Advertisement
E-Paper

প্রথম সারির ৩ ব‍্যাটার আউট! ৪ উইকেট হারিয়ে খানিক বিপাকে ভারত, জিততে চাই আরও ১৩৫, হাতে ৬ উইকেট

এক দিনে বদলে গেল টেস্টের ছবি। গোটা দিনে পড়ল ১৪ উইকেট। সোমবার পঞ্চম দিনে ফয়সালা হবে লর্ডস টেস্টের, যা পরিস্থিতি তাতে দু’দলের যে কেউ জিততে পারে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ২৩:০২
cricket

আউট হয়ে ফিরছেন শুভমন গিল। ছবি: পিটিআই।

রবিবার খেলা শুরু হওয়ার আগে দেখাচ্ছিল, এই টেস্ট ড্রয়ের সম্ভাবনা ৪৩ শতাংশ। পরের ৬১.১ ওভারে বদলে গেল ছবিটা। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পর দেখাল ভারতের পক্ষে জয়ের শতাংশ ৭৭। ইংল্যান্ডেরও সুযোগ ২৩ শতাংশ। তবে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হতে হতে ছবিটা আবার বদলাল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৩ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম সারির তিন ব্যাটার আউট হয়ে গিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ শুভমন গিল। রান পাননি যশস্বী জয়সওয়াল ও করুণ নায়ারও। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন লোকেশ রাহুল। ফলে কিছুটা হলেও বিপাকে ভারত। সোমবার পঞ্চম দিন হবে ফয়সালা। যা পরিস্থিতি, তাতে দু’দলের যে কেউই জিততে পারে ম্যাচ। লর্ডসে জিতে সিরিজ়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের দরকার আরও ১৩৫ রান। অন্য দিকে ইংল্যান্ডের চাই ৬ উইকেট।

তৃতীয় দিনের খেলার শেষ দিকে ম্যাচের উত্তাপ বেড়েছিল। জ্যাক ক্রলির সময় নষ্ট করার চেষ্টা ভাল ভাবে নেননি ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। বিবাদ হয় মাঠে। শুভমন গিল, মহম্মদ সিরাজদের উত্তেজিত দেখাচ্ছিল। সেই আগ্রাসন ভারতকে সুবিধা করে দিল। রবিবার খেলার শুরু থেকে বাড়তি আগ্রাসন দেখা গেল ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায়। তারই ফল পেল ভারত।

cricket

লর্ডস টেস্টের চতুর্থ দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রবিবার শুরু থেকেই শট খেলতে সমস্যা হচ্ছিল ক্রলির। বেন ডাকেট পাল্টা আক্রমণের পথে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ দিন লর্ডসের উইকেট দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, আগের তিন দিন এখানেই খেলা হয়েছে। বল পিচে পড়ে সুইং করছিল। অসমান বাউন্সও দেখা যাচ্ছিল। তাতে সমস্যায় পড়লেন ইংরেজ ব্যাটারেরা। ইংল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কা দেন মহম্মদ সিরাজ। ডাকেটকে আউট করেন তিনি। ওলি পোপ ও ক্রলিও বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। পোপকে ফেরান সিরাজ। ক্রলির উইকেট নেন নীতীশ রেড্ডি। প্রতিটা উইকেটের পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের উল্লাসের ধরন বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তৃতীয় দিনের উত্তাপ এখনও তাঁদের মন থেকে যায়নি। মাত্র ৫০ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় ইংল্যান্ডের।

প্রথম ইনিংসের মতো আরও এক বার ভারতীয় বোলারদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান জো রুট। এই মাঠে শেষ তিনটে টেস্ট ইনিংসে তিনটে শতরান রয়েছে তাঁর। তাই যত ক্ষণ তিনি ক্রিজ়ে ছিলেন, নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না শুভমনেরা। রুট এক দিকে ধীরে খেলছিলেন। অন্য দিকে আক্রমণ শুরু করেন হ্যারি ব্রুক। তাঁর খেলার ধরনই সেটা। দু’জনে মিলে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং তাঁদের সমস্যায় ফেলে।

