মেয়েদের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্থানের নেপথ্যে অন্যতম কান্ডারি তিনি। চলতি বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকা বার করলে তাঁর নামটাই থাকবে শীর্ষে। তিনি মারিজ়ান ক্যাপ।
বুধবার গুয়াহাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন মারিজ়ান। টপকে গিয়েছেন কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামীর উইকেটসংখ্যা। মেয়েদের বিশ্বকাপে মঙ্গলবার পর্যন্ত উইকেটশিকারিদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন ঝুলন। ৪৩ উইকেট নিয়েছিলেন ৩৪ ম্যাচে। বুধবার আরও এক পেসার সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা অলরাউন্ডারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঝুলন। তিনি মনে করেন, রেকর্ড তৈরিই হয় ভাঙার জন্য। কোনও রেকর্ডই স্থায়ী নয়। আনন্দবাজারকে ঝুলন বলছিলেন, ‘‘মারিজ়ান ক্যাপ অসাধারণ এক জন ক্রিকেটার। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অন্য রকম চাপ থাকে। তার উপরে ওর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা আগে কখনও মেয়েদের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেনি। সে রকম একটি ম্যাচে একা বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়ে বিপক্ষকে ধ্বংস করে দিয়েছে ও। মারিজ়ানকে কুর্নিশ।’’
তাঁর রেকর্ড ভেঙে যাওয়ায় কোনও আক্ষেপ নেই ঝুলনের। বলছিলেন, ‘‘আমরা কেউই রেকর্ডের জন্য খেলি না। দলকে জেতাতে মাঠে নামি। ভাল খেললে রেকর্ড হবেই। কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলে, তার পরিসংখ্যান উন্নত হবেই। রেকর্ড তৈরিই হয় ভাঙার জন্য। আরও এক জন পেসার যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছেছে, এটাই আমারকাছে আনন্দের।’’
বিশ্বরেকর্ড গড়ার পরে মারিজ়ানকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন ঝুলন। কী বলেছেন? তাঁর উত্তর, ‘‘ওকে বললাম যে এখনও অনেকটা পথ এগোতে হবে। থেমে গেলে চলবে না। বিশ্বকাপ ফাইনালেও যেন ও জ্বলে উঠতে পারে। আমার বার্তা পেয়ে খুব খুশি হয়েছে ও। কথা দিয়েছে, ফাইনালেও এই ছন্দধরে রাখবে।’’
ভারতের পরিবেশের সঙ্গে মারিজ়ানের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। ডব্লিউপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন। ঝুলন মুম্বই ইন্ডিয়ানসের মেন্টর। দু’দলের খেলা শেষে ঝুলনের থেকে বেশ কিছু পরামর্শও পেয়েছিলেন মারিজ়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার যে এখন আরও উন্নত, তা ব্যাখ্যা করলেন কিংবদন্তি। তাঁর কথায়, ‘‘ও সাইড-আর্ম অ্যাকশনে বল করে। মেয়েদের ক্রিকেটে যা খুব একটা দেখা যায় না। খুব ভাল আউটসুইং আছে ওর হাতে। এই বিশ্বকাপে দেখলাম ইনসুইংও রপ্ত করে নিয়েছে। উইকেটে পড়েও নড়াচড়া করে ওর বল। ব্যাটাররা কখনওই সহজে শট খেলতে পারে না ওর বিরুদ্ধে।’’
মারিজ়ান নিজেও সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে তাঁকে বৈচিত্র বাড়াতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের মাটিতে এক জন পেসারকে সফল হতে গেলে শুধুমাত্র সুইংয়ের উপরে নির্ভর করে থাকলে চলে না। অফকাটার, লেগকাটার, স্লোয়ার বাউন্সার করতে না পারলে রান আটকানো কঠিন। আমি এই ধরনের ডেলিভারির উপরেই বেশি জোর দিয়েছি।’’
বিশ্বরেকর্ড গড়েও নির্বিকার মারিজ়ান। বলেছেন, ‘‘দল জিতেছে, এটাই বড় কথা। আমি ব্যক্তিগত সাফল্যে বিশ্বাস করি না। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। তবে ফাইনালের আগে আমরা উৎসব করব না।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক মিনিয়ন দু প্রি মুগ্ধ মেয়েদের খেলায়। মারিজ়ানের পাশাপাশি অধিনায়ক লরা উলভার্টের প্রশংসা করেছেন তিনি। মিনিয়ন ফোনে বলছিলেন, ‘‘মারিজ়ান ও লরা আমাদেরদলের দুই স্তম্ভ। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনালে তুলেছে। ওরা জানে বড় ম্যাচে কী ভাবে জ্বলে উঠতে হয়। দায়িত্ব নিয়ে ফাইনালে তুলেছে দলকে।’’
মিনিয়ন মনে করেন, দলীয় সংহতি ছাড়া এই জয় সম্ভব হত না। বলছিলেন, ‘‘আমরা বড় দলকে হারিয়েছি। ভারতের বিরুদ্ধে জিতেছি। ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি। ফাইনালে ওঠার জন্য সব করেছে মেয়েরা। লরার হাতে এ বার ট্রফি দেখতে চাই। দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তোলার নেপথ্যে ওর অবদান সব চেয়ে বেশি। এ বার বিশ্বকাপ জিতে এই উত্থানকে স্মরণীয় করে রাখুক লরা।’’
পুরুষদের ক্রিকেটেও দক্ষিণ আফ্রিকা সাফল্যের চূড়ায়। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানার-আপ। এ বার টেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। লরার কাছে সুযোগ এই ট্রফি জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বর্ণযুগে পৌঁছে দেওয়ার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)