আর মাত্র এক দিন বাকি। শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলেছে ‘অ্যাশেজ়’ সিরিজ়। এ বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে হবে পাঁচটি টেস্ট। কঠিন লড়াই ইংল্যান্ডের সামনে।
এখন ‘অ্যাশেজ়’ ট্রফি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে এই সিরিজ় ২-২ ড্র হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তার আগের বার ২০২১-২২ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় জিতেছিল, তাই ট্রফি তাদের কাছেই রয়েছে। ২০১০-১১ সালে শেষ বার সিডনিতে একটি টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। পরের ১৫ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একটি টেস্টও জিততে পারেনি তারা। তাই এ বার ‘অ্যাশেজ়’ পুনরুদ্ধারের কঠিন চ্যালেঞ্জ বেন স্টোকসদের সামনে।
‘অ্যাশেজ়’ কী?
প্রতি দু’বছর অন্তর ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ় হয়। এক বার ইংল্যান্ডে হলে পরের বার খেলা হয় অস্ট্রেলিয়ায়। আবার পরের বার ইংল্যান্ডে। এ ভাবে দুই দেশেই আয়োজিত হয় সিরিজ়। ইংল্যান্ডের মাটিতে এই সিরিজ় জুন থেকে অগস্ট মাসের মধ্যে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ় হয় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে। দু’দেশের কাছেই এটি সম্মানরক্ষার লড়াই।
কেন ‘অ্যাশেজ়’ নাম?
ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজ় প্রথম খেলা হয় ১৮৭৭ সালে। কিন্তু তখন অ্যাশেজ় নামকরণ হয়নি। মনে করা হয় ১৮৮২ সালে প্রথম ‘অ্যাশেজ়’ নাম দেওয়া হয় এই সিরিজ়কে। তবে এই নামকরণ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। এক পক্ষের মত, সেই বার ইংল্যান্ড দল প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর এক ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইম্স’ লেখে, ‘ইংলিশ ক্রিকেটের শবদাহ করা হয়েছে এবং ছাই (অ্যাশেজ) নিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া।’ তার উত্তরে তৎকালীন ইংরেজ অধিনায়ক ইভো ব্লি বলেন, “সেই ছাই আমরা ফিরিয়ে আনব।” এই ‘ছাই’ শব্দটাই এর পর সিরিজের নাম হয়ে যায় এবং লোক মুখে ছড়িয়ে পরে ‘দ্য অ্যাশেজ়’ নামটি। যদিও আরও একটি তত্ত্ব রয়েছে এই নামকরণের। শোনা যায়, ১৮৮২ সালে তিন ম্যাচের সিরিজ়ে দুই ম্যাচ জেতার পর ইংরেজ অধিনায়ককে মেলবোর্নের কিছু ভদ্রমহিলা একটি চিতাভস্ম রাখার পাত্র উপহার দেন। মনে করা হয়, সেটিতে ছিল ক্রিকেটের বেল-এর ছাই। তবে ইভো ব্লি-র উপহার পাওয়া সেই পাত্র-ই অ্যাশেজ়-এর এখনকার সেই ছোট্ট ট্রফিটা কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এখন যে ছোট্ট ট্রফিটা দেখা যায় সেটা আসলে রেপ্লিকা। এর আসলটা রাখা আছে লর্ডসের বিখ্যাত এমসিসি মিউজিয়ামে। আসল অ্যাশজ় ইংল্যান্ডের বাইরে গিয়েছে দু’বার। ১৯৮৮ সালে দ্বিশততমবর্ষীয় অ্যাশেজ সিরিজের সময় এবং ২০০৬-০৭ সালে এক প্রদর্শনীর সময়।
মুখোমুখি সাক্ষাতে এগিয়ে কে?
১৮৮২-৮৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত দু’দলের মধ্যে ৭৩টি সিরিজ় হয়েছে। তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৩৪ বার। ইংল্যান্ড ৩২ বার। সাত বার সিরিজ় ড্র হয়েছে। এ বার দু’দলের মধ্যে ৭৪তম সিরিজ় হতে চলেছে।
এ বার এগিয়ে কোন দল?
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্টিভ স্মিথরাই এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় যে ৩৬টি সিরিজ় হয়েছে, তার মধ্যে ২০টি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। তারা দেশের মাটিতে ৯০টি টেস্ট জিতেছে। সেখানে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫৬টি টেস্ট জিতেছে। দু’দলের মধ্যে ২৬টি টেস্ট ড্র হয়েছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে অবশ্য এগিয়ে স্টোকসেরা। ইংল্যান্ড নিজেদের দেশে ৫৪টি টেস্ট জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৫২টি। ৬৭টি টেস্ট ড্র হয়েছে।
ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ৩৭টি সিরিজ়ের মধ্যে ১৪টি জিতেছে। ১৮টি হেরেছে। পাঁচটি সিরিজ় ড্র হয়েছে। অপর দিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ড ৩৬টি সিরিজ়ের মধ্যে ১৪টি জিতেছে। ২০টি হেরেছে। দু’টি সিরিজ় ড্র হয়েছে। এই পরিসংখ্যান কাছাকাছি হলেও চারটি সিরিজ়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে দু’টি। বাকি দু’টি সিরিজ় ড্র হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় দু’টি সিরিজ় জয়ই নিজেদের দেশে। ফলে এ বারও ইংল্যান্ডের সামনে কঠিন পরীক্ষা।
আরও পড়ুন:
এ বারের অ্যাশেজ় সিরিজ়ের সূচি
২১ নভেম্বর থেকে পার্থে শুরু প্রথম টেস্ট। ভারতীয় সময় সকাল ৭:৫০ মিনিটে শুরু খেলা। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ৪ ডিসেম্বর থেকে। দুই টেস্টের মাঝে ক্যানবেরাতে একটি দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্ট হবে ব্রিসবেনে। খেলা শুরু ভারতীয় সময় সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে। ১৭ ডিসেম্বর থেকে অ্যাডিলেডে শুরু তৃতীয় টেস্ট। ভারতীয় সময় ভোর ৫.৩০ মিনিট থেকে শুরু খেলা। চতুর্থ টেস্ট ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট। ২৬ ডিসেম্বর থেকে মেলবোর্নে শুরু খেলা। ভারতীয় সময় ভোর ৫টা থেকে শুরু খেলা। ৪ জানুয়ারি থেকে সিডনিতে শুরু পঞ্চম তথা শেষ টেস্ট। সেই ম্যাচও শুরু হবে ভারতীয় সময় ভোর ৫টা থেকে।
কোথায় দেখা যাবে খেলা?
সরাসরি খেলা দেখা যাবে স্টার স্পোর্টস চ্যানেল ও জিয়োহটস্টার অ্যাপে।