গত সেপ্টেম্বরে শেষ তিনটি রবিবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। অক্টোবরের প্রথম রবিবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এ বার ছেলেরা নয়, মুখোমুখি হবেন মেয়েরা। মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত এবং পাকিস্তান। অর্থাৎ, পর পর চারটি রবিবার ভারত-পাক ক্রিকেট।
এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচ জেতার পর অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলা যাবে না। পরিসংখ্যান এতটাই একপেশে। হরমনপ্রীত কউরেরা কি সেই কথা বলতে পারবেন?
সুপার ফোরে ভারতের জয়ের পর সূর্যকে সাংবাদিক সম্মেলনে এক পাকিস্তানি সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই ‘ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ নিয়ে তিনি কী বলবেন? ভারত অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘‘এই প্রশ্নের উত্তরে আমি একটা কথা বলতে চাই। আমার মনে হয় আপনাদের সকলের ভারত-পাকিস্তান লড়াই নিয়ে এ বার প্রশ্ন করা বন্ধ করা উচিত।’’ এখানেই থেমে থাকেননি ভারত অধিনায়ক। বলেছিলেন, ‘‘আমার মতে, যদি দুটো দল ১৫-২০টা ম্যাচ খেলে এবং স্কোরলাইন ৭-৭, অথবা ৮-৭ হয়, তবেই সেটাকে ভাল ক্রিকেট বলা যায়। আমি সঠিক পরিসংখ্যান জানি না। কিন্তু একটা দলের পক্ষে যদি স্কোরলাইন ১৩-০, ১০-১ হয়, তা হলে এখন আর এটা কোনও লড়াই নয়। আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়।’’
পরিসংখ্যান দেখলে বোঝাই যায়, সূর্য খুব একটা খারাপ কথা বলেননি। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের লড়াইয়ে বেশির ভাগ ম্যাচই একপেশে হয়েছে। ভারত হাসতে হাসতে ম্যাচ জিতেছে। দুই দলের যে লড়াই গত শতকের শেষের দশক এবং চলতি শতকের প্রথম দশকে যে ভাবে উত্তেজক জায়গায় পৌঁছেছিল, তার ধারেকাছেও নেই এখন। ভারতের ক্রিকেটের মান যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনটাই পাকিস্তানের ক্রিকেট অতলে তলিয়ে গিয়েছে।
২০০৫ থেকে ২০১৪, এই ন’বছর ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটে ভাল রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তখন দুই দল খেলত তিন ফরম্যাটেই। হতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ও। ২০১২-র পর থেকে আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় হয় না। ভারত এবং পাকিস্তান খেলে শুধুমাত্র এশীয় এবং বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতাতেই।
২০০৫-এর মার্চ থেকে ২০১৪-এর মার্চ পর্যন্ত ভারত এবং পাকিস্তান সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৬টি ম্যাচ খেলেছিল। এর মধ্যে ভারত জিতেছিল ২৩টি ম্যাচ। পাকিস্তান ১৭টি ম্যাচ। আসল লড়াই হত টেস্টে। ভারত পাকিস্তানে যাক বা পাকিস্তান এ দেশে আসুক, প্রতিটি ম্যাচই হত হাড্ডাহাড্ডি। দুই দেশ শেষ বার টেস্ট সিরিজ় খেলেছে ২০০৭-এ। সেই সিরিজ় ভারত জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে। শেষ দ্বিপাক্ষিক এক দিনের সিরিজ় ২০১২-য়। ভারত সেই সিরিজ় হেরেছিল ২-৩ ব্যবধানে।
তবে ২০১৫-র পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের লড়াই একপেশে হয়ে গিয়েছে। শেষ সাড়ে দশ বছরে ভারত এবং পাকিস্তান ২০ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। ভারত জিতেছে ১৬ বার। পাকিস্তান ৩ বার। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। শেষ দশটি ম্যাচের পরিসংখ্যান তো পাকিস্তানের জন্য আরও খারাপ। ভারত আটটি ম্যাচে জিতেছে। পাকিস্তান মাত্র একটি। পরিত্যক্ত হয়েছে একটি ম্যাচ। ফলে সূর্যকুমার যে দাবি করেছেন, তা নেহাত অমূলক নয়।
এমন কোনও কথা হরমনপ্রীতের মুখ থেকে শোনা যায়নি ঠিকই। তবে তিনি অনায়াসে এ কথা বলতে পারেন। কারণ মহিলাদের ক্রিকেটে পরিসংখ্যান পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঝুঁকে।
আগামী রবিবার এক দিনের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত। এই ফরম্যাটে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে একটিও ম্যাচে হারেনি ভারত। ১১টি ম্যাচের সবক’টি জিতেছে। প্রথম বার ২০০৫-এ দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছিল। ভারত জিতেছিল ১৯৩ রানে। শেষ বার ২০২২ সালে এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ। সেই ম্যাচে ১০৭ রানে জিতেছিল ভারত। ১১টি ম্যাচের মধ্যে ভারত ১০০ বা তার বেশি রানে জিতেছে পাঁচ বার। এক বার ৯৫ রানে জিতেছে। এক বার ১০ উইকেটে জয় রয়েছে।
আরও পড়ুন:
টি-টোয়েন্টিতে দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে ১৬ বার। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৩ বার। পাকিস্তান তিন বার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কিছু কিছু ম্যাচ হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে। আবার কিছু ম্যাচে ভারতের একপেশে জয়ও রয়েছে।
মহিলাদের বিশ্বকাপে কোনও দিন সুপার সিক্সের গণ্ডি টপকাতে পারেনি পাকিস্তান। এ বারও তাদের ফর্ম ভাল নয়। শেষ ২৪টি ম্যাচের মধ্যে আটটিতে জিতেছে তারা। ধারাবাহিকতার অভাবই তাদের প্রধান সমস্যা। পাশাপাশি একাধিক ক্রিকেটারের ব্যাটিং অর্ডার বদলে যাওয়ায় তাঁরা কেমন খেলবেন তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সেই তুলনায় ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী দল নিয়ে নেমেছে। প্রথম ম্যাচে তারা শ্রীলঙ্কাকে ৫৯ রানে হারিয়েছে। এখন দেখার, পাকিস্তান ম্যাচের আগে হরমনপ্রীত মুখ খুলে কিছু বলেন কি না।