এ বারের আইপিএলের ৩২তম ম্যাচে প্রথম বার সুপার ওভারে নির্ধারিত হল ম্যাচের ফলাফল। প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেটে ১১ রান করে রাজস্থান রয়্যালস। নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে রান আউট হলেন রিয়ান পরাগ এবং যশস্বী জয়সওয়াল। শিমরন হেটমেয়ার করেন ৫ বলে ৭ রান। জবাবে দিল্লি ক্যাপিটালস করল ৪ বলে ১৩ রান। লোকেশ রাহুল এবং ট্রিস্টান স্টাবস এনে দিলেন রুদ্ধশ্বাস জয়। এই জয়ের ফলে আইপিএলের পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে উঠে এলেন অক্ষর পটেলেরা। এক রকম জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হল সঞ্জু স্যামসনদের।
ধারাবাহিকতা নেই বলে সমালোচনা শুরু হয়েছিল যশস্বীর। আইপিএলে এর আগে ছ’টি ম্যাচ খেলে দু’টিতে রান করেছিলেন। সেই যশস্বীই বুধবার দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স শ্রেয়স আয়ারের মতো ধরে রাখার চেষ্টা করেনি আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক নীতীশ রানাকেও। রাজস্থান তাঁকে নিলামে কিনে নিয়েছিল। রাহুল দ্রাবিড়দের সেই আস্থার মান রাখছেন নীতীশ। যশস্বীর ৩৭ বলে ৫১ রানের ইনিংসের পাশে উজ্জ্বল নীতীশের ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস। কেকেআরের প্রাক্তন অধিনায়ক মারলেন ৬টি চার এবং ২টি ছয়। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং একটা সময় চাপে ফেলে দেয় অক্ষরদের। কেকেআর কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দেখছেন। নিশ্চয়ই পর্যালোচনা করছেন, কাদের রেখে কাদের ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। রাজস্থানের হয়ে ভাল ব্যাট করলেন ধ্রুব জুরেল এবং হেটমেয়ারও। যদিও মিচেল স্টার্কের শেষ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ৯ রান তুলতে পারেননি তাঁরা। জবাবে রাজস্থানও ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮৮ রান করল। ফলে এ বারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও দুরন্ত বল করেন স্টার্ক। শ্রেয়স, নীতীশের মতো তাঁকে ছেড়েও কেকেআর ভুল করেছে কি না সেই প্রশ্ন উঠবেই।
প্রথমে ব্যাট করে দিল্লি ক্যাপিটালসও করেছিল ৫ উইকেটে ১৮৮ রান। প্রাথমিক চাপ সামলে দিল্লিকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেন বাংলার উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অভিষেক পোড়েল। অভিষেককে এ বারের আইপিএলে বেশ পরিণত দেখাচ্ছে ব্যাট হাতে। রাহুল ৩২ বলে ৩৮ রানে আউট হলেও পিচের এক দিক আগলে রেখেছিলেন অভিষেক। আইপিএলে প্রতি ম্যাচেই দিল্লি ক্যাপিটালস কর্তৃপক্ষের আস্থার মর্যাদা দিচ্ছেন চন্দননগরের বাসিন্দা। এ দিন ভাল ব্যাট করেও মাত্র ১ রানের জন্য অর্ধশতরান হাতছাড়া করলেন তিনি। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গের বলে রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে অভিষেক করলেন ৩৭ বলে ৪৯ রান। বাংলার উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের ব্যাট থেকে এল ৫টি চার এবং ১টি ছক্কা। শেষ দিকে দিল্লির রান তোলার গতি বৃদ্ধি করেন অধিনায়ক অক্ষর। ৪টি চার এবং ২টি ছয়ের সাহায্যে ১৪ বলে ৩৪ রান করেন তিনি। কিছুটা চেষ্টা করলেন স্টাবসও। তিনি অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ৩৪ রান করে। তবে বাংলার তরুণ ক্রিকেটার ২২ গজের এক দিক আগলে রেখে পরিস্থিতি না সামলালে ঘরের মাঠে করুণ পরিস্থিতি হত দিল্লির।
উইকেটের সামনে এবং পিছনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে ঋষভ পন্থ, ঈশান কিশন, সঞ্জু স্যামসন, জিতেশ শর্মা, ধ্রুব জুরেলদের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে চলে আসতে পারেন অভিষেক। পন্থ গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লির তৎকালীন ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেককে দলে নেন। অভিষেক কিন্তু ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ককে হতাশ করেননি। আইপিএলে পারফর্ম করে অভিষেক নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। দিল্লির প্রথম দলে নিয়মিত হয়ে উঠেছেন। তবু ২২ বছরের অভিষেকের লড়াই ঋদ্ধিমান সাহা-পরবর্তী ‘বাঙালির’ ক্রিকেটের সেরা প্রদর্শন।
আরও পড়ুন:
বুধবারের দিল্লি-রাজস্থান ম্যাচে তেমন তারকাসুলভ পারফরম্যান্স নেই কারও। শেষ বেলায় ‘নায়ক’ হয়ে গেল সুপার ওভার। চার বছর পর আইপিএলে হওয়া সুপার ওভার জিতে নিল দিল্লি।