Advertisement
E-Paper

গৌতম-গাম্ভীর্য দমিয়ে রাখছে ক্যাপ্টেন গিলকে! শুভমনই শেষ কথা বলুন, চাইছেন প্রাক্তনেরা

কে চালাচ্ছেন ভারতীয় দল? গৌতম গম্ভীর না শুভমন গিল? ভারতীয় সাজঘরের ‘বস্’ কে? নতুন অধিনায়কের হাবভাব দেখে, দলগঠন দেখে এ বার মুখ খুলতে শুরু করলেন গাওস্কর, ভন, হুসেনরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৪:১০
picture of cricket

(বাঁ দিকে) গৌতম গম্ভীর এবং শুভমন গিল (ডান দিকে)। ছবি: এক্স।

শেষ কথা বলতে হবে অধিনায়ককেই। মাঠে তো বটেই, সাজঘরেও। কী দল খেলবে, ক্যাপ্টেনই শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন! কিন্তু ভারতীয় দলে সেটা হচ্ছে কি? সন্দেহ প্রকাশ করছেন প্রাক্তন তারকারা। প্রাক্তন অধিনায়কেরা।

রোহিত শর্মা সরে যাওয়ার পর, ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় টেস্ট দলের নতুন অধিনায়ক করা হয়েছে শুভমন গিলকে। ব্যাটার শুভমন ইংল্যান্ডের মাটিতে সফল। এশিয়ার প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ়ে ৬৫০-এর বেশি রান করার নজির গড়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, অধিনায়ক শুভমন কি স্বাধীন ভাবে দল পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন? না কি কোচ গৌতম গম্ভীর তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছেন? ভারতীয় দলের কোচ-অধিনায়ক সম্পর্ক ঠিক কোন পর্যায়ে? ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের চতুর্থ দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে তিন প্রাক্তন ক্রিকেটারের আলোচনাতেও সেটাই হয়ে উঠল মুখ্য বিষয়।

ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে আলোচনায় বসেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন এবং মাইকেল ভন। ছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাওস্কর। গম্ভীর-শুভমন সম্পর্ক নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন গাওস্কর। গাওস্করের বক্তব্য, ‘‘কোচ দলকে টেস্ট ম্যাচের জন্য তৈরি করে দেবেন। দল খেলতে নামলে দায়িত্ব অধিনায়কের। মাঠে অধিনায়ককেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় পরিস্থিতি বুঝে। সেখানে কোচের ভূমিকা থাকে না। কোন ১১ জন খেলবে, ব্যাটিং অর্ডার কেমন হবে— এ সব নিয়ে কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে আলোচনা হবে নিশ্চয়ই। দিনের খেলা শুরুর আগে, বিরতিতে বা খেলা শেষের পর কোচ পরামর্শ দিতে পারেন।’’ কিন্তু ওই পর্যন্তই, মনে করেন গাওস্কর।

গাওস্করের কথার সূত্র ধরে ভনের আঙুল গম্ভীরের কোচিংয়ের দিকেও। বললেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে কোচিংয়ের সঙ্গে সাদা বলের ক্রিকেটের কোচিংকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। যেমন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার মানুষ। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে চলে। টেস্ট ক্রিকেট দীর্ঘ সময়ের খেলা। শক্ত খেলা। প্রতি দিন ক্রিকেটারদের দিকে আলাদা আলাদা ভাবে নজর দিতে হয়। টেস্টে ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। কার কী ভূমিকা হবে, সেটা ঠিকমতো বুঝিয়ে দিতে হয়। ক্রিকেটারদের মানসিকতা ঠিক রাখতে হয়। মাঠে নেমে তারা যাতে খেলাটা উপভোগ করতে পারে, সেটা দেখতে হয়। টি-টোয়েন্টি বা এক দিনের ক্রিকেটের মতো ভাবলে হবে না।’’ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক তার পর বলেই ফেললেন, ‘‘গম্ভীর সাদা বলের ক্রিকেটের কোচ হিসাবে বেশ ভাল। কিন্তু টেস্টের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি দরকার। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের উদাহরণ দিতে পারি। দিন ধরে ধরে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে। কোচ হিসাবে ফ্লাওয়ার কেমন, সেটা সকলে দেখেছেন। গত ২০ বছরে ফ্লাওয়ারই সম্ভবত সেরা কোচ।’’

চলতি সিরিজ়ে ব্যাটার শুভমন সাফল্য পেলেও ভারতীয় দলের সার্বিক পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। প্রথম তিনটি টেস্টের দু’টি হারার পর চতুর্থ টেস্টেও হারের মুখে শুভমনেরা। ব্যক্তিগত ভাবে কয়েক জন ক্রিকেটার ভাল পারফর্ম করলেও দলগত সাফল্য আসছে না। পরিকল্পনাতেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। গাওস্করের ইঙ্গিত অধিনায়কের স্বাধীনতার দিকেই। বলছেন, ‘‘শুভমন হয়তো আরও আট-দশ বছর খেলবে। এখন ওর বয়স ২৪ বা ২৫। ওকে নিজের দল তৈরি করে নিতে হবে। এখন বয়স কম। হয়তো তাই আত্মবিশ্বাসের একটু অভাব রয়েছে। কোচ গম্ভীর বেশ কঠিন চরিত্রের। অধিনায়কত্বের শুরুতে শুভমনের কাছে এটাই হয়তো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’’

ইংল্যান্ডের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক হুসেনের মতে, শুভমনের বয়স কম। সবে নেতৃত্ব পেয়েছেন। এখনই গম্ভীরের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোচের কাছে নিজের দাবি স্পষ্ট করে জানানো কঠিন। তাঁর কথায়, ‘‘রিকি পন্টিং, ব্রায়ান লারা, গ্রেম স্মিথের কথা বলতে পারি। এখনকার অধিনায়কদের মধ্যে বেন স্টোকস, প্যাট কামিন্সের কথা বলব। অধিনায়ক হিসাবে এরা সাজঘরেও যথেষ্ট সাহসী। অধিনায়ককে বোঝাতে হয়, দলটা তার। শুভমন এই সিরিজ় থেকে অনেক কিছু শিখবে। অধিনায়কত্বও শিখতে হয়। অধিনায়ককে নিজের উপস্থিতি বোঝাতে হয়। কেমন দল নিয়ে খেলতে চাইছে, সেটা পরিষ্কার করে বলতে হয়। না হলে শক্তিশালী অধিনায়ক হওয়া কঠিন। শুভমন এখনও সেই পর্যায় পৌঁছোতে পারেনি।’’ তাঁর মতে, মানসিক অস্বস্তি থাকলে ভাল নেতৃত্ব দেওয়া যায় না।

তাঁর কথার সূত্র ধরে গাওস্কর বলেন, ‘‘দিনের শেষে দলটা অধিনায়কের। ও যদি শার্দূল ঠাকুর বা কুলদীপ যাদবকে প্রথম একাদশে চায়, তা হলে তাদেরই খেলানো উচিত। কারণ ও অধিনায়ক। সকলেই শুভমন এবং ওর নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলবে। দলের ভিতরের সব কিছু বাইরে আসে না। জানাও সম্ভব নয়। তবে দায় অধিনায়কেরই। কারণ, মাঠের লড়াইয়ে সেই দলকে নেতৃত্ব দেয়।’’ উল্লেখ্য, ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের আগে আকাশদীপ চোট পাওয়ায় দলে নেওয়া হয়েছে অংশুল কম্বোজকে। শোনা যাচ্ছে, গম্ভীরের ইচ্ছাতেই কম্বোজ টেস্ট দলে এসেছেন (সরকারি ভাবে কোনও পক্ষই এ নিয়ে কিছু বলেনি)। অথচ তিনি কখনও আলোচনাতেই ছিলেন না। ওল্ড ট্রাফোর্ডে তাঁর পারফরম্যান্সও অত্যন্ত সাধারণ। প্রশ্ন উঠছে বলের গতি নিয়েও।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে গাওস্কর বলেছেন, ‘‘আমাদের সময় কোচ থাকত না। প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা ম্যানেজার বা সহকারী ম্যানেজার হতেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা অনেক সহজ ছিল। বিরতিতে বা খেলার আগে-পরে পরামর্শ নেওয়া যেত। তাই কোচ-অধিনায়কের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, এটা আমার পক্ষে বলা একটু কঠিন। আমি অধিনায়ক থাকার সময় তেমন কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটারকে দলের সঙ্গে পাইনি। উইং কমান্ডার দুরানি বা রাজ সিংহ দুঙ্গারপুর ছিলেন। এক বার এরাপল্লি প্রসন্নকে পেয়েছিলাম। তিনি দারুণ সাহায্য করেছিলেন।’’

ভনের মতে, টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০টি উইকেট নিতে হয়। ভারতীয় দলের মধ্যে তিনি সেই মানসিকতা দেখতে পাচ্ছেন না। শুভমনের দলকে তাঁর রক্ষণাত্মক মনে হচ্ছে। ভন বলেছেন, ‘‘প্রথম টেস্টে ৩৭০ রান হাতে নিয়েও ইংল্যান্ডকে চতুর্থ ইনিংসে অলআউট করতে পারেনি ভারত। তৃতীয় টেস্টে আবার ১৯৩ রান তাড়া করতে পারেনি। দলে কুলদীপ যাদবের মতো স্পিনার রয়েছে। অথচ সে পরিকল্পনায় নেই! লর্ডস, ম্যাঞ্চেস্টারে কুলদীপকে খেলানো উচিত ছিল। চতুর্থ টেস্টে কেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের কথা ভাবা হল না? ভারত একটু বেশি নিরাপদ থাকতে চাইছে। মনে হচ্ছে, কোচ-অধিনায়কের ভাবনায় পার্থক্য রয়েছে।’’

ভারতীয় দলের সাজঘরের পরিবেশ নিয়ে জল্পনা চলছে গত অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই। তখনও রোহিত শর্মার সঙ্গে গম্ভীরের সম্পর্ক চর্চার মুচমুচে বিষয় হয়ে উঠেছিল। অধিনায়ক বদলের পরও ইংল্যান্ড সফরে আলোচনার বিষয় একই। গম্ভীর কি দলকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছেন? অধিনায়কদের মতামত গুরুত্ব দিচ্ছেন না? কোচের থেকে বেশি বস্ হতে চাইছেন! যাঁর অধীনে অধিনায়কও দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। গম্ভীর জমানায় টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের পারফরম্যান্স ঘিরে প্রশ্ন উঠছেই।

গম্ভীর কোচ হওয়ার পর ভারতীয় দল এই নিয়ে চতুর্থ টেস্ট সিরিজ় খেলছে। পারফরম্যান্স বেশ খারাপ। প্রথম সিরিজ়ে দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ২-০ হারিয়েছিল ভারত। ওখানেই শেষ। তার পর ভারতে এসে ভারতকে ৩-০ ম্যাচে হারিয়ে সিরিজ় জিতে নিয়ে যায় নিউ জ়িল্যান্ড। তার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ১-৩ হার। চলতি সিরিজ়ে ১-২ ম্যাচে পিছিয়ে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে চতুর্থ টেস্টে জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই। হার বাঁচানোই খুব কঠিন। এই সিরিজ়ের ফল কোচ গম্ভীরের ভবিষ্যৎ আবার ঘুরিয়ে দিতেই পারে। অধিনায়কদের উপর দাদাগিরির অভিযোগ তখন আরও বেশি করে উঠবে।

India vs England 2025 Test Series Shubman Gill Gautam Gambhir Relation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy