Advertisement
E-Paper

মহিলাদের বিশ্বকাপ জিতে বোর্ডের কাছে বিশেষ আবদার বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার দীপ্তির, পুরস্কার উৎসর্গ করলেন বাবা-মাকে

বিশ্বকাপের ফাইনালে অর্ধশতরান এবং পাঁচ উইকেট। মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স উপহার দিলেন দীপ্তি শর্মা। বিশ্বকাপ জিতে বোর্ডের কাছে একটি আবদার করলেন তিনি। কী সেই আবদার?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০০:৫৪
cricket

উইকেট নিয়ে দীপ্তির উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।

২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে তিনি খেলেছিলেন। না ব্যাট, না বল— কোনও ভাবেই কিছু করতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সে দিন। আট বছর পর সব সুদে-আসলে পুষিয়ে দিলেন দীপ্তি শর্মা। রবিবার নবি মুম্বইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট হাতে অর্ধশতরান, তার পর বল হাতে পাঁচ উইকেট— ফাইনাল সেরা ক্রিকেটারের লড়াইয়ে অল্পের জন্য হয়তো শেফালি বর্মার কাছে হেরে গেলেন। কিন্তু বাকি সকলকে ছাপিয়ে প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন দীপ্তি। বিশ্বসেরা হয়েই বোর্ডের কাছে একটি বিশেষ আবদার করে বসলেন তিনি। পাশাপাশি বিশ্বকাপের ক্রিকেটারের পুরস্কার উৎসর্গ করলেন বাবা-মাকে।

দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বকাপ খেললেও এত দিন ট্রফি জিততে পারেনি ভারত। দু’বার ফাইনাল খেললেও কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব রয়েই গিয়েছিল। সেই দূরত্ব মিটল রবিবার। বিশ্বকাপ জিতে দীপ্তি বললেন, “২০১৭ সাল থেকেই দেখতে পাচ্ছি মহিলাদের ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন আসছে। বিশ্বকাপ জেতার পর হয়তো আরও অনেক পরিবর্তন আসবে। আশা করি আমরা আরও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। এই পুরস্কার বাবা-মাকে উৎসর্গ করছি।”

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন দীপ্তি। তাঁর একমাত্র অনুপ্রেরণা দাদা, সুমিত শর্মা। পেস বোলার হিসেবে উত্তরপ্রদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছেন সুমিত। দাদা যখনই অনুশীলনে যেতেন, পিছু পিছু দেখতে যেতেন দীপ্তি। এক দিন অনুশীলনের সময় দীপ্তির কাছে একটি বল আসে। দূর থেকে তাঁর দাদার হাতে বলটি ছুড়ে দেন দীপ্তি। মাত্র ১২ বছর বয়সে বোনের হাতের জোর দেখে বিস্মিত হন দাদা। পরের দিন থেকে কানপুরের একলব্য স্পোর্টস স্টেডিয়ামে ছোট বোনকে অনুশীলনে নিয়ে আসেন সুমিত। বাকিটা ইতিহাস।

দীপ্তির প্রতিভা নজর কাড়ে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার হেমলতা কলার। মাত্র ১৩ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে নেট করতে শুরু করেন দীপ্তি। সেখানেও বাকিদের ছাপিয়ে গিয়ে রাজ্য দলে সুযোগ পান এই তরুণী। জুনিয়র স্তরে পারফর্ম করে ডাক পান উত্তরপ্রদেশের সিনিয়র ও ভারতীয় ‘এ’ দলে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতীয় জার্সিতে অভিষেক হয় তাঁর।

দীপ্তির দাদা সুমিত, তত দিনে ক্রিকেট ছেড়ে চাকরি করছেন। বোনের উন্নতি তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করে যে, চাকরি ছেড়ে তিনি ফিরে আসেন আগরায়। বোনের জন্য ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করার লক্ষ্যে। যাতে কোনও ভাবে পরিকাঠামোর দিক থেকে সমস্যা না হয় দীপ্তির। ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ান ডে-তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তাঁর। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে ১৮৮ রান করেছিলেন ২০১৭ সালে। সেই ইনিংসের পর থেকেই দীপ্তিকে চিনতে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেটমহল। ২০১৭ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ২১৬ রান করার পাশাপাশি ১২টি উইকেটও ছিল এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ও অফস্পিনারের।

চলতি বিশ্বকাপে ৯টি ম্যাচ খেলে তিনটি অর্ধশতরান-সহ ২১৫ রান করেছেন দীপ্তি। পাশাপাশি ২২টি উইকেট নিয়েছেন, যা প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ। পাশাপাশি পুরুষ এবং মহিলাদের বিশ্বকাপ মিলিয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে দীপ্তি একটি বিশ্বকাপে ২০০ রান এবং ২০টি উইকেট পেয়েছেন। একই সঙ্গে বিশ্বকাপের নকআউটে প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে অর্ধশতরান এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

ভারতীয় ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হওয়া সহজ নয়। দলের প্রয়োজনে দীপ্তিকে নানা সময়ে নানা জায়গায় নামতে হয়েছে। কী ভাবে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন? দীপ্তির উত্তর, “যেখানেই খেলি না কেন বা পরিস্থিতি যা-ই থাকুক না কেন, আমি নিজের খেলা সব সময় উপভোগ করি। আজও সময়টা খুব উপভোগ করেছি। এত বড় মঞ্চে অলরাউন্ডার হিসাবে নিজের সেরাটা দেওয়া, এই অসাধারণ অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়।”

এ দিন এক ওভারে দীপ্তির দু’টি উইকেটই খেলা ঘুরিয়েছে। শতরান করা লরা উলভার্ট এবং ক্লো ট্রায়নকে ফিরিয়েছেন একই ওভারে। তা নিয়ে দীপ্তির মন্তব্য, “লরা দারুণ ইনিংস খেলেছে। তবে আমরা সব সময়েই শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। একে অপরকে উৎসাহ দিয়েছি। চাঙ্গা করেছি। নিজেরা সব সময় আলোচনা করেছি ম্যাচটাকে শেষ বল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার। নিজেদের সেরা বলটা করার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা সফল।”

তবে বিশ্বকাপের সেরা পুরস্কার যে পাবেন এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না দীপ্তির। বলেছেন, “সত্যি বলতে আমার কাছে এটা একটা স্বপ্ন। এই আবেগ কাটিয়ে ওঠা সত্যিই কঠিন। বিশ্বকাপ ফাইনালে অবদান রাখতে পেরেছি এটা ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে। সতীর্থেরা না থাকলে অবশ্য কোনও ভাবেই এটা সম্ভব হত না।”

২০১৭ বিশ্বকাপের পরেই দীপ্তি চলে আসেন বাংলায়। পরের কয়েক বছর বাংলার হয়েই রাজ্য স্তরের ম্যাচ খেলেছেন। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকেই ট্রফি জিততে শুরু করে বাংলা। ২০১৯-এ অনূর্ধ্ব-২৩ ওয়ান ডে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন দীপ্তিরা। সে বছরই সিনিয়র ওয়ান ডে-তেও চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা ঝুলন গোস্বামীর নেতৃত্বে। প্রতিযোগিতায় ৪৮৭ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন দীপ্তি।

Deepti Sharma ICC Women\'s ODI World Cup 2025 BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy