Advertisement
E-Paper

৭৮ ওভার, ১৫ উইকেট ‘ফিট’ শামির! আগরকরদের কাছে আর কী পরীক্ষা দিতে হবে, কেন টেস্টে সুযোগ পাবেন না ‘লালা’?

রঞ্জির দু’ম্যাচে মোট ৭৮ ওভার বল করেছেন মহম্মদ শামি। তার মধ্যে ১৮টা মেডেন। দিয়েছেন ১৫৭ রান। নিয়েছেন ১৫ উইকেট। রঞ্জিতে চলতি মরসুমে তৃতীয় সর্বাধিক উইকেটের মালিক তিনি।

দেবার্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮
Mohammed Shami

৮ উইকেট নিয়ে বাংলাকে জিতিয়েছেন শামি। হাতে সেই ম্যাচ জেতানো বল। ছবি: এক্স।

মোরাদাবাদে বসে তিনি বলছেন, “পুরানা লালা কো দেখ রহা হুঁ। কিসি কো সমঝই নেহি আ রহা হ্যায়, বল গিরকে কিধর যায়ে গা।” সেই পুরনো মহম্মদ শামিকে দেখতে পাচ্ছেন মহম্মদ বদরুদ্দিন। মোরাদাবাদে বসে শামির দেখতে দেখতে তিনি বুঝতে পারছেন, প্রতিপক্ষের ব্যাটারেরা বুঝতে পারছেন না, তাঁর ছাত্রের বল পিচে পড়ে কোনদিকে বাঁক নিচ্ছে।

ব্যাটারেরা বল বুঝতে পারছেন না। কোচ বুঝতে পারছেন, তাঁর ছাত্র শামি ছন্দে। কিন্তু অজিত আগরকর কি বুঝতে পারছেন?

রঞ্জি ট্রফির দু’টি ম্যাচে মোট ৭৮ ওভার বল করেছেন শামি। ১৮টি মেডেন। দিয়েছেন ১৫৭ রান। অর্থাৎ, ওভার প্রতি মাত্র ২। নিয়েছেন ১৫ উইকেট। রঞ্জিতে চলতি মরসুমে তৃতীয় সর্বাধিক উইকেটের মালিক তিনি। ৩৫ বছর বয়সেও তরুণদের টেক্কা দিচ্ছেন। তথ্যই যদি পারফরম্যান্স মাপার নিক্তি হয়, তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে কেন ভারতীয় দলে থাকবেন না মহম্মদ শামি? প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়েই শামিকে ভারতীয় দলে নেওয়া উচিত ছিল। তাঁর বক্তব্য, “শামির ফিটনেস নিয়ে কি আর কোনও প্রশ্ন কারও থাকতে পারে? লম্বা লম্বা স্পেল করছে। উইকেট নিচ্ছে। আমার তো মনে হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়েই ওকে নেওয়া উচিত ছিল। ওরা অর্ধেক ফিট শামিকেও সামলাতে পারত না। এখন তো শামি পুরো ফিট!”

cricket

ইডেনে বাংলার হয়ে রঞ্জি ম্যাচে মহম্মদ শামি। ছবি: পিটিআই।

গৌতম গম্ভীর-অজিত আগরকর জুটি ভারতীয় ক্রিকেটের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, চোট সারিয়ে যে কেউ সরাসরি জাতীয় দলে ঢুকতে পারবেন না। তাঁকে ‘পরীক্ষা’ দিতে হবে। পরীক্ষার নাম ঘরোয়া ক্রিকেট। রঞ্জি, দলীপ, বিজয় হজারের মতো প্রতিযোগিতা খেলে নিজেদের ফিটনেস এবং ফর্ম প্রমাণ করতে পারলেই ভারতীয় দলে খেলা যাবে।

শামি প্রমাণ করেছেন। কিন্তু ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা হয়নি। কিন্তু চোট সারিয়ে সরাসরি ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়ক হয়েছেন ঋষভ পন্থ।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের দল ঘোষণার সময় আগরকর জানিয়েছিলেন, শামির ফিটনেস সম্পর্কে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। চোট সারিয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি শামি। যা শুনে শামি পাল্টা জানিয়েছিলেন, তথ্য দেওয়া তাঁর কাজ নয়। বোর্ড তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তিনি মাঠে নেমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। আপাতত তিনি ভরসা রাখছেন, নির্বাচকমণ্ডলী নয়, ভাগ্যের উপর। বলছেন, “আমার হাতে যা ছিল করেছি। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। দেখা যাক ভাগ্য আমায় কতদূর নিয়ে যায়।’’ তবে চোট সারিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলে ফেরার নিয়মে কোনও সমস্যা দেখেন না বাংলার পেসার।

শামির প্রধান শক্তি তাঁর ছন্দ। নিজের ছন্দে থাকলে তাঁর থেকে ভয়ঙ্কর বোলার বিশ্বক্রিকেটে এখনও কম রয়েছে। শামির ছন্দে পৌঁছনোর পদ্ধতি আলাদা। উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় নিজের বাড়িতে ২২ গজের পিচ বানিয়েছেন়। সেখানেই ক্রমাগত বল করে যান তিনি। যত বল করেন, তত ছন্দে ফেরেন। বদরুদ্দিন ছাত্রের মধ্যে সেই ছন্দ দেখতে পাচ্ছেন। বলছেন, “লালা (এই নামেই শামিকে ডাকেন বদরুদ্দিন) বাকিদের চেয়ে আলাদা। বাকিরা ফিট হয়ে মাঠে নামে। আর ও যত বেশি বল করে, তত ফিট হয়। আগের ম্যাচে ওকে ১০০ শতাংশ ফিট দেখিয়েছে। পুরনো শামির মতো। সম্পূর্ণ অন্য বোলার মনে হচ্ছে ওকে।” ব্যাখ্যা করে বলেন, “ওর সিম পজিশন দেখুন। ওটাই বুঝিয়ে দেয় ও কতটা ফিট। এর মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে। খুব তাড়াতাড়ি ওকে ভারতীয় দলে ফেরানো উচিত। নইলে অন্যায় হবে।”

এমন ‘অন্যায়’ অবশ্য শামির সঙ্গে আগেও হয়েছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে মাত্র ৭ ম্যাচে সর্বাধিক ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন। অথচ প্রথম চার ম্যাচে খেলার সুযোগই পাননি! হার্দিক পাণ্ড্য চোট পেয়ে ছিটকে না গেলে হয়তো গোটা প্রতিযোগিতা বেঞ্চে বসেই কেটে যেত শামির। কিন্তু মুখে কিছু বলেননি তিনি। পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন।

প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি বলছেন, লজ্জা পাওয়া উচিত গম্ভীর-আগরকরের। তাঁর অভিযোগ, কোচ এবং প্রধান নির্বাচকের ‘প্রিয়পাত্র’ না হওয়াতেই শামিকে দলে নেওয়া হচ্ছে না। মনোজের প্রশ্ন, ‘‘শামির সঙ্গে কি হর্ষিত রানার তুলনা হতে পারে? এক জন এত বছর ধরে দেশকে জেতাচ্ছে। অন্য জন ১০টা রঞ্জিও খেলেনি!’’ বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলেছেন, “শামি প্রায় ৫০০ উইকেট নিয়েছে। ওর কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই। ও কী বল করছে, সেটা সকলে দেখতে পাচ্ছেন। যখন ভারতের হয়ে প্রথম নেমেছিল আর এখনকার বোলিংয়ের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। আরে, এ বার তো ওকে টিমে নিয়ে নাও!”

cricket

ইডেনে বাংলার হয়ে রঞ্জি ম্যাচে মহম্মদ শামি। ছবি: পিটিআই।

বাংলার শেষ দু’টি ম্যাচে শামির সঙ্গেই খেলেছেন অনুষ্টুপ মজুমদার। কাছ থেকে দেখে শামির পেস বা ফিটনেসে কোনও সমস্যা আছে বলে মনে হয়নি তাঁর। অনুষ্টুপের কথায়, “শামি উইকেট না পেলেও ওর ভারতীয় দলে খেলা উচিত। ওর অভিজ্ঞতার জন্য। এত বছর ধরে খেলছে! শামি তো বুঝিয়ে দিল, ওর ফিটনেসে কোনও সমস্যা নেই। চোট সারিয়ে ফিরে প্রায় ৩০০ ওভার বল করেছে। আর কী প্রমাণ ওকে দিতে হবে? আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে ওকে খেলতে দেখতে চাই।”

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ের দল ঘোষণার আগে আর একটি রঞ্জি ম্যাচ খেলতে পারবেন শামি। ত্রিপুরার বিরুদ্ধে। যা শুরু হচ্ছে আজ, শনিবার। আশা করা যায়, শামি তাঁর ছন্দে থাকবেন। অতঃপর? অনুষ্টুপের আশা পূরণ হবে?

Mohammed Shami India Cricket Ajit Agarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy