ইডেনের পিচ নিয়ে আলোচনা শেষ হচ্ছে না। মঙ্গলবার পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন গৌতম গম্ভীরেরা। বুধবারেও সেই ছবিই দেখা গেল। ভারতীয় দল যখন অনুশীলনে ব্যস্ত তখন দলের কোচিং স্টাফেরা ব্যস্ত সুজনের সঙ্গে আলোচনায়। এখনও কি পিচ নিয়ে মাথাব্যথা কমছে না গম্ভীরদের? নইলে কেন বার বার পিচ নিয়ে আলোচনা চলছে?
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ইডেনে পৌঁছোয় ভারতীয় দল। এ দিন ভারতের অনুশীলন দেখতে অনেকে ভিড় করেছিলেন মাঠে। ক্রিকেটারেরা মাঠে নামার আগেই দেখা যায় প্রধান কোচ গম্ভীর নেমে পড়েছেন। তিনি সরাসরি পিচের কাছে যান। সঙ্গে ছিলেন ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক, বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল ও সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে। কিছু ক্ষণ পর অধিনায়ক শুভমন গিল যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে।
পিচের পাশে দাঁড়িয়ে সুজনের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন গম্ভীরেরা। তাঁদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। পরে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। তবে শুভমনকে বেশ উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায়। মনে হচ্ছিল, পিচ দেখে এখনও সন্তুষ্ট হতে পারছে না ভারতীয় দল।
বুধবার অনুশীলনের আগে পিচ দেখলেও মঙ্গলবার ইডেনে অনুশীলন শেষে পিচ দেখতে গিয়েছিলেন গম্ভীরেরা। মর্কেল এবং শুভমন পিচের একাধিক জায়গায় হাত দিয়ে দেখেন। তার পর ডাকা হয় সুজনকে। তাঁর সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন গম্ভীর-শুভমনেরা। সে সময় তাঁদের দেখে কিছুটা অসন্তুষ্ট মনে হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে, ভারতীয় শিবিরের পক্ষ থেকে যেমন পিচ আশা করা হয়েছিল, ইডেনের পিচ তেমন নয়। তা জানিয়েও দেওয়া হয় ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারককে।
পরে সুজন মেনে নিয়েছেন, ভারতীয় দল আরও বেশি স্পিন সহায়ক পিচ চেয়েছিল। সুজন বলেছেন, ‘‘হোম টিমের সঙ্গে যে ধরনের কথা হয়, তেমনই কথা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পিচে যেমন সব সময় বাউন্স থাকে, ভারতীয় শিবিরও একটু স্পিন সহায়ক পিচ চেয়েছিল। খুব বেশি নয়। যেমন হয়েছে, তার চেয়ে আর একটু বেশি।’’ অতিরিক্ত স্পিন সহায়ক হলে কি ভারতীয় দল সমস্যায় পড়তে পারে? সুজন বলেছেন, ‘‘এটা আমি কী করে বলব। যারা খেলবে, তারা বলতে পারবে। আমাদের কাজ পিচ তৈরি করা। ভাল পিচ দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। আশা করছি, ব্যাট-বলের ভাল লড়াই দেখতে পাবেন দর্শকেরা।’’
ভারতীয় দলে রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব, অক্ষর পটেল, ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো স্পিনার রয়েছে। অন্য দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা স্পিন বল খেলার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ নন। সম্ভবত সে কারণেই ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে আরও বেশি স্পিন সহায়ক পিচ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইডেনের পিচ পরীক্ষা করে খুশি হননি গম্ভীর-শুভমনেরা।
সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে মূল পিচে জল দেওয়া হয়নি। পিচের রং কিছুটা বাদামি। উপরের অংশ বেশ শুকনো এবং শক্ত। কোনও কোনও জায়গায় সামান্য ঘাস রয়েছে। সেগুলিও প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। পিচের আশপাশে মঙ্গলবারও জল দেওয়া হয়েছে। তবে মূল পিচে জল দেওয়া হচ্ছে না। গম্ভীর-শুভমনের সঙ্গে কথা বলার পর সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অন্য কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে সুজনকে।
সৌরভ এবং সুজন দু’জনেই দাবি করেছেন, পিচ যথেষ্ট ভাল। ম্যাচ যত এগোবে, বল তত ঘুরবে। স্পিনারেরা সাহায্য পাবে। সুজন জানিয়েছেন, ইডেনের পিচে সকলেই কিছু না কিছু সাহায্য পাবেন। তিনি বলেছেন, ‘‘পিচ ভালই হবে। স্পোর্টিং হবে। খেলা যত এগোবে, স্পিনারেরা তত সাহায্য পাবে। পিচে ভাল বাউন্সও থাকবে। ব্যাটার-বোলার সকলেই কিছু না কিছু সাহায্য পাবে এই পিচে।’’
আরও পড়ুন:
বুধবার অনুশীলনে নজর কেড়েছেন ঋষভ পন্থ। ইংল্যান্ড সিরিজ়ে চোট পাওয়ার পর সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরেছেন তিনি। এ দিন নেটে যাওয়ার আগে বেশ কিছু ক্ষণ থ্রো-ডাউন নেন পন্থ। পরে নেটেও অনেক ক্ষণ ব্যাট করেন। ব্যাটিং শেষে কিপিং অনুশীলন করতেও দেখা যায় পন্থকে। দেখে মনে হচ্ছিল, সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি। কোনও রকমের সমস্যায় দেখা যায়নি তাঁকে।
শুক্রবার ভারতের প্রথম একাদশ কেমন হবে তা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতের সহকারী কোচ দুশখাতে। বুধবার অনুশীলন শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “সত্যি বলতে ওকে (জুরেল) এই টেস্টের বাইরে রাখা সম্ভব নয়। তবে ১১ জনকেই বেছে নিতে পারব। তাই কাউকে না কাউকে তো বাদ দিতেই হবে। প্রথম একাদশ নিয়ে আমাদের একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে। গত ছ’মাসে ধ্রুব খুবই ভাল খেলেছে। গত সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে জোড়া শতরান করেছে। ওর খেলা প্রায় নিশ্চিত।”
কলকাতা টেস্টে পন্থের খেলার কথা ছিল জুরেলেরই জায়গায়। জুরেলকেও খেলানো হলে বাদ পড়বেন কে? যা আন্দাজ করা হয়েছিল সেটাই বলেছেন দুশখাতে। নীতীশ রেড্ডিই বাদ পড়তে চলেছেন।
দুশখাতে বলেছেন, “দলের জয়ের জন্য কৌশল তৈরি করাই আমাদের আসল কাজ। নীতীশকে নিয়ে আমাদের কৌশলে কোনও বদল হয়নি। অস্ট্রেলিয়ায় ও খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেনি। তবে এই সিরিজ়ের গুরুত্ব যা এবং যে রকম পরিস্থিতির সামনে পড়তে চলেছি, তাতে এই টেস্টে নীতীশের খেলার সম্ভাবনা খুবই কম।”
ইডেনে শুরুর দিকে পেসারেরা সাহায্য পেলেও পরের দিকে ঘূর্ণি দেখা যাবে। কুলদীপ যাদবের খেলা প্রায় নিশ্চিত। বাকি দুই স্পিনারের জন্য লড়াইয়ে রয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর পটেল এবং রবীন্দ্র জাডেজা। তার মধ্যে কোন দু’জনকে বেছে নেওয়া হবে তা অবশ্য খোলসা করতে রাজি হননি দুশখাতে।
সহকারী কোচের কথায়, “আমার মতে, ওয়াশি, অক্ষর এবং জাড্ডুর মধ্যে তিন জন ব্যাটার রয়েছে। তাই আমাদের দলের নমনীয়তা অনেক বেশি। ফলে বেছে নেওয়া কঠিন। তবে এটুকু বলতে পারি আগামী টেস্টে ধ্রুব এবং ঋষভকে একসঙ্গে খেলতে দেখবেন।”