১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। ঠিক এক সপ্তাহের ব্যবধানে এশিয়া কাপে আবার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তান। মাঝের এই সাত দিনে ঘটে গিয়েছে অনেক কিছুই। করমর্দন-বিতর্কে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে কাঠগড়ায় তোলা, এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নেওয়ার হুমকি, বিস্তর টালবাহানার পর এক ঘণ্টা দেরিতে আমিরশাহি ম্যাচ খেলতে নামা, দেশের স্বার্থে তিন ‘শত্রু’ মহসিন নকভি, নাজম শেঠি এবং রামিজ় রাজার এক হয়ে বৈঠক করা— পাকিস্তান ক্রিকেটে যত রকম পরিস্থিতি দেখা সম্ভব সবই দেখা গিয়েছে। তার পরেও করমর্দন-বিতর্কের রেশ কাটেনি। যতটা বোঝা গিয়েছে, রবিবারও দুই দলের অধিনায়ক বা ক্রিকেটারদের করমর্দন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এশিয়া কাপের সূচি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তিনটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হওয়ার নীল নকশা ছকা হয়ে গিয়েছে। তার প্রথম ম্যাচটি হয়েছে। দ্বিতীয়টি হবে রবিবার। তৃতীয়টি হতে পারে পরের রবিবার, দুই দল এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলে। তার জন্য আগামী সপ্তাহটি পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান যা যা হুমকি দিয়েছিল তা সত্যি হলে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হওয়ারও অবকাশ থাকত না। তা নিশ্চিত হওয়ার পর নজর ক্রিকেটে ফিরেছে ঠিকই। তবে বিতর্কের রেশ যে পুরোপুরি থিতিয়ে গিয়েছে তা বলার মতো সময় আসেনি।
গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচেই পাকিস্তানের ব্যাটিং ব্যর্থতা বোঝা গিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে তো বটেই, ওমান এবং আমিরশাহিকে হারাতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে সলমন আঘাদের। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে যে ভারতের বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব নয় তা বোঝা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা বলেই রবিবারের ম্যাচে পুরোপুরি পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা বিশেষ নেই। তিনটি ম্যাচেই জিতে সুপার ফোরে খেলতে নামছে ভারত। পাকিস্তান দু’টিতে জিতেছে।
ভারত যে কলার তুলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে নামবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। ওমানের বিরুদ্ধে শুক্রবার বোঝা গিয়েছে, ভারতীয় দলে জসপ্রীত বুমরাহ কতটা অপরিহার্য। হতে পারে তিনি এশিয়া কাপে মাত্র তিনটি উইকেট পেয়েছেন। তবু বুমরাহকে প্রথম একাদশে রাখা মানে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামা। কয়েকটি খারাপ শট না খেললে ওমান হারিয়েই দিতে পারত ভারতকে। হতেই পারে প্রতিপক্ষ দুর্বল বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রাস্তায় হেঁটেছিলেন সূর্যকুমারেরা। কিন্তু ওমানের কাছে হারলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যেতই।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান ম্যাচে পরীক্ষা করার আর সুযোগ নেই। তাই বুমরাহ এবং বরুণ চক্রবর্তী যে প্রথম একাদশে ফিরছেন তা বলাই যায়। সঙ্গে থাকবেন কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর পটেল। ওমানের বিরুদ্ধে ক্যাচ ধরতে গিয়ে মাথায় চোট পেলেও ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপ জানিয়ে দিয়েছেন, অক্ষরের খেলতে কোনও অসুবিধা নেই।
ব্যাটিং অর্ডারও ফিরবে আগের মতোই। অর্থাৎ অভিষেক শর্মা এবং শুভমন গিল ওপেন করবেন। তিনে তিলক বর্মা, চারে সূর্যকুমার, পাঁচে সঞ্জু স্যামসন নামবেন। চিন্তা থাকবে একটা বিষয় নিয়েই। যদি কোনও ভাবে টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়, তখন মিডল অর্ডার পরিস্থিতি কী ভাবে সামলায়। ওমান ম্যাচে সঞ্জু অর্ধশতরান করে ফর্মে রয়েছেন। তবে হার্দিক, অক্ষর বা শিবম এখনও উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। বিপদে পড়লে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে তাঁদের।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান দল অতীতেও বার বার চমকে দিয়েছে। এ বার চমক দেওয়ার মতো খেলোয়াড়ও যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই মানের ক্রিকেটারও নেই। দুবাইয়ের পিচ মন্থর গতির। স্পিনারদের বল বুঝতেই পারছেন না পাক ব্যাটারেরা। ওপেনার সাইম আয়ুব টানা তিনটি ম্যাচে শূন্য করেছেন। তাঁকে নিয়ে একটা কৌতুক তৈরি হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটমহলে। বলা হচ্ছে, তিনি নাকি সইদ আনোয়ার হতে চান। কিন্তু সইদ আজমল হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন। আসলে যত রান করেছেন, তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন আয়ুব। আগের ম্যাচে ভারতের তিনটি উইকেটই নিয়েছিলেন তিনি।
সাহিবজ়াদা ফারহান, হাসান নওয়াজ়েরা চেষ্টা করছেন বটে। এখনও বলার মতো সাফল্য পাননি। বরং বয়স হয়ে গেলেও রান করার খিদে ফখর জ়মানের মধ্যে অনেক বেশি। বোলিংয়ে ছন্দে ফিরতে হবে শাহিন আফ্রিদিকে। হ্যারিস রউফকে পাকিস্তান খেলায় কি না সে দিকে নজর থাকবে।
সূর্যকুমারেরা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাইরের আওয়াজে কান দিচ্ছেন না। তার প্রমাণ দেওয়ার আসল সুযোগ রবিবারই।