Advertisement
০৩ মে ২০২৪
India vs England 2024

২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে ২৯২৯ কিলোমিটার পাড়ি! দ্রাবিড়কেও আবেগে ভাসাল আকাশের জীবন

মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে বাবা এবং দাদাকে হারিয়েছেন আকাশ। দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে একাধিক রাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শেষে বাংলায় থিতু হয়েছেন আকাশ।

picture of Rahul Dravid and Akash Deep

(বাঁ দিকে) রাহুল দ্রাবিড় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন আকাশ দীপকে। ছবি: বিসিসিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৩
Share: Save:

ভারতের ৩১৩তম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে আকাশ দীপের। ২০০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে ক্রিকেটার আকাশকে অতিক্রম করতে হয়েছে ২৯২৯ কিলোমিটার। টেস্ট ক্যাপ তুলে দেওয়ার আগে বাংলার জোরে বোলারের এই সংগ্রামের কথা বলার সময় আবেগে ভাসলেন ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়।

দ্রাবিড় নিজে নতুন ক্রিকেটারদের হাতে ভারতীয় দলের টুপি খুব একটা তুলে দেন না। যেমন রাজকোটে সরফরাজ় খান এবং ধ্রুব জুড়েলের হাতে টেস্ট ক্যাপ তুলে দেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন অনিল কুম্বলে, দীনেশ কার্তিককে। আকাশকে অবশ্য দ্রাবিড় নিজেই দিলেন ভারতীয় টেস্ট দলের ঘন নীল রঙের টুপি।

টুপি তুলে দেওয়ার আগে দ্রাবিড় ছোট ভাষণে বলেন, ‘‘আকাশ, তুমি যাত্রা শুরু করেছিলে বাড্ডি নামে একটা জায়গা থেকে। যে জায়গাটা এখান (রাঁচী) থেকে মোটামুটি ২০০ কিলোমিটার দূরে। তোমার এই যাত্রায় প্রচুর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তুমি কঠোর পরিশ্রম করেছ। জীবনে প্রচুর চড়াই-উতরাই দেখেছ। ক্রিকেট খেলার জন্য তুমি নিজেই বাড্ডি থেকে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। দিল্লিতে একা থাকতে। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলে। তবু তোমাকে দিল্লি থেকে কলকাতায় যেতে হয়েছিল। বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছ। দীর্ঘ এই যাত্রা তোমাকে রাঁচীতে নিয়ে এসেছে। তোমার গ্রাম থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। এখানে তুমি ভারতের টেস্ট ক্যাপ পাচ্ছ।’’ দ্রাবিড় আরও বলেন, ‘‘জানি তোমার একটা বিশেষ অনুভূতি হচ্ছে। এখানে তোমার মা আছেন। পরিবারের অন্যরাও আছেন। খুবই দুর্ভাগ্যজনক তোমার বাবা এবং দাদা জীবিত নেই। আমরা নিশ্চিত, তাঁরা যেখানেই থাকুন, তাঁদের আশীর্বাদ তোমার সঙ্গে রয়েছে। আমাদের গোটা দল তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এই মুহূর্ত এবং ম্যাচটা উপভোগ কর। এই পর্যন্ত পৌঁছতে কঠোর পরিশ্রম করেছ। সেই জন্যই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছ। আমরাও খুব খুশি তোমার স্বপ্ন পূরণের সময় পাশে থাকতে পেরে। আগামী পাঁচ দিন এবং গোটা ক্রিকেটজীবন আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করো। আমি তোমার হাতে ভারতের ৩১৩ নম্বর টেস্ট ক্যাপ তুলে দিচ্ছি।’’ আকাশের জীবনসংগ্রামের কথা বলতে বলতে খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দ্রাবিড়। যা ধরা পড়েছে সমাজমাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পোস্ট করা ভিডিয়োয়।

পরে ২৭ বছরের ক্রিকেটার বলেন, ‘‘ভারতের হয়ে টেস্ট খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। আমার গ্রামের খুব কাছেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেলাম। পরিবারের সবাই আজ এখানে উপস্থিত রয়েছে। এর থেকে বেশি ভাল লাগার কিছু নেই আমার কাছে। পাশাপাশি আমাকে একটা বড় দায়িত্বও পালন করতে হবে। দেশের জন্য সেরা পারফরম্যান্স করতে হবে।’’

২০১৫ সালে ছ’মসের ব্যবধানে বাবা এবং দাদাকে হারিয়ে ছিলেন আকাশ। দু’জনকেই সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি রাস্তা এবং গাড়ির সমস্যা জন্য। কোভিডের সময় আকাশ হারিয়েছেন বৌদি এবং কাকিমাকেও। তাঁর মা-ও প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আকাশের জীবনের এই কথা বলার সময় আবেগে গলা ভারী হয়ে আসে দ্রাবিড়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE