ইডেনের ড্রেসিংরুম থেকে বেরোনোর সময় চোখ ছিল ফোনে। মাথা নিচু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন টিম বাসের দিকে। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে দু’জন ডেকে ওঠেন, ‘‘ওয়ে শুভমন! ইধর দেখ!’’ চেনা গলা, পরিচিত ভাষা! সামান্য থমকে যান ভারতীয় অধিনায়ক। মুখ তুলে তাকিয়ে হেসে ফেলেন। এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন দুই বন্ধুকে।
শুভমন গিল আশাই করেননি ছোটবেলার দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে ইডেনে। অধিনায়ক বলে ওঠেন, ‘‘এখানে? কী ব্যাপার?’’ তাঁরা জানান, কলকাতায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতে এসেছেন। ভবানীপুর ক্লাবের হয়ে খেলেন।শুভমনের দুই বন্ধুর নাম গীতাংশ খেড়া ও বিনয় চৌধুরি। মোহালিতে শুভমনের সঙ্গেই অনুশীলন করতেন। রঞ্জি ট্রফিতেও একাধিক ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছেন। ২০১৯-এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সল্টলেক ক্যাম্পাসের মাঠে শুভমনের সঙ্গেই পঞ্জাবের হয়ে খেলেছিলেন তাঁর দুই বন্ধু। ছয় উইকেট নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার বিনয়। ৪২ রান করেছিলেন গীতাংশ। এমনকি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শুভমনের অভিষেক ম্যাচেও খেলেছিলেন বিনয়। হরভজন সিংহের নেতৃত্বে বাংলার বিরুদ্ধেই অভিষেক হয়েছিল শুভমনের। এখন তিনি ভারতীয় টেস্ট ও ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক।
দুই বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারা গেল নানা অজানা কাহিনি। গীতাংশ বলছিলেন, ‘‘শুভমনের মতো পরিশ্রমী ক্রিকেটার দেখিনি। ছোটবেলা থেকেই রান করার খিদে দেখতে পেতাম। ও যখন পঞ্জাবের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলত, তখন নিয়মিত খবর নিতাম। প্রত্যেক দিনই শুনতাম বড় রান করেছে। কখনও ১৫০, কোনও দিন ২০০, ২৫০। ওর ব্যাট থামত না।’’
চমক: বন্ধুর সঙ্গে ইডেনে দেখা শুভমনের। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধুরা জানালেন, শুভমন নাকি শতরানের হিসেব লিখে রাখেন ব্যক্তিগত ডায়েরিতে। বলছিলেন, ‘‘ও যখন অনূর্ধ্ব-১৫ স্তরে ক্রিকেট খেলত, তখন থেকেই ডায়েরিতে শতরানের সংখ্যা লিখে রাখত। সেই সময় ওকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ক’টা শতরান হল? শুভমন ডায়েরি খুলে বলেছিল, সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ৭৮টি হয়ে গিয়েছে। ছোটবেলার মতো এখনও ডায়েরিতে শতরানের সংখ্যা লিখে রাখে শুভমন।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত ১৯টি শতরানের মালিক শুভমন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট ‘এ’ ও আইপিএল মিলিয়ে আরও ৩৯টি শতরান জুড়ে দিন সেই তালিকায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ডায়েরিতে ৭৮টি শতরানের হিসেব রেখেছিলেন। এখন তাঁর সেই ডায়েরিতে আদৌ কোনও পাতা অবশিষ্ট আছে কি?বিনয়ের কথায়, ‘‘শুভমনের বাবা বরাবরই ব্যাটিং নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে। ও কোনও শট ভুল খেললে সেটা ঠিক করার জন্য সারা দিন একই শট খেলাতেন। এখনপরিশ্রমের ফল পাচ্ছে।’’
ইডেন টেস্ট দেখতে আসছেন শুভমনের বাবা লখিন্দর সিংহ গিল। ম্যাচের আগের দিনই পৌঁছে যাচ্ছেন কলকাতা। শুক্রবার থেকে মাঠে আসবেন। সদ্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ় খেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন শুভমন। লাল বলের ক্রিকেটের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতেই এ দিন প্রায় ৪০ মিনিট ব্যাট করেন নেটে। রবীন্দ্র জাডেজার বিরুদ্ধেই নেটে বেশি সময় কাটান তিনি। বিপক্ষে কেশব মহারাজের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার রয়েছেন। সেনুরান মুথুসামিও থাকতে পারেন প্রথম একাদশে। এই দুই বাঁ-হাতি স্পিনারকে সামলানোর প্রস্তুতিতে ডুবে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। ব্যাট করলেন স্থানীয় এক বাঁ-হাতি পেসারের বিরুদ্ধেও। ক্রমাগত খাটো লেংথের বলে ব্যাট করতে চাইছিলেন। কারণ, বিপক্ষে ছ’ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতার এক বাঁ-হাতি পেসার রয়েছেন যে। বোঝাই যাচ্ছিল, মার্কো জানসেনকে সামলাতেই এই প্রস্তুতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাও ছন্দে ফিরতে মরিয়া। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পাকিস্তান সিরিজ়ে খেলতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের হয়ে ভারত ‘এ’-র বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯ রান করেন। শুক্রবার থেকে ইডেনে তাঁর বড় পরীক্ষা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি দেশকে দেওয়ার পরে ভারতের মাটিতে নিজেকে প্রমাণ করার আরও এক লড়াই। ইডেনে এ দিন থ্রোডাউন বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই বেশিক্ষণ নেটে সময় কাটালেন বাভুমা। তাঁর দলের বাকি ব্যাটসম্যানেরা বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন। ট্রিস্টান স্টাবস, এডেন মার্করাম, রায়ান রিকলটন, ডিওয়াল্ড ব্রেভিসরা বড় শট খেলছিলেন নেটে। অন্য দিকে ছন্দে ফেরার নিবিড় অনুশীলনে ডুবে ছিলেন বাভুমা। একেবারে ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলার চেষ্টা করছিলেন। কাগিসো রাবাডা ও কর্বিন বশের বলে বেশ কয়েক বার পরাস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁকে আউট করা যায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিার অনুশীলন শেষ হতেই মাঠে আবির্ভাব ঘটে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমের সামনে। তাঁকে দেখে প্রথমে কথা বলতে আসেন কেশব মহারাজ। প্রায় ২০ মিনিট গল্প করেন ব্রেভিসের সঙ্গেও।দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগে (এসএ২০) প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসে ব্রেভিস ও কেশবকে রেখেছেন সৌরভ। তাঁদের কোচের ঘরের মাঠে শুক্রবার থেকে এই দুই ক্রিকেটার জ্বলে উঠতে পারেন কি না,সেটাই এখন দেখার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)