ক্যাচ ফস্কালে হাতছাড়া হয় ম্যাচও।
ক্রিকেটের সেই প্রবাদকেই ফের এক বার প্রমাণ করল তৃতীয় সংস্করণের ডব্লিউপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এলিস পেরি এবং রিচা ঘোষের ক্যাচ ফস্কানোর মাসুল দিতে হল গুজরাত জায়ান্টসকে। কারণ পেরি ও রিচার দাপটেই কার্যত জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে রেখে এল গুজরাত।
শুধু তাই নয়, ডব্লিউপিএলে সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়ের নজিরও গড়ল গত বারের চ্যাম্পিয়ন আরসিবি। ২০২৪ সালে ট্রফি জিতে যে জায়গায় শেষ করেছিল আরসিবি, শুক্রবার বোধনে সেখান থেকেই ছয় উইকেটে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু হল তাদের। প্রথম ম্যাচ এই বার্তাও দিয়ে গেল, মেয়েদের ক্রিকেটেও ২০ ওভারে ২০১ রান এখন আর দুর্লঙ্ঘ্য শৃঙ্গ নয়।
ইনিংসের বিরতিতে আয়ুষ্মান খুরানা এবং মধুবন্তী বাগচির গানের পারফরম্যান্সের পরেও আরও চমক অপেক্ষা করে ছিল দর্শকদের জন্য। ১২.২ ওভারে ১০৯ রানে চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে অতি বড় আরসিবি সমর্থকও ভাবতে পারেননি, ম্যাচের শেষে তাঁরা জয়োল্লাসে মেতে উঠবেন। শুরু থেকেই নিজেকে শান্ত, স্থিতধী রেখে দলকে জেতালেন ‘ফিনিশার’ রিচা। মাত্র ২৭ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকলেন। ইনিংস সাজালেন সাতটি চার ও চারটি ছক্কা দিয়ে। দিয়ান্দ্রা ডটিনের বল ডিপ মিড উইকেটের বাউন্ডারি পার করে ফেলে দলের জয় নিশ্চিত করার পরেও তাই তাঁর মুখে কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল না। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানার তাঁকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ছবিটাই যেন সব কিছু বলে দিচ্ছিল।
কী পরিকল্পনা করেছিলেন? রিচার উত্তর, “শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস ছিল পারব। নিজের খেলা খেলেছি। বলের মান অনুযায়ী শট খেলেছি।” সঙ্গী কণিকা আহুজাও (১৩ বলে ৩০ রান) যাবতীয় কৃতিত্ব দিলেন রিচাকে। “শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। যাবতীয় কৃতিত্ব রিচার।”
বঙ্গ কন্যা ‘ফিনিশিং টাচ’ দিলে সেই জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন এলিস পেরি। ছ’টি চার ও দু’টি ছক্কা দিয়ে সাজালেন ৩৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। একটা সময় অ্যাশলে গার্ডনার শুরুতে দু’টি উইকেট নিয়ে যে আশার আলো দেখিয়েছিলেন, বাকি বোলাররা তা পরিণত করলেন নিরাশায়।
এ দিন টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গালুরু। ৬.৪ ওভারে ৪১ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে গুজরাটকে টানেন দুই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার বেথ মুনি এবং অ্যাশলে গার্ডনার। তৃতীয় উইকেটে ৪৪ রানের জুটি হয়। ৪২ বলে ৫৬ রানে ফেরেন মুনি। মারেন আটটি চার। ৩৭ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন গার্ডনার। ব্যাটে ও বলে তাঁর লড়াই দিনের শেষে কোনও কাজেই এল না।
জয়ের দিনে আরসিবির বড় ধাক্কা আঙুলের চোটে অফস্পিনার শ্রেয়ঙ্কা পাটিলের পুরো প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়া। ২২ বছরের তরুণী ইনস্টাগ্রামে লেখেন, “হৃদয় ভারাক্রান্ত। তবে আমি ফের প্রত্যাবর্তন করব।” এই পোস্টের পরেই আশঙ্কা শুরু হয়। সূত্রের খবর, শ্রেয়ঙ্কাকে হয়তো পুরো মরসুমেই পাওয়া যাবে না।
রিচার ব্যাটে ঝড় দেখার পরে শনিবার সবার নজর থাকবে মুম্বই বনাম দিল্লি ম্যাচে। অর্থাৎ দুই কিংবদন্তির দলের লড়াইয়ে। মুম্বইয়ের বোলিং কোচ ও মেন্টর ঝুলন গোস্বামী। পাশাপাশি দিল্লি ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অর্থাৎ দিদি বনাম দাদার দলের লড়াই। প্রথম মরসুমে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মুম্বই ও দিল্লি। গত বছরের উদ্বোধনী ম্যাচও ছিল এই দুই দলেরই। দু’বারই শেষ হাসি হেসেছিলেন হরমনপ্রীত কউর। তাই শনিবার বদলার পরীক্ষা দিল্লির।
অবশ্য বিগত দুই বছরের ফাইনালিস্ট দিল্লি। তাই তাঁদের হাল্কা ভাবে নিলে ভুল করবে মুম্বই। দুই মরসুমে মেগ ল্যানিং এবং শেফালি বর্মা জুটি ১৮ ইনিংসে ৮৬৮ রান করেছে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে ফের প্রত্যাবর্তনের চেষ্টায় শেফালি। মুম্বইয়ের জন্য বড় ধাক্কা চোটের কারণে পূজা বস্ত্রকরের ছিটকে যাওয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: গুজরাত জায়ান্টস ২০১-৫ (মুনি ৫৬, গার্ডনার ৭৯, রেণুকা ২-২৫)। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ২০২-৪ (পেরি ৫৭, রিচা অপরাজিত ৬৪, গার্ডনার ২-৩৩)।
শনিবার ডব্লিউপিএলে: মুম্বই ইন্ডিয়ানস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস। সন্ধে ৭.৩০ থেকে। স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)