দুবাইয়ের মাঠে প্রথম ম্যাচ থেকে দাপট দেখিয়েছেন স্পিনারেরা। মন্থর উইকেটে ভারতীয় স্পিনারদের মোকাবিলা করতে পারেনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের সামনে নিউ জ়ল্যান্ড। দুবাইয়ের মাঠে রোহিত শর্মাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন নিউ জ়িল্যান্ডের চার স্পিনার। এই ম্যাচে লড়াই হবে দুই দলের স্পিনারদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত কোন দলের স্পিনারেরা দাপট দেখাবেন?
এ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ পাকিস্তান হলেও ভারত সে দেশে যায়নি। তারা সব ম্যাচ খেলছে দুবাইয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে পাঁচ স্পিনার নিয়েছে ভারত। গৌতম গম্ভীর, অজিত আগরকরদের দল নির্বাচন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুললেও প্রতিযোগিতা শুরু হতেই তাঁরা জবাব পেয়ে গিয়েছেন। দুবাইয়ের মাঠে স্পিনারের কতটা গুরুত্ব তা প্রথম দুই ম্যাচে দেখা গিয়েছে। গরমে পিচ আরও মন্থর হয়ে গিয়েছে। ফলে প্রথম ১০ ওভারের পর পিচে পেসারদের জন্য কিছু থাকছে না। বল উইকেটে পড়ে ব্যাটে আসার আগে থামছে। ফলে শট খেলা সহজ নয় এই মাঠে।
ব্যাটারদের সেই কাজটা আরও কঠিন করে দিয়েছেন ভারতের স্পিনারেরা। প্রথম দুই ম্যাচে এক বিশেষজ্ঞ স্পিনারের পাশাপাশি দুই স্পিনার-অলরাউন্ডার খেলিয়েছে ভারত। কুলদীপ যাদব, অক্ষর পটেল ও রবীন্দ্র জাডেজার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে সমস্যা হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ব্যাটারদের। মাঝের ওভারে বড় শট মারতে সমস্যা হয়েছে। জুটি হলেও রান তোলার গতি ছিল মন্থর। ফলে শেষ দিকে চালিয়ে খেলতে গিয়ে দু’টি ম্যাচেই প্রতিপক্ষ অলআউট হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়েছে ভারত। পাকিস্তানে তেমন ভাল স্পিনার না থাকায় সহজেই ম্যাচ জিতেছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা।
নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিষয়টি অতটা সহজ হবে না। কারণ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের পর সবচেয়ে বেশি স্পিনার রয়েছে এই দলেই। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার নিজে স্পিনার। রাচিন রবীন্দ্রও ভাল স্পিন করেন। পাশাপাশি রয়েছেন গ্লেন ফিলিপ্স ও মাইকেল ব্রেসওয়েল। দুবাইয়ের তুলনায় পাকিস্তানের উইকেট ব্যাটারদের পক্ষে ভাল। লাহোর, করাচিতে অনেক রান হয়েছে। সেই পিচেও নিউ জ়িল্যান্ডের স্পিনারের দাপট দেখিয়েছেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভাল বল করেছেন তাঁরা। সেই কারণে নিউ জ়িল্যান্ডও সহজে দু’টি ম্যাচ জিতেছে। এই পরিস্থিতিতে বলা যেতেই পারে, রবিবার দুবাইয়ে ভারতের স্পিনারদের লড়াই নিউ জ়িল্যান্ডের স্পিনারদের বিরুদ্ধে।
ভারত অবশ্য কিছুটা হলেও সুবিধা পাবে। কারণ, শুরু থেকেই দুবাইয়ের মাঠে খেলছে তারা। ফলে সেখানকার পরিবেশ জাডেজা, অক্ষরেরা বেশি ভাল বুঝবেন। নিউ জ়িল্যান্ড দুবাইয়ে প্রথম ম্যাচ খেলবে। পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে বোলারদের। তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের স্পিনারেরা যে দাপট দেখিয়েছেন, তা নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে না-ও দেখা যেতে পারে। ডেভন কনওয়ে, রবীন্দ্র, কেন উইলিয়ামসন, ড্যারিল মিচেল, টম লাথামেরা স্পিন ভাল খেলেন। তাঁদের বড় অস্ত্র সুইপ ও রিভার্স সুইপ। স্পিনারদের ছন্দ নষ্ট করতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতে পারেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
সাম্প্রতিক সময়ে স্পিনের বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ডও খুব একটা ভাল নয়। লেগ স্পিনের সামনে সমস্যায় পড়েন কোহলি। শ্রেয়স আয়ার ও লোকেশ রাহুল অবশ্য স্পিন ভাল খেলেন। কিন্তু নিউ জ়িল্যান্ডের চার স্পিনারই আঙুলের সাহায্য স্পিন করেন। ফলে খুব বেশি বল না ঘুরলেও উইকেটে একই জায়গায় বল ফেলতে পারেন তাঁরা। এই রকম বলের বিরুদ্ধে বড় শট মারা কঠিন। দৌড়ে রান করতে হয়। নিউ জ়িল্যান্ডের ফিল্ডিংয়ের যা মান, তাতে সেই কাজটাও সহজ নয়।
ভারত অবশ্য সিলেবাসের বাইরের একটি প্রশ্ন রাখতে পারে নিউ জ়িল্যান্ডের সামনে। বরুণ চক্রবর্তী। এই স্পিনারকে নিউ জ়িল্যান্ড খেলেনি। তাঁর বলের বাউন্স বাকিদের থেকে আলাদা। বাউন্স বেশি থাকলে সুইপ ও রিভার্স সুইপ খেলতে সমস্যা হয়। ফলে বরুণের সামনে লড়াইটা সহজ হবে না নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটারদের।
স্পিন ছাড়া দুই দলের পেসারদেরও লড়াই দেখা যাবে এই ম্যাচে। দেখা যাবে ব্যাটারদের লড়াইও। খাতায়-কলমে দু’দলই প্রায় সমান শক্তিশালী। দু’দলেই ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক। ফলে লড়াই হবে টান টান। যে দল জিতবে সেই দল গ্রুপ শীর্ষে শেষ করবে। এখন দেখার, শেষ হাসি কোন দল হাসে?
রবিবার ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে থেকে শুরু খেলা। সরাসরি দেখা যাবে স্টার স্পোর্টস চ্যানেল ও জিয়োহটস্টার অ্যাপে।