জয়ের পর ভারতীয় দল। ছবি টুইটার
আবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ঢুকল ভারতের ঘরে। শনিবার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ট্রফি জিতে নিল যশ ঢুলের দল। এই নিয়ে পাঁচ বার ট্রফি জিতল তারা। ২০০০, ২০০৮, ২০১২, ২০১৮-র পর আবার। চাপে পড়েও গিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে অসাধারণ খেললেন ভারতের ব্যাটাররা।
রাজ অঙ্গদ বাওয়া কি শুরুটা দেখে ভাবতে পেরেছিলেন দিনটা এমন হতে পারে? নিজেকে অলরাউন্ডার ভাবা হরিয়ানার ক্রিকেটার এখনও পর্যন্ত জীবনের সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সব থেকে ভাল অলরাউন্ড পারফরম্যান্স উপহার দিলেন। প্রথমে বল হাতে ৩১ রানে ৫ উইকেট। তারপর ব্যাট হাতে চাপের মুখে ৩৫ রান। ফাইনালের রং একাই কেড়ে নিলেন তিনি। বাংলার রবি কুমারের কথাও ভুললে চলবে না। নিজের প্রথম এবং শেষ স্পেলে যে ধাক্কা ইংরেজ ব্যাটারদের দিলেন, তা ক্রিকেট সমর্থকদের মনে বহু দিন থেকে যেতে বাধ্য। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অপরাজিত থেকেই শেষ করল ভারত। একটি ম্যাচেও হারেনি তারা।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে টম প্রেস্টের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে যায়। ম্যাচের শুরু থেকেই স্বপ্নের ছন্দে ছিলেন রবি কুমার। দ্বিতীয় ওভারেই তিনি তুলে নেন ওপেনার জ্যাকব বেথেলকে। রবির ভেতরে ঢুকে আসা বিষাক্ত বল বুঝতেই পারেননি জ্যাকব। বল সোজা গিয়ে তাঁর প্যাডে লাগে। চতুর্থ ওভারে ফের সাফল্য। এ বার রবির শিকার প্রতিযোগিতায় দারুণ ছন্দে থাকা টম প্রেস্ট। অফ স্টাম্পে থাকা হাফভলি বলে কাট করতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটের কানায় লেগে ঢুকে এসে উইকেট ভেঙে দেয়।
এরপর শুরু হয় রাজের জাদু। পরপর তিনি তুলে নেন জর্জ থমাস, উইলিয়াম লাক্সটন, জর্জ বেল এবং রেহান আহমেদকে। সামান্য কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার পর ফেরেন অ্যালেক্স হর্টনও। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ইংল্যান্ড। ভারতের খুদেদের স্বপ্ন ছিল ইংল্যান্ডকে ১০০-র মধ্যে শেষ করে দেওয়ার। কিন্তু মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে গেলেন দুই জেমস। একজন রিউ, অপরজন সেলস। দুই জেমসের মরণপণ লড়াইয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেলেন যশ ঢুলরা। অষ্টম উইকেটে দু’জনের জুটি ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরাল।
কিন্তু প্রথম স্পেলের মতোই শেষ স্পেলে বল করতে এসে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন রবি। বাংলার পেসারের বল মিড অন দিয়ে ওড়াতে গিয়ে আউট হলেন রিউ। শতরানের থেকে মাত্র ৫ রান দূরে। কৌশল তাম্বেরও প্রশংসা প্রাপ্য। বল প্রথমে হাত থেকে ফস্কে গিয়েছিল। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে ক্যাচ ধরে নেন। রিউ ফেরার পর ৫ রানের মধ্যেই ইংল্যান্ডের বাকি দুই উইকেটের পতন হয়।
ভারতের শুরুটাও ভাল হয়নি। দ্বিতীয় বলেই ফিরে যান ছন্দে থাকা অঙ্গক্রিশ রঘুবংশী। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে প্রথম উইকেটে জুটি গড়ছিলেন হর্নুর সিংহ এবং শেখ রশিদ। কিন্তু লেগ সাইডের বল ছাড়তে গিয়ে গ্লাভসে লাগে হর্নুরের। উইকেটকিপার সহজেই ক্যাচ ধরেন। দায়িত্ব এসে পড়েছিল সেই রশিদ এবং যশের কাঁধেই। সেমিফাইনালে চাপের মুখে অসাধারণ জুটি গড়েছিলেন দু’জনে। ফাইনালেও ভালই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ার আগেই ফিরলেন রশিদ। অর্ধশতরান করেই তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়লেন। কয়েক বল পরে আউট ঢুলও। পরপর দু’উইকেট নিয়ে তখন রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড।
সেই আশায় জল ঢেলে দিলেন নিশান্ত সিন্ধু এবং রাজ। দু’জনে মিলে পঞ্চম উইকেটে যে ৬৭ রানের জুটি গড়লেন, তাই ভারতকে বিশ্বকাপ জয়ের দিকে এগিয়ে দিল। নিশান্তের আলাদা করে প্রশংসা প্রাপ্য। যশ যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব সামলেছেন। তার পরে নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আসল সময়ে তাঁর ব্যাট থেকে বেরোল দায়িত্ববান ইনিংস। এক বারের জন্যেও খারাপ শট খেলেননি। চেষ্টা করছিলেন প্রতি বলে রান নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করার। রাজ ফেরার পর নিজেই দায়িত্ব নিলেন ম্যাচ শেষ করার। যোগ্য সঙ্গত দিলেন দীনেশ বানা। ৪৮তম ওভারে পরপর দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ এবং ট্রফি এনে দিলেন ভারতের ঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy