ভারতের জার্সিতে মাত্র ন’টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ বারই প্রথম খেললেন, তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। আর প্রথম সাক্ষাতেই ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে নিলেন ভারতীয় মহিলা দলের পেসার ক্রান্তি গৌড়।
মধ্যপ্রদেশের খজুরাহোর কাছে একটি গ্রাম ঘুয়ারা থেকে উঠে এসেছেন এই তরুণী। তাঁর বাবা নির্বাসিত এক পুলিশকর্মী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ক্রান্তিকেই দেখতেন গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে। এর পরে ক্রান্তির বাবা ঠিক করেন, গ্রামেই এক কোচের কাছে মেয়েকে নিয়ে যাবেন।
১৭ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন ক্রান্তি। বাইশ বছর বয়সে এসে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিলেন। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নজর কেড়ে ফেলেছেন। দেশের হয়ে ন’টি একদিনের ম্যাচে ১৮টি উইকেট রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন ক্রান্তি।
রবিবার রাতে সাংবাদিক বৈঠকে ক্রান্তি জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামে জায়ান্ট স্ক্রিন বসিয়ে খেলা দেখানো হয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকে দেখেছেন তাঁর সাফল্য। ক্রান্তির কথায়, ‘‘আজ আমার গ্রামের প্রত্যেকে গর্বিত। তাঁরা অনেক খরচ করে বড় স্ক্রিন লাগিয়ে খেলা দেখেছেন। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। দেশের প্রত্যেকের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এর চেয়ে ভাল অনুভূতি আর কী হতে পারে?’’
ক্রান্তি জানিয়েছেন, ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে মাঠের বাইরে যে চর্চা চলছিল, তাতে কান দিচ্ছিলেন না। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত-পাক ম্যাচ এই প্রথম বার খেলছি। বাইরের কথায় সত্যি কান দিইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি এমনিতেও ভারত-পাক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে খুব একটা চর্চা শুনিনি। আমি নিজের কাজে মনোনিবেশ করি। আমার কাজ ভাল বল করা। বাইরের কথায় কান দেওয়া আমার কাজ নয়।’’
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক হয়েছিল ক্রান্তির। সেই মাঠেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত তিনি। বলেছেন, ‘‘আমি সত্যি খুব খুশি। আমার ও পরিবারের কাছে খুবই গর্বের একটি দিন। শ্রীলঙ্কার মাটিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। সেই মাঠেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলাম। সত্যি খুব ভাল লাগছে।’’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রেণুকা সিংহ ঠাকুর টানা আট ওভারের স্পেল করেছেন। এক জন পেসারকে কেন টানা বল করানো হল? ক্রান্তির উত্তর, ‘‘পিচ থেকে সাহায্য পাচ্ছিলাম। দু’দিকেই সুইং করছিল বল। তাই হ্যারিদি (হরমনপ্রীত) অতিরিক্ত ওভার করিয়েছে পেসারদের দিয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি তো পুরনো বলেও সুইংয়ের সাহায্যে উইকেট পেয়েছি।’’
ক্রান্তি আরও বলেছেন, ‘‘হ্যারিদি বলেছিল পুরনো বলে দু’টো স্লিপ রাখার প্রয়োজন নেই। আমি বলেছিলাম, দু’টি স্লিপ থাকুক। ঠিক দ্বিতীয় স্লিপেই ক্যাচ গেল।’’ ভারতের পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। কী পরিকল্পনা? ক্রান্তির উত্তর, ‘‘এ রকমই জায়গায় বল করে যাব। আশা করি, আমরাই জিতব।’’
বিশ্বকাপ যাত্রায় শুরুটা ভাল করেছে ভারত। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার জেমাইমা রদ্রিগেজ় মনে করেন, এই ছন্দে চলতে থাকলে বিশ্বকাপ জিততেও সমস্যা হবে না তাঁদের।
পাকিস্তানকে হারিয়ে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে জেমাইমা বলেন, “আমি প্রথমেই মিঠুদি (মিতালি রাজ) ও ঝুলুদি (ঝুলন গোস্বামী)-র নাম নেব। যখন প্রথম দলে এসেছিলাম ওরা সবচেয়ে সিনিয়র ছিল। সেখান থেকে সময় বদলেছে। এখন হ্যারিদি (হরমনপ্রীত কৌর) ও স্মৃতি (মন্ধানা) সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছে। ওরা গোটা দলকে এক জায়গায় এনেছে।” জেমাইমা এও বলেন, ‘‘শুধু হ্যারিদি বা স্মৃতির জন্য নয়, মিঠুদি, ঝুলুদি, নীতু ডেভিড ম্যামের জন্য বিশ্বকাপজিততে চাই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)