Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Indian Cricket Team

শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রশ্নে বাদ ঈশান, নজরে শ্রেয়সও

রোহিত এবং বিরাট দু’জনেই জুনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাচ্ছেন বললে কিছুই বলা হয় না। প্রধান দুই মস্তিষ্ক হিসেবে যাচ্ছেন। তাঁদের ফেরানোর ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও দ্বিমত ছিল না রবিবারের সভায়।

An image of Ishan Kishan and Shreyas Iyer

নজরে: (বাঁ দিকে) ঈশান কিষান, শ্রেয়স আয়ারকে (ডান দিকে) নিয়ে কড়া স্টান্স নির্বাচকদের। —ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩৯
Share: Save:

রবিবারের মতো এমন গোলাবারুদে ঠাসা নির্বাচনী বৈঠক হালফিলে আর একটাও হয়েছে কি? বিভিন্ন সূত্র মারফত বিস্ফোরক সব খবরাখবর মিলছে।

রোহিত এবং বিরাট দু’জনেই জুনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাচ্ছেন বললে কিছুই বলা হয় না। প্রধান দুই মস্তিষ্ক হিসেবে যাচ্ছেন। তাঁদের ফেরানোর ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও দ্বিমত ছিল না রবিবারের সভায়। বোর্ডের শীর্ষমহলেও নয়। শুনে হার্দিক পাণ্ড্য ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা চুপসে গেলেও কিছু করার নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও রোহিতকেই অধিনায়ক হিসেবে দেখার সম্ভাবনা নিরানব্বই শতাংশ। নাকি ভুল লিখলাম? লেখা উচিত, একশো এক শতাংশ?

অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পাণ্ড্যর ভবিষ্যৎ তা হলে কী? মেঘলা এবং খুবই মেঘলা। একে তো কবে কখন তাঁর পা মচকাবে, কবে হাড় শিরশির করে উঠবে, কবে হাতটা ঠিক খুলবে না, কেউ জানে না। বাকি আছে শুধু হেডব্যান্ড পরার জন্য মাথাব্যথা হওয়াটা। ক্রিকেট এখন এত বেশি করে ফিটনেস-নির্ভর খেলা। এ রকম চোটপ্রবণ কাউকে অধিনায়ক করা মানে তো টেনিসের মতো নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন পদ তৈরি করে রাখতে হবে। আরও বড় প্রশ্ন, তিনি হার্দিক পাণ্ড্য আদৌ দেশের টুপিকে সেরা গৌরব মনে করেন তো? নাকি আইপিএল, আইপিএল-ই সব, তোমার দেশের জার্সিতে মন নাই হার্দিক?

কয়েক দিন আগেই মুম্বই ইন্ডিয়ানস রোহিতকে সরিয়ে হার্দিককে অধিনায়ক বানাল। ওটা ক্লাবের দুনিয়া। নির্মম ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দুনিয়া। সৌরভ থেকে রাহুল, কেউ সেই চোখ রাঙানি থেকে রক্ষা পাননি। এক-এক সময় মনে হচ্ছে, দেশের টুপি বোধ হয় জবাব দিয়ে দিল রোহিতের হয়ে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে অধিনায়ক হার্দিককে দাঁড় করিয়ে দিল অনিশ্চয়তার মোড়ে।

অজিত আগরকর দেখতে-শুনতে ছোটখাটো। কে জানত, তিনিই প্রমাণ করে দেবেন, ছোট চেহারাতে অনেক সময় বড় মেরুদণ্ড লুকিয়ে থাকতে পারে। নতুন প্রজন্মের দুই ক্রিকেটারকে তিনি এবং তাঁর চার সতীর্থ কান মলে দিয়ে ‘নীল ডাউন’ করিয়ে রাখলেন। স্কুলে শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে যেমন শিক্ষকেরা শাস্তি দিতেন। এঁদের এক জন ঈশান কিষান। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ়ে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে ছিলেন। কে এল রাহুল কিপিং করছিলেন। তিনি পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিশেষ অনুমতির আবেদন করেন ফিরে আসতে চান বলে। দল পরিচালন সমিতি ও বোর্ডের প্রশাসনিক দফতর অতশত খোঁজ নেয়নি। তারা ছুটি মঞ্জুর করে দেয়। পরে দেখা যায়, বাবু দুবাইয়ে ধোনির সঙ্গে অনুষ্ঠানে হাজির। অমিতাভ বচ্চনের কেবিসি-তে কানে দুল পরে বসে আছেন। জানাজানি হওয়ার পরে সকলে তাজ্জব। ছোকরার বয়স পঁচিশ। টেস্ট ক্যাপকে এতটা অবমাননা করার আস্পর্ধা পেল কোত্থেকে? এ নিয়ে প্রকাশ্যে বোর্ড বা নির্বাচক কমিটি হয়তো মুখ খুলবে না। কিন্তু নিশ্চিত থাকুন, ঈশান নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরেছেন। এতটাই রেগে আছে সকলে যে, আগামী জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উড়ানে না তুলে উচিত শিক্ষা দিতে চাইছেন কেউ কেউ। কেবিসি-র হট সিটে বসা ‘বিগ বি’-র মতো কোনও সহৃদয় ব্যক্তি এখানে লাইফলাইন দিতে এগিয়ে আসবে না। সঞ্জু স্যামসন অনেক বেশি সুযোগ পাবেন এখন। কে এল রাহুল তো আছেনই। তাঁকে এই সিরিজ়ে নেওয়া না হলেও বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে দেওয়া ব্যাটিং-কিপিং করা কাউকে ভোলা যায় কী করে?

বন্দুকের সামনে থাকা দ্বিতীয় জন শ্রেয়স আয়ার। তাঁকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। কেপ টাউনে উইনিং স্ট্রোক মারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়েও তাঁর ‘গো অ্যাজ় ইউ লাইক’ মার্কা ব্যাটিং দেখে বিরক্ত নির্বাচকেরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ় হয়ে যাওয়ার পরে তিনি ছুটি কাটাবেন বলে ঠিক করে নেন। এ দিকে, রঞ্জি ট্রফি শুরু হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ের হয়ে খেলার কোনও আগ্রহ নেই। নির্বাচনী বৈঠকে কেউ কেউ সচিন-সৌরভদের উদাহরণ টেনে বলেছেন, তাঁদের মতো কিংবদন্তিরাও বিদেশ সফর থেকে ফিরে সোজা কিটব্যাগ নিয়ে রাজ্য দলের হয়ে খেলার জন্য উপস্থিত হয়ে যেতেন। আর তুমি শ্রেয়স আয়ার কী এমন হরিদাস পাল হয়ে গেলে বাপু?

আগরকরদের কমিটি মনে করছে, যারা টেস্ট ক্রিকেট বা রঞ্জি ট্রফিকে সম্মান করবে না, তাদের এ ভাবে বেত্রাঘাত করা দরকার। না হলে তরুণ প্রজন্ম ধরাকে সরা জ্ঞান করছে না। রোহিত, বিরাটদের ফেরানোর আরও একটা বড় কারণ, এখনই ড্রেসিংরুমের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ভাবে তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চাওয়া নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে। যদিও তরুণ প্রজন্ম থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো উদাহরণও রয়েছে। শুভমন গিল এবং রিঙ্কু সিংহ। যাঁরা শুধু প্রতিভা নয়, পরিশ্রম ও দায়বদ্ধতা দেখিয়ে মন জিতে নিচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দৌড়ে তো আছেনই, রিঙ্কুকে টেস্টেও সুযোগ দেওয়ার কথা উঠেছে। কারণ, তিনি মন দিয়ে রঞ্জি খেলছেন এবং ভাল করছেন।

সব মিলিয়ে আইপিএলের রমরমার যুগে ভারতীয় ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো ব্যতিক্রমী বৈঠক। এই প্রথম বার মোহিন্দর অমরনাথের বিরোধিতা করতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে, নির্বাচকমণ্ডলী মানেই এক
দল ভাঁড় নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE