ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আপাতত এক সপ্তাহ বন্ধ আইপিএল। তবে শুক্রবার এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ার আগেই অনেক দল পরের মরসুমের জন্য নিজেদের গোছাতে শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে যারা প্লে-অফ থেকে ছিটকে গিয়েছে। আইপিএলের নিয়মের একটি ফাঁককে কাজে লাগাচ্ছে তারা।
গত কয়েক দিনে আইপিএলের বিভিন্ন দলকে একাধিক পরিবর্ত ক্রিকেটার নিতে দেখা গিয়েছে। চেন্নাই যেমন আয়ুষ মাত্রে, ডেওয়াল্ড ব্রেভিস, উর্বিল পটেলকে নিয়েছে। রাজস্থান লুয়ান-দ্রে প্রিটোরিয়াস এবং নান্দ্রে বার্গারকে সই করিয়েছে। হায়দরাবাদ সই করিয়েছে হর্ষ দুবেকে। দিল্লি নিয়েছে সেদিকুল্লাহ অটলকে।
কেন দলগুলি হঠাৎ করে পরিবর্ত ক্রিকেটার নিচ্ছে?
গত এক সপ্তাহে পরিবর্ত ক্রিকেটার নেওয়ার ধুম লেগেছে আইপিএলে। প্রায় প্রতি দিনই একাধিক দল নতুন ক্রিকেটার নিয়েছে। আইপিএলের নিয়মে বলা আছে, কোনও দল নিজেদের ১২তম ম্যাচ খেলার আগে পরিবর্ত ক্রিকেটার নিতে পারবে। কিছু দল ১২ ম্যাচ খেলে ফেললেও অনেকেই খেলেনি।
নতুন কোনও নিয়ম হয়েছে?
না, হয়নি। এই নিয়ম আইপিএলের প্রথম মরসুম থেকে রয়েছে। কোনও দল যাতে মরসুমের মাঝপথে বিপদে না পড়ে তাই এই নিয়ম করা হয়েছিল। এই নিয়মে, যদি কোনও ক্রিকেটার নিলামে নাম লিখিয়েও অবিক্রিত থেকে যান, তা হলে মরসুমের মাঝপথে তাঁকে ন্যূনতম মূল্যে (বেস প্রাইস) সই করানো যায়। ২০১১ সালে ডার্ক ন্যানেস চোট পাওয়ার পর বেঙ্গালুরু সই করিয়েছিল ক্রিস গেলকে। সেই গেল বেঙ্গালুরুকে কত সাফল্য এনে দিয়েছেন তা সকলেই জানেন। তর্কাতীত ভাবে গেল আইপিএলে খেলা সেরা বিদেশি। বেঙ্গালুরুর এখনকার অধিনায়ক যিনি, সেই রজত পাটীদারকেও ২০২২ সালে লাভনিত সিসোদিয়ার পরিবর্ত হিসাবে সই করানো হয়েছিল।
নিয়মের ফাঁক কোথায়?
মহানিলামে বহু ক্রিকেটারকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়েছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল ক্রিকেটার ছাড়াও, স্থানীয় টি-টোয়েন্টি লিগে নজরকাড়া ক্রিকেটারেরাও ভাল দামে বিক্রি হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের লিগে খেলা সফল ক্রিকেটারদের নিয়েও লড়াই হয়। তবে কিছু দল বুদ্ধি করে ক্রিকেটার বেছে রাখলেও নিলামে কেনেনি। পরে চোট পাওয়া ক্রিকেটারদের পরিবর্ত হিসাবে নিয়েছে অনেক কম দামে। আয়ুষ, বার্গারের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে নিলামে লড়াই হওয়াই স্বাভাবিক।
আইনের ফাঁকটি হল, কোনও দল চাইলে পরিবর্ত ক্রিকেটার এবং চোট পাওয়া ক্রিকেটার, দু’জনকেই পরের মরসুমে ধরে রাখতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, চেন্নাই আয়ুষকে সই করিয়েছে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের বদলে। আগামী মরসুমে দু’জনকেই ধরে রাখতে পারবে তারা। আয়ুষকে যে হেতু কম দামে কেনা হয়েছে, তাই অন্য কোনও দামী অথচ অসফল ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিতে পারে তারা। এতে মিনি নিলামে নতুন ক্রিকেটার কেনার অর্থও হাতে থাকবে।
হায়দরাবাদের কথা ধরা যাক। তারা অ্যাডাম জ়াম্পার পরিবর্ত হিসাবে নিয়েছিল স্মরণ রবিচন্দ্রনকে। সেই স্মরণও ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় নেওয়া হয়েছে হর্ষকে। মিনি নিলামের আগে হায়দরাবাদ চাইলে জ়াম্পা, স্মরণ এবং হর্ষ তিন জনকেই ধরে রাখতে পারে।
চেন্নাই বা হায়দরাবাদ কাদের সই করাল তা নিয়ে আগ্রহ না থাকারই কথা। কারণ দুই দলই প্লে-অফ থেকে ছিটকে গিয়েছে। তবে পরের মরসুমের দল গোছানোর কাজ এখন থেকেই করে রাখছে। পাশাপাশি, যদি নির্ধারিত আট জনের থেকে দলে বিদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যা কম থাকে, তা হলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বদলে বিদেশি ক্রিকেটার নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। চেন্নাই যেমন গুরজপনীত সিংহের বদলে ব্রেভিস, রাজস্থান নীতীশ রানার বদলে প্রিটোরিয়াস এবং সন্দীপ শর্মার বদলে বার্গারকে নিয়েছে।
এতেই প্রশ্ন উঠছে, এই নিয়ম কি খতিয়ে দেখে বদল করা উচিত? আইপিএলে ২৫ জন সদস্য নেওয়া যায়। এক জন চোট পেলে তাঁর পরিবর্ত নেওয়া কি খুবই দরকার? নিয়ম থাকলেও, লিগ পর্বের শেষ সপ্তাহে কি কোনও দল এ ভাবে পরিবর্ত ক্রিকেটার সই করাতে পারে? তা ছাড়া, চোট পাওয়া ক্রিকেটারের বদলে নতুন যাঁকে সই করানো হবে তাঁকে কি পরের মরসুমে ধরে রাখার অধিকার দেওয়া উচিত?
বোর্ড এখনও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে ভবিষ্যতে নিয়ম বদলালে অবাক হওয়ার থাকবে না।