আট দিন পর শনিবার থেকে আবার শুরু হচ্ছে আইপিএল। আবার ফিরতে চলেছে দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগের উত্তেজনা এবং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল বন্ধ হওয়ার আগেই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল তিনটি দল। ফলে এখন সাতটি দল রয়েছে প্লে-অফের দৌড়ে। কারা এগিয়ে রয়েছে প্রথম চারে যাওয়ার লক্ষ্যে? বেশ কয়েক জন বিদেশি ক্রিকেটারের আর আইপিএল খেলার সম্ভাবনা নেই। অনেকেই অনিশ্চিত। কারণ, ১১ জুন থেকে শুরু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়াও ২৯ মে থেকে শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের সাদা বলের সিরিজ়। ফলে বিদেশিদের না পেলে সেটাও প্রভাব ফেলবে দলগুলির পারফরম্যান্সে।
গুজরাত টাইটান্স (১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট)
এই মুহূর্তে আইপিএলের ‘ফার্স্ট বয়’। প্লে-অফ থেকে মাত্র একটি জয় দূরে। ১৮ পয়েন্ট পেলেই প্রথম চারে থাকা নিশ্চিত হবে। তবে বাকি তিনটি ম্যাচেই তারা হারলে ছিটকেও যেতে পারে। কারণ আরও চারটি দলের সম্ভাবনা রয়েছে ১৭ বা তার বেশি পয়েন্ট অর্জন করার। শেষ দু’টি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলায় সুবিধা গুজরাতের। এ মরসুমে অহমদাবাদে ৪-১-এ এগিয়ে তারা। রান রেটেও দ্বিতীয় স্থানে।
বিদেশিদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে গুজরাত। সেই দলে ইংল্যান্ডের জস বাটলার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের শেরফানে রাদারফোর্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা এবং জেরাল্ড কোয়েৎজ়ি রয়েছেন। দেশের হয়ে খেলার কথা ভেবে আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নিতে পারেন তাঁরাও। যদিও শোনা যাচ্ছে বাটলার এবং কোয়েৎজ়ি আইপিএল খেলতে আসবেন।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট)
গুজরাতের মতো বেঙ্গালুরুও একটি ম্যাচ জিতলেই প্লে-অফে চলে যাবে। বাকি তিনটি ম্যাচ হারলেও প্লে-অফে যেতে পারে, যদি বাকি ফলাফল তাদের পক্ষে যায়। তবে দু’টি ম্যাচ জিতলেও প্রথম দু’য়ে শেষ করার ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। কারণ গুজরাত এবং পঞ্জাব ২০ বা তার বেশি পয়েন্টে শেষ করতে পারে। গুজরাত এখন রান রেটে এগিয়ে। পঞ্জাব বাকি তিনটি জিতলে ২১ পয়েন্টে পৌঁছোবে।
বিদেশিদের পাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে আরসিবি। দলের পেস আক্রমণ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আইপিএলের পরেই রয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে খেলার প্রস্তুতি নেবেন অস্ট্রেলিয়ার জস হেজলউড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার লুঙ্গি এনগিডি। ফলে এই দুই পেসার হয়তো আর ভারতে আইপিএল খেলার জন্য ফিরবেন না। এর মধ্যে হেজলউডের চোট রয়েছে। ফলে তাঁর ফেরার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। আইপিএলের পর ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এক দিনের সিরিজ় রয়েছে। সেই সিরিজ়ের প্রস্তুতির জন্য না-ও আসতে পারেন রোমারিয়ো শেফার্ড এবং টম বেথেল। ইংল্যান্ড দলে নেই লিয়াম লিভিংস্টোন। ফলে তিনি আসতে পারেন। কিন্তু চার-পাঁচ জন বিদেশি ক্রিকেটারকে না পেলে সমস্যায় পড়তে হবে বেঙ্গালুরুকে।
পঞ্জাব কিংস (১১ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট)
দু’টি ম্যাচ জিতলে তবেই প্লে-অফ নিশ্চিত হবে পঞ্জাবে। এই মুহূর্তে প্লে-অফে ওঠার জন্য ১৭ পয়েন্ট নিশ্চিত নয়। কারণ, পঞ্জাব যদি রাজস্থানকে হারায় এবং দিল্লি ও মুম্বইয়ের কাছে হারে, দিল্লি যদি গুজরাতকে হারায় এবং মুম্বইয়ের কাছে হারে, তখন বেঙ্গালুরু, গুজরাত, মুম্বই, দিল্লি এবং পঞ্জাব — সব ক’টি দলই শেষ করবে ১৭ বা তার বেশি পয়েন্টে। তবে দিল্লিকে হারিয়ে বাকি দু’টি ম্যাচ হারলেও ১৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্জাব প্লে-অফে যেতে পারে, যদি মুম্বই এবং দিল্লির মধ্যে যে কোনও একটি দল ১৭ বা তার বেশি পয়েন্টে শেষ করে। বাকি সব ম্যাচ হারলেও পঞ্জাব প্লে-অফে যেতে পারে। তার জন্য দিল্লিকে দু’টি ম্যাচ হারতে হবে, লখনউকে অন্তত দু’টি ম্যাচ জিততে হবে। তার পর পঞ্জাব, দিল্লির মধ্যে যাদের রান রেট বেশি থাকবে তারা প্লে-অফে যাবে।
পঞ্জাব পাবে না দুই অস্ট্রেলীয় জস ইংলিস এবং মার্কাস স্টোইনিসকে। দু’জনেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রস্তুতি নেবেন। তারা না-ও পেতে পারে মার্কো জানসেনকে। বাঁহাতি পেসারকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তিনিও আইপিএলে খেলতে না-ও আসতে পারেন।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট)
গুজরাতের কাছে হারলেও মুম্বইয়ের ভাগ্য এখনও নিজের হাতে রয়েছে। শেষ দু’টি ম্যাচে জিতলে প্লে-অফ নিশ্চিত হবে। একটিতে জিতলে বাকি দলগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে দু’টিতেই হারলে তারা ছিটকে যাবে। তবে রান রেট (১.১৫৬) ভাল থাকায় মুম্বই বাড়তি সুবিধা পেতে পারে।
মুম্বই দলে বিদেশিদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রায়ান রিকেলটন এবং করবিন বশ। তাঁদের দু’জনকেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে সেই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য আইপিএল খেলতে না-ও আসতে পারেন তাঁরা।
দিল্লি ক্যাপিটালস (১১ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট)
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট পেয়েছে। ১৫ পয়েন্ট পেলেও প্লে-অফের দৌড়ে থাকতে পারবে, যদি বাকি দলগুলির ফল তাদের পক্ষে যায়। ১৭ পয়েন্ট পেলেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনটি ম্যাচেই জিতলে তাদের প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে যাবে। যদিও শেষ পাঁচটি ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় পাওয়া দিল্লির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোই আসল চ্যালেঞ্জ।
জানা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার মিচেল স্টার্ক আসছেন না। নেই জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্কও। নতুন নিয়ম কাজে লাগিয়ে দিল্লি দলে নিয়েছে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানকে।
কলকাতা নাইট রাইডার্স (১২ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট)
কলকাতা প্রায় বিদায়ের মুখে। অঙ্কের হিসাবে অবশ্য ক্ষীণ সম্ভাবনা বেঁচে। তারা সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্টে যেতে পারে। কিন্তু দু’টি দলের ইতিমধ্যেই ১৫ পয়েন্টের বেশি রয়েছে। পঞ্জাবের ১৫ পয়েন্ট রয়েছে, তিনটি ম্যাচও বাকি। ধরা যাক সেই তিনটি দল প্লে-অফে গিয়েছে এবং কেকেআরেরও ১৫ পয়েন্ট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মুম্বইকে বাকি দু’টি ম্যাচ হারতে হবে। যেহেতু মুম্বইয়ের একটি ম্যাচ দিল্লির সঙ্গে, সেহেতু দিল্লি সেটি জিতলে ১৫ পয়েন্টে পৌঁছোবে। তখন কেকেআরকে নেট রান রেটে বাজিমাত করতে হবে। অন্য দিকে, পঞ্জাব বাকি তিনটি ম্যাচেই হারলে, মুম্বইয়ের ১৫ পয়েন্টের বেশি হবে। তখন দিল্লি, পঞ্জাব এবং কলকাতার মধ্যে রান রেটের বিচারে চতুর্থ স্থানাধিকারী ঠিক হবে।
বিদেশিদের নিয়ে সবচেয়ে কম সমস্যায় কেকেআর। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলে নেই সুনীল নারাইন এবং আন্দ্রে রাসেল। তাঁরা দেশের হয়ে এখন আর খেলেন না। রভমন পাওয়াল সুযোগ পাবেন কি না নিশ্চিত নন। তাঁরা তিন জনেই আইপিএল খেলতে ভারতে আসতে পারেন। বাকি বিদেশিদের মধ্যে স্পেনসার জনসন অস্ট্রেলিয়া দলে নেই। ইংল্যান্ডের মইন আলি, দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি’কক অবসর নিয়েছেন। ফলে তাঁদের খেলতেও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
লখনউ সুপার জায়ান্টস (১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট)
টানা তিনটি ম্যাচ হেরে বেশ চাপে রয়েছে লখনউ। শেষ পাঁচটির মধ্যে চারটি ম্যাচেই হেরেছে তারা। আপাতত লক্ষ্য বাকি তিনটি ম্যাচে জিতে ১৬ পয়েন্টে শেষ করা। পাশাপাশি তাদের প্রার্থনা থাকবে যাতে ফর্মে থাকা এক-দু’টি দল হারতে থাকে। তবে লখনউ আর একটি ম্যাচ হারলেই ছিটকে যাবে।
বাকি তিন দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (১১ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট), রাজস্থান রয়্যালস (১২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট) এবং চেন্নাই সুপার কিংস (১২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট)-এর প্লে-অফে ওঠার আর সুযোগ নেই।