ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যখন তিনি ছিলেন ৮০-র ঘরে, বেন স্টোকস এসে হাত মিলিয়ে ম্যাচ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। টেস্টে দু’বার শতরানের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। তৃতীয় বারও কি দোরগোড়ায় এসেই হবে স্বপ্নভঙ্গ? ঢাল হয়ে দাঁড়ান তাঁর সতীর্থ রবীন্দ্র জাডেজা। জানিয়ে দেন, তাঁরা আপাতত ব্যাট করবেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি অবশ্যই ওয়াশিংটন সুন্দর। ম্যাঞ্চেস্টারে সচিন তেন্ডুলকরের প্রথম শতরানের মাঠে তাঁর স্বপ্নপূরণ।
২০২ বল খেলে ১০১ রান করে সিরিজ়ে ভারতকে টিকিয়ে রেখেছেন ওয়াশিংটন। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ভারতের প্রথম একাদশে খেলছেন তিনি। ছয় ইনিংস মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ব্যাট করেছেন ৪৮৬ বল। রান ২০৫। ওয়াশিংটন প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি টেস্টের জন্য আদর্শ।
কী ভাবে রক্ষণ এত মজবুত ভারতীয় অলরাউন্ডারের? কী করেই বা এত বল সামলে নেওয়ার ক্ষমতা? ওয়াশিংটনের বাবা এম. সুন্দর বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী। সব সময় নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়েছে। কিটব্যাগ গোছানো থেকে খেলার জুতো পরিষ্কার করা, আমরা কখনও সাহায্য করিনি। ওয়াশিংটন বুঝেছিল, এইপৃথিবীতে কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। তাই পরিশ্রম করতে কখনও পিছিয়ে আসে না ও।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর অসীম ধৈর্য। মাত্র ১১ বছর বয়সে টিএনসিএ-র অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে ২০টির উপরে শতরান করে ফেলেছিল। ১৪ বছর বয়সে তামিলনাড়ুর প্রথম ডিভিশনে প্রথম শতরান করেছিল। সেই সময় ওর বিরুদ্ধে জি. ভিগনেশ, এস. সতীশের মতো ক্রিকেটার খেলেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধেও শতরান করেছিল।’’
কী করে ডিফেন্স এত মজবুত হল ওয়াশিংটনের? তাঁর বাবা বলছিলেন, ‘‘সিঙ্গল স্টাম্পে ব্যাট করত। পেসারদের বিরুদ্ধেও একটি উইকেট নিয়ে ব্যাট করার চেষ্টা করত। স্টাম্পের মাঝে বল লাগা মানে ব্যাট হাতে নিখুঁত ডিফেন্স হবেই।’’ যোগ করেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে খেলার আগে ও বড় শট খেলত না। অনেক বেশি বল খেলে রান করত। বরাবরই রক্ষণাত্মক ব্যাটসম্যান। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে ও দেখল আইপিএল খেলতে হবে। বড় শট না খেললে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়িই ওকে নেবে না। পাশাপাশি রাজ্যের টি-টোয়েন্টি দলেও ঢোকার একটা লড়াই ছিল। সেই সময় থেকে বড় শট নিতে শুরু করল।’’
এম. সুন্দরের আক্ষেপ, আমদাবাদে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলার পরেও তিন বছর টেস্ট দলের বাইরে রাখা হয় ওয়াশিংটনকে। বর্তমান হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ ওয়াশিংটনকে সুযোগ দেওয়ায়। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘ওয়াশিংটনকে কেন টেস্ট দলে নেওয়া হত না জানতাম না। জীবনের প্রথম চারটি টেস্টে দু’বার শতরানের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ও। ক’জনের এই রেকর্ড থাকে? গৌতম গম্ভীর ওর প্রতিভাকে দাম দিয়েছেন। আশা করি, ও নিয়মিত সুযোগ পাবে।’’
ম্যাঞ্চেস্টারে প্রথম শতরানের পরে ছেলেকে ভিডিয়ো কল করেছিলেন বাবা। কী কথা হল? এম. সুন্দর বলছিলেন, ‘‘ওকে বললাম, তুমি তো এখন সুপারস্টার। কিন্তু অতিরিক্ত উৎসব কোরো না। ওভাল টেস্ট জিতে ফিরলে বাড়িতে উৎসব হবে।’’
ওয়াশিংটনের অন্যতম কোচ ডি. বাসু তাঁর বোলিং উন্নতি করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বল বেশি ঘোরে না, কিন্তু হাওয়ায় বাঁক খেয়ে বাইরের দিকে যায়। ব্যাটিং পিচেও সফল হন তিনি। নেপথ্যে কারণ কী? ডি. বাসুর উত্তর, ‘‘বর্তমান ক্রিকেটে খুব একটা ফ্লাইট দেওয়া যায় না। বাউন্ডারি ছোট হয়ে গিয়েছে।ঠিক মতো টাইমিং না হলেও ছক্কা হয়ে যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘ওয়াশিংটনকে বলা হয়েছিল জোরের উপরে বল করতে। পিচ থেকে সাহায্য পেলে যাতে দ্রুত বলঘোরে। না ঘুরলে ব্যাটসম্যান যেন বড় শট খেলার সময় না পায়। সিম ধরে দ্রুত বল করলে হাওয়ায় বাঁক খাবেই। এটাই এখন ওর অস্ত্র। লর্ডস ও ম্যাঞ্চেস্টারে অসাধারণ বল করল। যে পিচ থেকে স্পিনাররা কিছু আশাই করেনি, সেখানে উইকেটবার করেছে।’’
তামিলনাড়ুর বর্তমান কোচ এম. সেন্থিলনাথান মুগ্ধ। বলছিলেন, ‘‘ওর ইনিংস বর্তমান ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করবে। আর. অশ্বিনের অবসরের পরে ও-ই তোআমাদের অনুপ্রেরণা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)