হরমনপ্রীত কৌরদের প্রশংসায় রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বিশ্বকাপ জেতার জন্য তো সকলেরই প্রশংসা পেয়েছেন ভারতের মহিলা ক্রিকেটারেরা, কিন্তু অশ্বিন অন্য একটি বিষয়ের কথা তুলে ধরেছেন। বিশ্বকাপ জিতে পূর্বসূরি ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ ও অঞ্জুম চোপড়ার হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন হরমনপ্রীতেরা। তাঁদের এই কাজের প্রশংসা করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পাশাপাশি খোঁচা মেরেছেন ভারতের পুরুষ ক্রিকেট দলকে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে অশ্বিন বলেন, “২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিল হরমনপ্রীত। তার পরে ইংল্যান্ডের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজেরা সেই দলে ছিল। তারা কোনও দিন বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। কিন্তু ভারতীয় দল কী করল? বিশ্বকাপ জিতে ঝুলন, মিতালিদের হাতে ট্রফি তুলে দিল। সিনিয়রদের কৃতিত্ব দিল। এই কাজের জন্য ওদের কুর্নিশ জানাই। ভারতের পুরুষদের দল কোনও দিন এ কাজ করেনি।”
অশ্বিনের মতে, ক্যামেরার সামনে বা সাক্ষাৎকারের সময় অনেকেই পূর্বসূরিদের সম্মান করার কথা বলে। কিন্তু কত জন তা মন থেকে বলে? হরমনপ্রীতদের কাজে প্রমাণিত হয়েছে তাঁরা সত্যিই পূর্বসূরিদের সম্মান করেন। অশ্বিন বলেন, “অনেক সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে পূর্বসূরিদের সম্মান করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখি না, সত্যিই তাঁদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে। সকলে বলে, আমাদের এই দলটাই সেরা। তার মানে, আগের দল ভাল ছিল না। আমি এ রকম অনেক আলোচনার সাক্ষী।”
অশ্বিন সরাসরি কারও নাম নেননি। কিন্তু তিনি যে সময়ে ক্রিকেট খেলেছেন, সেই সময়ে ভারতের অধিনায়ক বলতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কোহলি ও রোহিত ছিলেন। ধোনি অশ্বিনের থেকে অনেক সিনিয়র। ফলে রোহিত, কোহলির সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা বেশি ছিল। তবে কি ভারতের এই দুই অধিনায়ককে খোঁচা মারলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার? সত্যিই তো, ২০১১ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ বা ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় দলের উল্লাসের সময় কোনও প্রাক্তনকে তাঁদের সঙ্গে দেখা যায়নি। সেই কথাই বলতে চাইলেন অশ্বিন।
রবিবার রাতে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে তখন মাঠ প্রদক্ষিণ করছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। তাঁদের সঙ্গে দলের সাপোর্ট স্টাফ ছাড়াও রয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। মাঠের এক দিকে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে কথা বলছিলেন ঝুলন। তাঁকে ডেকে নেন হরমনপ্রীতেরা। দলের সঙ্গে উল্লাসে মাতেন ঝুলন। তোলেন ট্রফি। খেলোয়াড়জীবনে দু’বার বিশ্বকাপের ফাইনালে হারতে হয়েছিল ঝুলনকে। হরমনপ্রীতদের মধ্যে দিয়ে সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের।
ভারতের মহিলাদের ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলার ঝুলনের অবদান কম নয়। এখনও এক দিনের ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বাধিক উইকেটের মালকিন ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপ কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। ভারত বিশ্বকাপ জেতার পর ঝুলনের গলায় ঝরে পড়ছিল আবেগ। বোঝা যাচ্ছিল, হরমনপ্রীতদের এই জয়ে কতটা উত্তেজিত তিনি। সেই উত্তেজনার বাঁধ ভাঙল ভারতের উল্লাসের সময়।
আরও পড়ুন:
হরমনপ্রীতদের ডাকে তাঁদের মাঝে যান ঝুলন। একে একে স্মৃতি মন্ধানা, জেমাইমা রদ্রিগেজ়রা জড়িয়ে ধরেন তাঁকে। ঝুলনের হাতে দেওয়া হয় ট্রফি। যে ট্রফির স্বাদ খেলোয়াড় হিসাবে পাননি সেই ট্রফি তোলেন তিনি। তার পরেই দেখা যায় হরমনপ্রীত এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন। দু’জনের সম্পর্ক খুব ভাল। অনেক দিন একসঙ্গে খেলেছেন। মহিলাদের আইপিএলে হরমনপ্রীতের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টরও ঝুলন। হরমন জড়িয়ে ধরার পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ঝুলন। কেঁদে ফেলেন। হরমনও তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন।
পরে ঝুলন জানান, কেন এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “২০২২ সালের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর হরমন ও স্মৃতি আমার ঘরে এসেছিল। ওরা বলেছিল, ২০২৫ সালে তুমি খেলবে কি না জানি না, তবে একটা কথা বলতে চাই, সে বার আমরা বিশ্বকাপ জিতবই। দু’সপ্তাহ আগেই ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা বলেছে, তোমার জন্য এই বিশ্বকাপ জিততে চাই। ওরা সেটা করেছে। সেই কারণে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি।”
ভারতের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও বলেন ঝুলন। তিনি বলেন, “হরমন ও স্মৃতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। আমার শেষ দিকে ওরাই দলের সিনিয়র ক্রিকেটার ছিল। ওদের সঙ্গে অনেক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছি। মনে হচ্ছে, আমিই বিশ্বকাপ জিতেছি। এই রাত কোনও দিন ভুলব না।”
তবে শুধু ঝুলন নন, ভারতের আরও দুই প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালি ও অঞ্জুমও হরমনপ্রীতদের উল্লাসে যোগ দেন। তাঁরাও ট্রফি তোলেন। ঝুলনের মতো মিতালি, অঞ্জুমও তাঁদের অধরা স্বপ্ন পূরণ করেছেন হরমনপ্রীতদের হাত ধরে। এই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সকলে হরমনপ্রীতদের এই কাজের প্রশংসা করেছেন। সেই তালিকায় এ বার যোগ দিলেন অশ্বিন।