Advertisement
E-Paper

দেশের হয়ে একটিও ম্যাচ খেলেননি, তবু ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষপদে, কেন মনহাসকেই বেছে নেওয়া হল বোর্ড সভাপতি হিসাবে?

ভারতের ক্রিকেটে বোর্ড সভাপতি-সহ বাকি পদে নির্বাচন যে হবে না, তা আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে কৌতুহল ছিলই। সকলকে চমকে দিয়ে সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মিঠুন মনহাস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১৩
cricket

মিঠুন মনহাস। ছবি: সমাজমাধ্যম।

ভারতের ক্রিকেটে বোর্ড সভাপতি-সহ বাকি পদে নির্বাচন যে হবে না, তা আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে কৌতুহল ছিলই। সকলকে চমকে দিয়ে সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মিঠুন মনহাস। তা দেখে অনেকেই বিস্মিত। দেশের হয়ে একটিও ম্যাচ না খেলা ক্রিকেটার কী ভাবে বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে বসতে চলেছেন, তা বুঝছেন না অনেকেই। এর নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের গভীর অঙ্ক এবং মনহাসের চতুর বুদ্ধি। মনহাসকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন তাঁরাই বলছেন, কোথায়, কী ভাবে কার কাছে প্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে হয় তা মনহাসের থেকে ভাল কেউ জানেন না।

বোর্ডের নির্বাচনকে দীর্ঘ দিন কাছ থেকে দেখা এক প্রবীণ প্রশাসক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, “বিজেপি নেতৃত্ব কী ভাবে দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে নিয়েছে দেখুন। কেউ যদি দাবি করেন তিনি আগে থেকে জানতেন যে রেখা গুপ্ত, মোহন যাদব এবং ভজনলাল শর্মা শীর্ষপদে বসবেন, তা হলে অসত্য বলছেন। কেউ জানতেও পারেননি।”

তাঁর সংযোজন, “বোর্ডের ক্ষেত্রে, হাতে বিকল্প কম ছিল। মনহাসের মতো ক্রিকেটার যুগ্ম সচিব হলে ঠিক ছিল। বিশেষ করে যেখানে টেস্ট খেলা একজন (রঘুরাম ভট্ট) কোষাধ্যক্ষের পদ পেয়েছে। যখন ইলেক্টোরাল রোলে তিন জন টেস্ট খেলা ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের মধ্যে দু’জন ১০০-রও বেশি টেস্ট খেলেছে (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হরভজন সিংহ), তখন মনহাসের বোর্ড সভাপতি হওয়া বিস্ময়কর তো বটেই।”

দিল্লি ক্রিকেটমহলে প্রাক্তনদের অনেকেই জানিয়েছেন, মনহাস বরাবরই উজ্জ্বল, চালাক এবং বুদ্ধিমান মানুষ। আকাশ চোপড়া বলেছেন, “মনহাসকে সকলেই পছন্দ করে। ও এমন সময় দিল্লির নেতৃত্ব দিয়েছে যখন অনেক বড় বড় তারকা ছিল দলে। ভারতের হয়ে খেলা ক্রিকেটারেরা ওর নেতৃত্বে খেলেছে। ও সকলকেই দারুণ ভাবে সামলেছে।”

আকাশের সংযোজন, “অনূর্ধ্ব-১৬-য় জম্মু ও কাশ্মীরের হয়ে খেলেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে দিল্লির হয়ে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। দিল্লি সিনিয়র দলেও খেলেছি।”

জুনিয়র পর্যায়ের একটি গল্প তুলে এনেছেন আকাশ। বলেছেন, “মিঠুন আর আমি ভিড় ট্রেনে সুরত থেকে মুম্বইয়ে যাচ্ছিলাম বয়সভিত্তিক ম্যাচ খেলতে। আমার ঘুম পাচ্ছিল। মিঠুনকে বলেছিলাম আমার নতুন জুতোর খেয়াল রাখতে। সিটের তলায় বাক্সে জুতোটা রাখা ছিল। মিঠুনের সঙ্গেও নতুন জুতো ছিল। ও আমার জুতোর উপর পা তুলে শুয়ে থাকল, যাতে কেউ সেটা চুরি করতে না পারে। মুম্বই পৌঁছে দেখলাম, মিঠুনেরই জুতো চুরি হয়ে গিয়েছে। ও এ ভাবেই বন্ধু বানাতে পারত।”

দিল্লির হয়ে খেলা আর এক ক্রিকেটার বলেছেন, “এক কথায় মিঠুন হল স্ট্রিট স্মার্ট। দিল্লিতে আসার পরেই ও বুঝেছিল ন্যাশনাল স্টেডিয়াম এবং গুচ্চি পাজির (দ্রোণাচার্য পুরস্কার পাওয়া কোচ গুরুচরণ সিংহ) সম্পর্ক ভাল নয়। উস্তাদজি (প্রয়াত কোচ তারক সিংহ) এবং সনেট ক্লাব ছিল যে কোনও রাজ্য দলে সুযোগ পাওয়ার আসল জায়গা।”

‘সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায়’ থাকার প্রবাদ বরাবর মেনে এসেছেন মনহাস। সেই সময়েও তিনি ঠিক সেটাই করেছিলেন। ওই ক্রিকেটারের কথায়, “মনহাসের ক্রিকেটজীবন সাধারণ মানের। তবে ও জানত ঠিক কী দরকার এবং কত দিনের জন্য। ক্রিকেটার হিসাবে সনেটে খেলা রমন লাম্বা, অজয় শর্মা, কেপি ভাস্কর, আকাশ চোপড়া বা আশিস নেহরা, ঋষভ পন্থের ধারেকাছেও ছিল না। দিল্লি দলে সুযোগ পাওয়া পর্যন্তই ওর সঙ্গে সনেটের যোগাযোগ ছিল। ওএনজিসি-তে স্পোর্টস কোটায় চাকরি পাওয়ার পর আর সনেটের দিকে বিশেষ যায়নি।”

দিল্লিতে ক্রিকেট খেলার সময়েই মনহাস জানতেন, দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার সবচেয়ে ক্ষমতাবান কর্তা অরুণ জেটলি। তাই দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত এলাকায় থাকতে শুরু করেন, যা তখনকার প্রথম শ্রেণির কোনও ক্রিকেটার ভাবতেও পারতেন না। সাজঘরে কেমন ছিলেন নেতা হিসাবে? কেউ কেউ বলেন, নাকউঁচু। তবে বেশির ভাগই বলেছেন, কোথায় কী বলতে এবং করতে হবে সে ব্যাপারে দক্ষ ছিলেন মনহাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক ক্রিকেটার বলেছেন, “বিরাট কোহলির বাবা মারা যাওয়ার সময় মিঠুনই দিল্লির অধিনায়ক ছিল। দল সমস্যায় থাকা সত্ত্বেও মিঠুন বিরাটকে বলেছিল বাড়ি ফিরে যেতে। বিরাট যায়নি, খেলতে চেয়েছিল। মিঠুন রাজি হয়েছিল। পাশাপাশি, মিঠুনের বেশির ভাগ বন্ধুই ছিল তারকা ক্রিকেটারেরা। যেমন বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ। টি-টোয়েন্টিতে গড়পড়তা ক্রিকেট খেললেও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে ৫৫টা ম্যাচ খেলেছে (যখন সহবাগ অধিনায়ক ছিলেন)। পুণে ওয়ারিয়র্স এবং পঞ্জাব কিংসে খেলেছে (যখন যুবরাজ নেতৃত্বে ছিলেন)। সহবাগ এবং মিঠুন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।”

গম্ভীর আবার দিল্লির অধিনায়ক হওয়ার পর দেওয়াল লিখন পড়তে পেরেছিলেন মনহাস। ফিরে যান জম্মু ও কাশ্মীরে। এক বছর ক্রিকেট খেলার পরেই প্রশাসক হয়ে রাজ্য সংস্থা দুর্নীতি সাফ করতে নেমে পড়েন।

মনহাসের বোর্ড সভাপতি নিয়ে মজার মন্তব্য করেছেন তাঁরই এক প্রাক্তন সতীর্থ। বলেছেন, “থ্রি ইডিয়টস সিনেমার একটা সংলাপ মনে পড়ছে, ‘দোস্ত ফেল করে তো বুরা লাগতা হ্যায়, পর দোস্ত ফার্স্ট আ যায়ে তো অর বুরা লাগতা হ্যায়’ (বন্ধু ফেল করলে খারাপ লাগে, কিন্তু প্রথম হলে আরও খারাপ লাগে)।”

Mithun Manhas BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy