কানপুর টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
সাকুল্যে আড়াই দিনের টেস্ট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাতেও জয়ের জন্য ঝাঁপাল ভারত।
মার, মার এবং মার। সাদা জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট! ওভার প্রতি রান উঠল ৮.২২। রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলদের ব্যাটিং দেখে ভ্রম হতে বাধ্য। আইপিএলের রিটেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতেই ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা হাত খুলতে শুরু করলেন। নিজেদের দলের কর্তাদের হয়তো বার্তা দিয়ে রাখলেন রোহিতেরা।
কানপুরের ২২ গজে ভারতীয়েরা ব্যাট হাতে যে তাণ্ডব দেখালেন, তাতে হার মানতে বাধ্য ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’। ভারতীয় ক্রিকেটে রাহুল দ্রাবিড় জমানা শেষ। অতীত ধ্রপদী ব্যাটিং। গৌতম গম্ভীরের কোচিং বদলে দিয়েছে ব্যাটারদের গিয়ার। আরও সাহসী। আরও আগ্রাসী। প্রতিপক্ষ, পিচ, বোলার এ সব নিয়ে ভাবনা নেই। বল দেখ, ব্যাট চালাও। গৌতি দর্শনে টেস্ট ক্রিকেটেও টি-টোয়েন্টির গতি। বৃষ্টি আড়াই দিন নষ্ট করলেও ১২ পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করা যাবে না। কানপুরের ২২ গজে পড়ে প্রায় গড়িয়ে যাওয়া বলই রোহিত, যশস্বীদের ব্যাটে লেগে উড়ে গেল মাঠের বাইরে। এক বার নয়। দু’বার নয়। বার বার। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দলগত দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০ রানের নজির তৈরি হল।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ২৩৩ রানে শেষ হওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ নিয়ে মাঠে নামলেন ভারতীয়েরা। ইনিংসের প্রথম দু’টি বল দেখে খেললেন যশস্বী। তার পর অন্য খেলা দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। যশস্বী পর পর তিনটি চার মারলেন হাসান মাহমুদকে। দ্বিতীয় ওভারে হাত খুললেন রোহিত। খালেদ আহমেদের প্রথম দু’টি বলই উড়ে গেল গ্যালারিতে। প্রথম আট বলে ভারতীয় ইনিংসের সুর বেঁধে দিলেন দুই ওপেনার। সেই সুরেই ধরে রাখল কোহলি, শুভমন, রাহুলদের উইলো। আউট হওয়ার পরোয়া করলেন না কেউই।
সুনীল গাওস্করের রক্ষণশীল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা বলেন টেস্ট ক্রিকেটে ভাল ফল করতে হলে একটা ইনিংসে অন্তত ৯০ ওভার ব্যাট করা দরকার। তাঁর সামনেই রোহিতেরা দেখালেন টেস্ট জেতার চেষ্টার জন্য ৩৫ ওভার (ভারতের ইনিংস ৩৪.৪ ওভারের) ব্যাট না করলেও চলে। গম্ভীরের হাতে পড়া ভারতীয় দল আসলে আগামী প্রজন্মের ক্রিকেট খেলতে শুরু করে দিয়েছে। রোহিত ১১ বলে ২৩ রান করে আউট হলেন। তার আগে তিনটি ছক্কা, একটা চার মারলেন। তিন নম্বরে নেমে শুভমন ৩৯ রান করলেন ৩৬ বলে। চারটি চার, একটি ছক্কা এল তাঁর ব্যাট থেকে। আর এক ওপেনার যশস্বী ৭২ রান করতে নিলেন ৫১ বল। ১২টি চার আর ২টি ছক্কায় সাজালেন ইনিংস। চার নম্বরে নেমে রান পেলেন না পন্থ। আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিলেন ১১ বলে ৯ রান করে। কোহলির ৩৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ৪টে চার এবং একটি বিরাট ছক্কা। ধরে খেলতে পছন্দ করা রাহুলও নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারলেন না ‘গৌতিবল’ ক্রিকেটের মাঝে। ৪৩ বলে ৬৮ রান করলেন ৭টি চার এবং ২টি ছয়ের সাহায্যে। টেস্ট ক্রিকেটেই এমন ব্যাটিং। কী করবেন আইপিএলে! লখনউ সুপার জায়ান্টসের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কা নিশ্চই রিটেনশন তালিকায় তাঁর নাম লিখতে ভুল করবেন না।
৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ছেড়ে দিলেন রোহিত। সম্ভবত শেষ টেস্ট খেলতে নামা শাকিব আল হাসানকে ভরিয়ে দিল কানপুরের ২২ গজ। ৭৮ রানে ৪ উইকেট নিলেন। আগামী দিনের শাকিব বলে যাঁকে চিহ্নিত করা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই মেহদি হাসান মিরাজও ৪ উইকেট নিলেন ৪১ রান খরচ করে। বাংলাদেশের বোলারদের সাফল্য বলতে এটুকুই। ভারতীয়দের রান তোলার গতি এক ওভারের জন্যও আটকাতে পারেননি তাঁরা। পাঁচ জন বোলারের কেউ একটাও মেডেন ওভার পাননি। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের রান অবশ্য আগেই টপকে গিয়েছিল ভারত।
মোমিনুল হকের অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংসের সুবাদে নাজমুল হোসেন শান্তেরা করেন ২৩৩ রান। ৭৪.২ ওভারে শেষ হয়ে যায় তাঁদের ইনিংস। সোমবার মোমিনুল ২২ গজের এক দিন আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে ধারাবাহিক ভাবে পড়ল বাংলাদেশের ইনিংস। মেহদির ২০ রানের ইনিংসে কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা থাকলেও বাকিরা ভারতীয় বোলারদের সামলাতে পারলেন না। ৫০ রানে ৩ উইকেট নিলেন যশপ্রীত বুমরা। ৫৭ রানে ২ উইকেট মহম্মদ সিরাজের। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ২ উইকেট এল ৪৫ রান খরচ করে। আকাশ দীপ ২ উইকেট পেলেন ৪৩ রানে। আর রবীন্দ্র জাডেজার ২৮ রানে ১ উইকেট।
সোমবার শেষবেলায় বাংলাদেশকে আবার ব্যাট করতে নামতে হল। দিনের শেষে নাজমুলদের রান ২ উইকেটে ২৬। জ়াকির হাসান (১০) এবং হাসানকে (৪) ফিরিয়ে দিয়েছেন অশ্বিন। উইকেটে আছেন শাদমান ইসলাম (৭) এবং মোমিনুল (শূন্য)। বাংলাদেশ এখনও ২৬ রানে পিছিয়ে। মঙ্গলবার সারা দিন ব্যাট করে হার বাঁচাতে পারবেন সফরকারীরা? রোহিতেরা কিন্তু আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন গ্রিন পার্কের পড়ন্ত সূর্যের আলোয়।
সারা দিনে খেলা হল ৮৫ ওভার। রান হল ৪৩৭। উইকেট পড়ল ১৮টি। প্রথম দিন খেলা হয়েছিল ৩৫ ওভার। ম্যাচের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন একটা বলও হয়নি। চতুর্থ এবং পঞ্চম দিন যতটা সম্ভব বেশি খেলানোর চেষ্টা করছেন আম্পায়ারেরা। সব মিলিয়ে আড়াই দিনের বেশি খেলার সুযোগ নেই কানপুরে। তবু জয়ের আশায় ভারতীয় দল। চাপে বাংলাদেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy