Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
স্পিন-অস্ত্রেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি ম্যাকালামের
India vs England

বিশাখাপত্তনমে পা রেখেই পিচ দেখতে ছুটলেন রাহুল দ্রাবিড়, ঘূর্ণির সঙ্গে থাকছে বাউন্সও

অন্ধ্রপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তার থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশাখাপত্তনমের বাইশ গজে শুধুমাত্র ঘূর্ণিই থাকছে না। থাকবে বাউন্সও। অর্থাৎ হায়দরাবাদের মতো মন্থর-টার্নার নয়।

An image of Rahul Dravid

পরীক্ষা: বিশাখাপত্তনমে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া দ্রাবিড়। —ফাইল চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৪
Share: Save:

বাঙালিদের পাহাড় বনাম সমুদ্র লড়াই মুহূর্তের মধ্যে থেমে যাবে এই শহরে পা রাখলে। ভারতের প্রাচীন বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম শহর বিশাখাপত্তনম। যেখানে পাহাড় মিশে যায় সমুদ্রের ঢেউয়ে।

সৌন্দর্য বজায় রাখতে প্রত্যেক পাড়ায় একজনকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোনও জায়গায় ময়লা জমে গেলেই কর্পোরেশনকে ফোন করে খবর দেন সেই ব্যক্তি। মুহূর্তের মধ্যে পরিষ্কার করতে চলে আসেন কর্মীরা। রাস্তায় একটি প্লাস্টিকও পড়ে থাকতে দেখা গেল না। শহরের মানুষজন রাস্তায় কোনও নোংরা বস্তু পড়ে থাকতে দেখলে তা তুলে ফেলে দেন ডাস্টবিনে। আর. কে বিচ রোডের পাড় অনেকটা মেরিন ড্রাইভের মতো ঝলমলে। নারকেল গাছের সারি রোদের তাপ থেকে রেহাই দেয় পর্যটকদের। সমুদ্রের উল্টো দিকে পাহাড়ের উপরে রয়েছে একটি লাইটহাউস। পর্যটকদের জন্য যা খোলা থাকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

লাইটহাউস থেকে এক সময় শ্রীলঙ্কার যুদ্ধজাহাজ শনাক্ত করত নৌসেনা। সমুদ্রতটের কাছে আসতে দেখলেই চলত গুলি। আচমকা সেই আক্রমণে দ্রুত পিছিয়ে যেত শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ। হায়দরাবাদে ইংল্যান্ডের আচমকা আক্রমণে ঠিক যে ভাবেই এক ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে ভারতীয় দল। বিশাখাপত্তনমে আবার এক পরীক্ষা। যেখানেও ঘূর্ণি পিচই অপেক্ষা করে রয়েছে।

বিশাখাপত্তনমে পা রেখেই পিচ দেখতে ছোটেন ভারতীয় দলের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়। স্টেডিয়ামে ঢুকে দেখা গেল, স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারক মলয়ের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। কিছুক্ষণ পিচ দেখার পরে রওনা দেন হোটেলের দিকে। দ্রাবিড়ের চোখ-মুখ দেখে বোঝা গেল, রাতে শান্তির ঘুম হয়তো হচ্ছে না। নিজেদের গড়া ফাঁদে নিজেরাই পড়েছেন। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার সব রকম নকশা হয়তো ছকে ফেলেছেন দ্রাবিড়। এ বার মাঠে নেমে ক্রিকেটারদের প্রয়োগ করার অপেক্ষা।

অন্ধ্রপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তার থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশাখাপত্তনমের বাইশ গজে শুধুমাত্র ঘূর্ণিই থাকছে না। থাকবে বাউন্সও। অর্থাৎ হায়দরাবাদের মতো মন্থর-টার্নার নয়। এই পিচে বল পড়ে আরও দ্রুত ঘুরবে। যাতে ভারতের অক্ষর পটেল সবচেয়ে বেশি সাহায্য পান।

২০২১-২২ সফরে ঘূর্ণি ও বাউন্সের জোড়া ফলায় ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন অক্ষর। বিশাখাপত্তনমে থাকছে তাঁরই পছন্দের পিচ। এমন বাইশ গজে আর. অশ্বিনের পাশাপাশি সাহায্য পেতে পারেন কুলদীপ যাদবও। কারণ, কব্জির মোচড়ে বল আরও বেশি ঘোরে। বাউন্সও আদায় করে নেওয়া যায়। ভারত যদি বিপক্ষের উইকেট খোঁজার লক্ষ্যে থাকে, তা হলে কুলদীপ সবচেয়ে ভাল বিকল্প হয়ে উঠতে পারেন। শেষ দু’দিন ধরে পিচের পপিং ক্রিজ় ছাড়া জল দেওয়া হয়নি কোথাও। সংস্থার কেউ কেউ বলছেন, দেড় দিনের মাথায় পিচে ফাটল দেখা যেতে পারে। সেই ফাটলে বল পড়লে সোজাও হয়ে যেতে পারে। নিচুও হতে পারে, আবার এক হাত ঘূর্ণিও দেখা যেতে পারে। কিন্তু পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম-ও। এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে চার স্পিনারকেই নামিয়ে দেওয়া হতে পারে। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সংখ্যাটা চার নয় পাঁচ। কারণ, জো রুট ভারতের মাটিতে কোনও অনিয়মিত স্পিনার নন। সে ক্ষেত্রে ভিসা-সমস্যা কাটিয়ে শোয়েব বশিরের টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তেমনই একটা আভাস দিয়ে রেখেছেন প্রাক্তন নিউ জ়িল্যান্ড অধিনায়ক।

সিরিজ় শুরুর আগে ইংল্যান্ডের অনভিজ্ঞ স্পিন বিভাগ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছু লেখা হয়েছিল। এ বার পাল্টা শুরু করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমও। জো রুটের টেস্টের রানসংখ্যা তুলে ধরে (১১,৪৪৭) লেখা হয়েছে, ‘‘বর্তমান ভারতীয় দলের সকলে মিলেও এত রান করেননি।’’ তথ্যে ভুল নেই। রোহিতের বর্তমান দলের সকলের টেস্ট রান যোগ করলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১০,৭০০। তবে অভিজ্ঞতা যে এ ধরনের পিচে খুব একটা ফারাক গড়ে না, তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ টম হার্টলি। ভারতীয় দলেও এ বার নতুন কেউ তারকা হয়ে উঠতে পারেন কি না সেটাই দেখার।

ভারত এসপার-ওসপার লড়াইয়ের জন্যই ঝাঁপাচ্ছে। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, ঘূর্ণি পিচ তৈরি করে নিজেদের ফাঁদ গড়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটি ম্যাচ হারলেও এই ভারতীয় দল নেতিবাচক মানসিকতা দেখাতে চায় না। নিজেদের শক্তির সদ্ব্যবহার করার জন্য আবারও ঘূর্ণিমঞ্চ চাওয়া হয়েছে।

প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসে। ভারতীয় দলে সদ্য যোগ দেওয়া সরফরাজ় খানও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার। জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছেন মুম্বইয়ের তরুণ। ২০২১-২২ মরসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯৮২ রান করেছিলেন সরফরাজ়। ব্যাটিং গড় ছিল ১২২.৭৫। ২০২২-২৩ মরসুমে ছয় ম্যাচে ৫৫৬ রান। গড় ৯২.৬৬। সম্প্রতি ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ৯৬ ও ১৬১ রান করে এসেছেন ভারতীয় দলে। রাহুলের পরিবর্তে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হলে সিদ্ধান্তটা কি খুব ভুল হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE