নিয়মরক্ষার ম্যাচও হালকা ভাবে নিল না ভারত। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচও জিতল তারা। শতরান করলেন অভিষেক শর্মা। প্রথমে ব্যাট করে ২৪৭ রান করে ভারত। সেখানেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে যায়। বাকি কাজটা করলেন ভারতের বোলারেরা। চাপে পড়ে মাত্র ৯৭ রানে শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ড। ১৫০ রানে জিতল ভারত। অভিষেক একাই করেন ১৩৫ রান। তাঁর কাছেই ৩৮ রানে হারেন জস বাটলারেরা। এই জয়ের ফলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ় জিতলেন সূর্যকুমার যাদবেরা।
ওয়াংখেড়ের নায়ক অভিষেক
সুযোগ কী ভাবে কাজে লাগাতে হয় তা দেখালেন অভিষেক। সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে ইডেনে ৭৭ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরের তিনটি ম্যাচে রান পাননি । ওয়াংখেড়েতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক অভিষেক। পেসারদের বিরুদ্ধে হাত খোলেন তিনি। একের পর এক বড় শট মারেন। উইকেটের চার দিকে বড় শট মারছিলেন অভিষেক। ফলে তাঁর জন্য ফিল্ডার সাজাতে সমস্যায় পড়েন ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলার। মাত্র ১৭ বলে ৫০ রান করেন তিনি। অর্ধশতরানের পরেও থামেননি অভিষেক। পাওয়ার প্লে চলাকালীন যেমন খেলছিলেন, ফিল্ডিং ছড়িয়ে যাওয়ার পরেও একই ভাবে খেলেন। ওয়াংখেড়ের মাঠ ছোট। তা কাজে লাগানে এই বাঁহাতি ওপেনার। চারের থেকে বেশি ছক্কা মারেন অভিষেক। নিয়মরক্ষার ম্যাচেও বিনোদন এনে দেন তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল রোহিত শর্মার ৩৫ বলে শতরানের রেকর্ড ভেঙে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। ৩০ বলের পর কয়েকটি বল নষ্ট করেন তিনি। ফলে শতরান করতে দু’বল দেরি হয় তাঁর। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছন অভিষেক। ৫৪ বলে ১৩৫ রান করে আউট হন ভারতীয় ওপেনার। সাতটি চার ও ১৩টি ছক্কা মারেন তিনি।
ব্যর্থ সঞ্জু-সূর্যকুমার
আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ হলেন সঞ্জু স্যামসন ও সূর্যকুমার যাদব। শুরুটা ভাল করেছিলেন সঞ্জু। প্রথম ওভারে ১৬ রান করেন তিনি। কিন্তু আবার একটি শর্ট বলে বড় শট মারতে গিয়ে ১৬ রানের মাথায় আউট হলেন সঞ্জু। এই সিরিজ়ে বার বার একই ধরনের বলে আউট হয়েছেন তিনি। এই ম্যাচ শুরুর আগে তিনি এই শট মারা অনুশীলন করছিলেন। তার পরেও তা কাজে লাগল না। রান পেলেন না অধিনায়ক সূর্যও। ২ রান করে নিজের পছন্দের শট মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন তিনিও।
চিন্তা বাড়াল ভারতের মিডল ও লোয়ার অর্ডার
অভিষেক বিধ্বংসী ইনিংস খেললেও ভারতের মিডল ও লোয়ার অর্ডার চিন্তা বাড়াল কোচ গৌতম গম্ভীরের। অভিষেক বাদে তিলক বর্মা ২৪ ও শিবম দুবে ৩০ রান করেন। কিন্তু হার্দিক পাণ্ড্য, রিঙ্কু সিংহ, অক্ষর পটেলরা রান পেলেন না। ফলে যেখানে দেখে মনে হচ্ছিল ২৭০ রান করবে ভারত, সেখানে ২৪৭ রান করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল ভারতকে।
আরও পড়ুন:
শামির প্রত্যাবর্তন
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেও উইকেট পাননি। তাই ওয়াংখেড়েতে তাঁর দিকে নজর ছিল সকলের। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেন শামি। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে এসে প্রথম বলেই বেন ডাকেটকে আউট করেন। আগের দুই ম্যাচে ভাল খেলেছিলেন ডাকেট। সেখানেই থামেননি তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে এসে এক ওভারে আদিল রশিদ ও মার্ক উডকে ফেরান শামি। ২.৫ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। প্রত্যাবর্তনের পর এই স্পেল তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়াবে।
বল হাতেও সফল অভিষেক
ব্যাটের পর বল হাতেও নজর কাড়লেন অভিষেক। মাত্র এক ওভার বল করেন তিনি। দেন ৩ রান। ব্রাইডন কার্স ও জেমি ওভারটনকে আউট করেন তিনি। ওয়াংখেড়েতে নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি।
বরুণের ২ উইকেট, নজর কাড়লেন শিবম
এই ম্যাচেও উইকেট নিলেন বরুণ চক্রবর্তী। ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে বাটলার ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে ফেরালেন তিনি। গোটা সিরিজ়ে তাঁর বল বুঝতে পারলেন না ইংরেজ ব্যাটারেরা। সিরিজ়ের ৫টি ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি, যা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে রেকর্ড। বল হাতে নজর কাড়লেন শিবমও। অলরাউন্ডারের কাজ করলেন তিনি। ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন শিবম। আউট করেন ফিল সল্ট ও জেকব বেথেলকে।
চাপে ভেঙে পড়ল ইংল্যান্ড
২৪৮ রান তাড়া করা সহজ ছিল না। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে আরও ভাল ব্যাটিং আশা করেছিলেন দর্শকেরা। চাপে ভেঙে পড়ল ইংল্যান্ড। সল্ট ছাড়া কাউকে দেখে মনে হল না, কোনও লক্ষ্য নিয়ে নেমেছেন। মাত্র ১০.৩ ওভারে ৯৭ রানে অলআউট হয়ে গেল গোটা দল। ৫৭ বল বাকি থাকতে প্রতিপক্ষকে অলআউট করে দেওয়া মুখের কথা নয়। ৯৭ রানের মধ্যে ৫৫ রান একাই করলেন সল্ট। কিন্তু বাকিরা দলকে ডুবিয়ে দিলেন। তার ফলে যা হওয়ার তাই হল। ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারল ইংল্যান্ড।