Advertisement
E-Paper

ব্যাট এক দিকে, বল অন‍্য দিকে, রান নেই পন্থের! হারের হ‍্যাটট্রিকে প্লে-অফ থেকে দূরে সরছে গোয়েন্‌কার লখনউ

ব্যাট বশ মানছে না ঋষভ পন্থের হাতে। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ তিনি। ব্যর্থ তাঁর দল লখনউ সুপার জায়ান্টসও। হারের হ্যাটট্রিক সঞ্জীব গোয়েন্‌কার দলের। প্লে-অফ থেকে ক্রমশ দূরে সরছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ২৩:১৬
cricket

পঞ্জাবের বিরুদ্ধে আউট হয়ে ফিরছেন ঋষভ পন্থ। ছবি: রয়টার্স।

ঋষভ পন্থকে রেকর্ড ২৭ কোটি টাকায় কিনে যখন লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক করেছিলেন সঞ্জীব গোয়েন্‌কা, তখন তিনি ভাবেননি কয়েক মাস পরে ছবিটা এ রকম হবে। দলের মালিক তখন সগর্বে জানিয়েছিলেন, এ বারের আইপিলের সেরা ক্রিকেটার হবেন পন্থ। সেরা তো দূর, আইপিএলে নিজের সবচেয়ে খারাপ ফর্মে রয়েছেন পন্থ। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ তিনি। ব্যাটার পন্থের ফর্ম চাপে রেখেছে অধিনায়ক পন্থকেও। কোনও পরিকল্পনাই নেই তাঁর। ফলে খেই হারিয়েছে লখনউ সুপার জায়ান্টসও। হারের হ্যাটট্রিক হয়েছে তাঁদের। পঞ্চাব কিংসের কাছে ৩৭ রানে হারের পর প্লে-অফ থেকে আরও দূরে সরেছে গোয়েন্‌কার লখনউ।

পন্থ কতটা খারাপ ফর্মে এ বার রয়েছেন তা কয়েকটি পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ১১টি ম্যাচে ১২৮ রান করেছেন তিনি। ১২.৮০ গড় ও ৯৯.২২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন পন্থ। এই ১২৮ রানের মধ্যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ৬৩ রান করেছেন তিনি। নইলে ছবিটা আরও খারাপ হত। কমলা টুপির তালিকায় ৬০ নম্বরে রয়েছেন পন্থ। প্রথম ৬০ জনের মধ্যে তিনিই একমাত্র যাঁর স্ট্রাইক রেট ১০০-র নীচে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কতটা খারাপ ফর্মে রয়েছেন তিনি। শুরুর দিকে মিচেল মার্শ, এডেন মার্করাম, নিকোলাস পুরানদের দাপটে লখনউ জিতছিল। ফলে পন্থের অভাব বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁরাও ফর্ম হারিয়েছেন। তার ফলে মুখের হাসি আরও কমেছে গোয়েন্‌কার।

পঞ্জাবের ঘরের মাঠে ২৩৭ রান তাড়া করা সহজ ছিল না। তার উপর তিন ওভারের মধ্যেই মার্করাম ও মার্শকে হারায় লখনউ। ফলে চাপ আরও বাড়ে পন্থের। এই ম্যাচে অবশ্য নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি পন্থ। চার নম্বরে নেমেছেন। ১৭ বলে করেছেন ১৮ রান। সেই ১৮ রানের মধ্যে ১৪ রান বাউন্ডারি থেকে। এর থেকেই স্পষ্ট, দৌড়ে রান করতে পারছেন না পন্থ। মাঠের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করতে পারছেন না। চেষ্টা করছেন জোরে শট মারতে। বাউন্ডারিতে বল ফেলতে। আর সেটা করতে গিয়েই টাইমিং হচ্ছে না। আজ়মাতুল্লা ওমরজাইয়ের যে বলে তিনি আউট হলেন তা তিনি মেরেছিলেন লং অনের দিকে। ব্যাট তাঁর হাত থেকে ছিটকে গেল। ব্যাট গেল মিড অনের দিকে। বল গেল কভারের দিকে। শশাঙ্ক সিংহ সহজেই সেই ক্যাচ ধরলেন। আরও একটি ম্যাচে মাথা নিচু করে ফিরলেন পন্থ। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা চাপে রয়েছেন তিনি। অথচ পরের দিকে আয়ুষ বদোনি ও আব্দুল সামাদ লড়াই করেছিলেন। ম্যাচ হারবেন জেনেও হাল ছাড়েননি তাঁরা। সেই লড়াইয়ে পন্থকে পাশে পেলে একটা সুযোগ থাকত। আরও কয়েকটি বল খেলতে পারলে হয়তো ব্যাটিং সহজ হয়ে যেত। সেই সুযোগই নিজেকে দিতে পারলেন না পন্থ। তাঁর ব্যাট কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আরও একটি ম্যাচে তা দেখা গেল।

দুর্ঘটনার চোট সারিয়ে গত বারের আইপিএলে ফেরার পরেও এতটা চাপে দেখায়নি পন্থকে। শারীরিক সমস্যা থাকলেও মুখে হাসি ছিল। নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলেছেন। সেই পুরনো পন্থকে দেখা যাচ্ছিল। গত বারের আইপিএলের পারফরম্যান্স তাঁকে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও জায়গা করে দিয়েছিল। তা হলে এ বার কেন এই সমস্যা হচ্ছে? ২৭ কোটি টাকার চাপ? আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হওয়ায় কি নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন তিনি? প্রতি ম্যাচে পরীক্ষা করার চেষ্টা করছেন। একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না রেখে বার বার তাতে বদল করছেন। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পন্থের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রবি বিশ্নোইয়ের মতো স্পিনার দলে থাকার পরেও দলে এত পেসার খেলানো হচ্ছে কেন? চোট থেকে ফিরতেই মায়াঙ্ক যাদবকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি ম্যাচ রান দিচ্ছেন তিনি। প্রথম দিকে যে কয়েকটি ম্যাচে লখনউ জিতেছে সেখানে শার্দূল ঠাকুর ও বিশ্নোইয়ের বড় ভূমিকা ছিল। তাঁরা জায়গা পাচ্ছেন না। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে লখনউয়ের বোলারেরা যে ভাবে ক্রমাগত শর্ট বল করে গিয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। প্রতি ওভারে বড় রান হচ্ছে দেখেও কোনও বিকল্প পরিকল্পনা দেখা গেল না পন্থের কাছে। আইপিএলের শুরুর দিকেও তাঁর ব্যাটে রান ছিল না। কিন্তু অধিনায়কত্ব ভাল করছিলেন। কঠিন জায়গা থেকে ম্যাচ বার করছিলেন। সেই পন্থ কোথায় গেলেন? তা হলে কি ব্যাটার পন্থের ব্যর্থতা চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে অধিনায়ক পন্থেরও? গত কয়েকটি ম্যাচে অন্তত সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছে।

গত বারের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে ছেড়ে দিয়ে এ বার পন্থের উপর ভরসা করেছিলেন গোয়েন্‌কা। শুরুর দিকে তাঁর দল ম্যাচ জিতছিল। সাধারণত প্রতিটি ম্যাচেই গ্যালারিতে দেখা যায় দলের মালিককে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধেও ছিলেন তিনি। প্রথম ওভারেই পঞ্জাবের প্রিয়াংশ আর্য আউট হওয়ার পরে তাঁর চওড়া হাসি দেখা গেল। কিন্তু যত খেলা গড়াল তত হাসি কমল। একটা সময় সেই হাসি উধাও। চুপ করে বসেছিলেন। ঠিক তেমনই চুপ করে ডাগ আউটে বসেছিলেন অধিনায়ক পন্থও। দু’জনেই হয়তো বুঝতে পারছিলেন, প্লে-অফের আশা কমতে শুরু করেছে।

একটা সময় পয়েন্ট তালিকার উপরের দিকে থাকা লখনউ এখন সাত নম্বরে। ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট তাদের। খাতায়-কলমে এখনও প্লে-অফে ওঠার সুযোগ রয়েছে পন্থদের। তাদের বাকি তিন ম্যাচ বেঙ্গালুরু, গুজরাত ও হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। এ বার বেঙ্গালুরু ও গুজরাত যা খেলছে তাতে তাদের হারানো কঠিন। আর একটি ম্যাচ হারলেই প্লে-অফের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে লখনউয়ের। পর পর দু’বার ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হবে গোয়েন্‌কাকে। সেই আশঙ্কা সত্যি হওয়ার পথে।

Punjab Kings Lucknow Super Giants Rishabh Pant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy