর।

প্রশ্ন উঠছে, নিলাম তুলে দেওয়া হলে রাতারাতি শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না বরুণদের সামনে। যদিও যে নকশা অনুসরণ করে ভারতীয় বোর্ড এগোতে চাইছে, সেই ইউরোপীয় ফুটবলে সাম্প্রতিক বড় ট্রান্সফারের মধ্যে তরুণ মুখেরাও রয়েছেন। সাম্প্রতিক সব চেয়ে বড় ট্রান্সফারগুলির মধ্যে রয়েছেন জ্যাক গ্রিলিশ এবং জেডন স্যাঞ্চো। অ্যাস্টন ভিলা থেকে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে ১১৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে (১১৭০ কোটি টাকা) এসেছেন ২৬ বছরের গ্রিলিশ। আর ২১ বছরের স্যাঞ্চো বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডে (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৪৭ কোটি)।

ফুটবলে এই ট্রান্সফার প্রথা একটা বড় ধরনের ব্যবসাও। অনেক দল তাদের অ্যাকাডেমিতে বাছাই করা প্রতিভাদের রেখে ফুটবলার তৈরি করে। তার পরে তৈরি হয়ে গেলে ফুটবল বাজারে চড়া মুল্যে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইংলিশ ফুটবলে যে জিনিসের মাস্টার ছিলেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। অথবা অ্যাকাডেমির স্তরে আয়াখ্‌স আমস্টারডাম।

সমস্যা হচ্ছে, ক্রিকেটে অ্যাকাডেমি কেন্দ্রিক নকশা এখনও নেই। আইপিএলের আবির্ভাবের এত বছর পরেও কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়িই সে ভাবে অ্যাকাডেমি গড়ার দিকে নজর দেয়নি। যার ফলে ইউরোপীয় ফুটবলের খেলোয়াড় তৈরির কারখানার ভাবনাটাই এখানে আসেনি। আবার ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তরফে বক্তব্য হচ্ছে, ইউরোপীয় ফুটবলে অ্যাকাডেমিগুলো আর্থিক মুনাফা পায় তাদের তৈরি ফুটবলার যখন অন্য ক্লাবে যায়। প্রত্যেকটি ট্রান্সফারের জন্য সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিকে টাকা দিতে হয়। এখানে সেই প্রথা চালু না হলে লাভ নেই।

ইউরোপীয় ফুটবলে আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্কাউটরা। ফ্রান্সের পাড়ার মাঠে হানা দিয়ে যেমন স্কাউটরা ‘স্পট’ করেছিলেন পল পোগবাকে। সেই অভ্যাস এখানে গড়ে তোলা যাবে কি না, দেখার। আইপিএলের দলগুলির ‘স্কাউট’ আছেন। তাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেট দেখে বেড়ান। কিন্তু সে রকম শক্তিশালী কিছু নয়। ইউরোপীয় ফুটবলে প্রবল প্রভাবশালী ফুটবলারদের এজেন্টরা। সব চেয়ে বিখ্যাত যেমন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এজেন্ট হর্হে মেন্দেস। ভারতীয় ক্রিকেটেও কি তা হলে বেড়ে যাবে এজেন্টদের প্রভাব? ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের অবশ্য লক্ষ্য, ক্রিকেটারদের দলবদলে আরও বেশি করে ফ্র্যাঞ্চাইজ়িদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। নিলামে যেমন পুরনো ক্লাবকে কোনও ভাবে পুরস্কৃত করার প্রথা নেই। দর হাঁকাহাঁকি হচ্ছে আর সব চেয়ে বেশি অর্থ যে দিতে পারছে, তারাই সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে তুলে নিতে পারছে। সেটা বন্ধ করতে চান তাঁরা। অর্থাৎ, রোহিত শর্মাকে যদি কলকাতা নাইট রাইডার্স তুমি কিনতে চাও, ফেলো কড়ি মাখো তেল। মুম্বইকে ট্রান্সফার ফি দিয়ে নিতে হবে রোহিতকে।

কেউ কেউ বলছেন, ‘আনক্যাপ্‌ড প্লেয়ার’ নিয়ে এত দিন উল্টোপাল্টা দর হাঁকাহাঁকিও হয়েছে। পবন নেগি, কৃষ্ণাপ্পা গৌতমরা আজ কোথায়? ক্রুণাল পাণ্ড্য কী করেছেন এত দর পেয়ে? বরুণের মতো হাতে গোণা কয়েক জনে ফ্র্যাঞ্চাইজির আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। কারও কারও মত, ‘‘বরুণের উপরে এত টাকা লগ্নি করে তাঁকে তৈরি করল কেকেআর। তা হলে নতুন ক্লাবে গেলে তারা কেন আর্থিক মুনাফা পাবে না?’’

নতুন প্রথায় আইপিএলের তারুণ্যের রং উজ্জ্বল হবে না ফিকে? সময় বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL IPL Auction Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE