আগাম আন্দাজ করেছিল পুলিশ। সতর্কও করেছিল তারা। তবু এড়ানো গেল না দুর্ঘটনা। এই ঘটনার দায় কার? বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্ট হয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হয়েছে তদন্ত। তার মাঝেই প্রকাশ্যে এসেছে পুলিশের একটা চিঠি। তাতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। তার পরেও কেন ব্যবস্থা নিল না প্রশাসন?
৩ জুন আইপিএল জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সে দিনই বিরাট কোহলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বেঙ্গালুরুতে সমর্থকদের সঙ্গে উৎসব করার পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। ৪ জুন বেঙ্গালুরু পুলিশের ডেপুটি কমিশনার এমএন কারিবাসবন গৌড়া একটা চিঠি লিখেছিলেন। ‘ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস’-এর সচিব জি সত্যবতীকে লেখা সেই চিঠিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছিলেন গৌড়া। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ একটা রিপোর্টে এই কথা জানিয়েছে।
চিঠিতে গৌড়া লেখেন, “বিধান সৌধ ও চিন্নাস্বামীর বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভি়ড় জমবে। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা কম। ফলে ভিড় সামলানো পুলিশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।” চিন্নাস্বামীর বাইরে ১১ জনের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছিলেন, স্টেডিয়ামের বাইরে প্রায় দু’লক্ষ সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। জানা গিয়েছে, স্টেডিয়ামের বাইরে ৫০০ পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা ভিড় সামলাতে পারেননি। এখন এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ যখন আগাম আন্দাজ করেছিল যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে, তা হলে আগে থেকে তারা বন্দোবস্ত করল না কেন? তা হলে অন্তত ১১টা প্রাণ চলে যেত না।
১৭ বছর অপেক্ষার পর দল আইপিএল জেতায় বেঙ্গালুরুতে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল গত মঙ্গলবার রাত থেকেই। বুধবার কোহলিরা শহরে পৌঁছালে সেই উৎসব আরও বাড়ে। কোহলি এবং আরসিবি তারকাদের দেখতে বিপুল জনসমাগম হয় বিধান সৌধ ও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। বৃষ্টির কারণে বিধান সৌধের অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ফলে চিন্নাস্বামীর বাইরে ভিড় বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। ফলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০।
আরও পড়ুন:
এই ঘটনায় আরসিবি এবং কর্নাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে কর্নাটক হাই কোর্ট। গ্রেফতারির আশঙ্কা করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কর্নাটক ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। সেই মামলায় শুক্রবার বিচারপতি এসআর কৃষ্ণ কুমার নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। তবে যে সব আধিকারিকের নাম এই মামলায় জড়িয়েছে, তাঁদের আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন বিচারপতি। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কর্নাটকের গোয়েন্দাপ্রধানকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিবকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
গ্রেফতার হয়েছেন আরসিবির বিপণন (মার্কেটিং) বিভাগের প্রধান নিখিল সোসালে। বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই যাওয়ার পথেই গ্রেফতার হন তিনি। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। গত ৪ জুন আরসিবির বিজয়োৎসব আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ‘ডিএনএ এন্টারটেনমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের’ তিন জন আধিকারিককেও আটক করা হয়েছে। কোহলির বিরুদ্ধে থানায় গিয়েছেন বেঙ্গালুরুর এক সমাজকর্মী। তার মধ্যেই এই চিঠি প্রকাশ্যে আসায় আবার আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। পুলিশ আগাম আন্দাজ করার পরেও কেন এই দুর্ঘটনা হল সেই প্রশ্ন তুলছেন সকলে।