ইংল্যান্ডের পরিকল্পনা তাদেরই বিরুদ্ধে কাজে লাগাল ভারত। শুভমনের বিরুদ্ধে যেমন উইকেটরক্ষককে উপরে এনে বল করছিল ইংল্যান্ড, সেই পরিকল্পনা রুট ও ব্রুকের বিরুদ্ধে করল ভারত। উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেলকে উপরে এনে আকাশদীপ ও নীতীশ এক লাইনে বল করে গেলেন। ক্রিজ় ছেড়ে বেরোতে না পারায় সমস্যা হচ্ছিল শট খেলতে। বাধ্য হয়ে আকাশদীপের বলে সুইপ মারতে গিয়ে ২৩ রানে মাথায় আউট হন ব্রুক।

বল কিছুটা পুরনো হওয়ার পর সুইং কমে যায়। ফলে রুট ও বেন স্টোকসের খেলতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছিল না। সেই সময় দুর্দান্ত বোলিং পরিবর্তন করেন শুভমন। দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে বল তুলে দেন তিনি। গোটা সিরিজ়ে ওয়াশিংটন বল হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। এই ইনিংসে করলেন। চা বিরতির আগে প্রথমে রুটকে ৪০ রানের মাথায় বোল্ড করলেন তিনি। তার পর ৮ রানের মাথায় জেমি স্মিথের বড় উইকেট তুললেন ভারতীয় স্পিনার। এই সিরিজ়ে নীচের দিকে স্মিথ ভারতকে বার বার সমস্যায় ফেলেছেন। সেই স্মিথ রান না পাওয়ায় আরও চাপে পড়ল ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের ইনিংসকে টানার দায়িত্ব একা ছিল স্টোকসের কাঁধে। কিন্তু তিনিও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না। সেই ওয়াশিংটনের বলেই সুইপ মারতে গিয়ে ৩৩ রানে বোল্ড হলেন স্টোকস। তার পরে আর বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি ইংরেজ ব্যাটারেরা। বাকি তিনটে উইকেটের মধ্যে বুমরাহ দুটো উইকেট নেন। সেই ওয়াশিংটনই ১৯২ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করে দেন। ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। বুমরাহ ও সিরাজ ২টি করে এবং নীতীশ ও আকাশদীপ ১টি করে উইকেট নেন।

১৯৩ রান খুব বেশি না হলেও চতুর্থ ইনিংসে যে কোনও লক্ষ্য তাড়া করা খুব সহজ নয়। বিশেষ করে লর্ডসের উইকেটে ভারতের বোলারেরা যে ভাবে বল করেছেন তাতে ইংল্যান্ডের বোলারেরাও যে সেখানে সুবিধা পাবেন তা বোঝা যাচ্ছিল। ভারতের দরকার ছিল শুরুটা ভাল করা। কিন্তু সেটা হল না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জফ্রা আর্চারের বলে শূন্য রানে ফিরলেন যশস্বী জয়সওয়াল। অফ স্টাম্পের বাইরে বাউন্সারে পুল মারার চেষ্টা করলেন তিনি। ম্যাচের এই পরিস্থিতিতে এই শট খেলা অপরাধ। যশস্বীর টেস্ট কেরিয়ারের শুরুটা খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু এখনও তাঁকে বুঝতে হবে যে কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে।

যেমনটা খেললেন লোকেশ রাহুল। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা অবসর নেওয়ার পর এই দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনিই। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগালেন রাহুল। তাঁকে সুবিধা করে দিলেন ওকস। ৫ রানের মাথায় নিজের বলে রাহুলের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন তিনি। করুণ ভাল ব্যাট করছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ভুল করার রোগ সারল না। ব্রাইডন কার্সের বল ছাড়তে গেলেন তিনি। বল গিয়ে লাগল প্যাডে। আম্পায়ার আঙুল তুললেন। ১৪ রানে আউট হলেন করুণ। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ভারতকে বড় ধাক্কা দিলেন কার্স। সিরিজ়ে ফর্মে থাকা শুভমনকে ৬ রানের মাথায় আউট করলেন তিনি। লর্ডসে দুই টেস্টেই ব্যর্থ ভারত অধিনায়ক। বাকি সময়ের জন্য নৈশপ্রহরী আকাশদীপকে নামায় ভারত। কিন্তু তিনিও আউট হয়ে যান। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৫৮। রাহুল ৩৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

India vs England 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy