ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে আলোচনায় একটি ক্যাচ। ছোটদের এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ওই ক্যাচকে কেন্দ্র করে। ভারতের নেহাল ওয়াধেরা ও নমন ধির যৌথ ভাবে একটি ক্যাচ ধরেছিলেন। কিন্তু তা বাতিল করেন তৃতীয় আম্পায়ার। সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। ক্যাচ কি ন্যায্য ছিল? তবে কি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলেন আম্পায়ারেরা?
ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তানের ইনিংসের দশম ওভারে। সুযশ শর্মার বলে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের মাজ় সাদাকাত। বাউন্ডারিতে থাকা ওয়াধেরা ক্যাচ ধরেন। কিন্তু তিনি শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেননি। বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার সময় বলটি ভিতরে ছুড়ে দেন তিনি। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নমন সেটি ধরেন। উল্লাস শুরু করেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। কারণ সাদাকাত তখন অর্ধশতরান করে খেলছিলেন। তিনি আউট হলে ভারতের জেতার একটি সুযোগ তৈরি হত।
সাদাকাত নিজেও ডাগ আউটের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। তাঁকে আটকান আম্পায়ারেরা। তার পরেই জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যায় ‘নট আউট’ দিয়েছেন তৃতীয় আম্পায়ার। জিতেশ শর্মা-সহ পুরো ভারতীয় দল আম্পায়ারদের সঙ্গে উত্তপ্ত আলোচনায় জড়ান। ডাগ আউটের সামনে ভারতের কোচ সুনীল জোশীও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের নিয়ম বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন আম্পায়ারেরা। কিছু ক্ষণ আলোচনার পর ভারতীয় ক্রিকেটারেরা আবার খেলা শুরু করেন। তবে তাঁদের চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, মোটেই খুশি হতে পারেননি তাঁরা।
ক্যাচ ধরার পরেও কেন আউট হলেন না পাক ব্যাটার?
নেপথ্যে রয়েছে একটি নিয়ম। ২০২৫ সালের জুন মাসে এই ধরনের যৌথ ক্যাচের নিয়মে একটি বদল করেছে এমসিসি। ১৯.৫.২ ধারায় একটি বদল করা হয়েছে। আগে এই ধরনের ক্যাচের ক্ষেত্রে এক জন ফিল্ডার বল ধরে বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার সময় বল ছুড়ে দিতেন। অপর ফিল্ডার মাঠের ভিতরে সেই ক্যাচ ধরতেন। যে ফিল্ডার প্রথমে বল ধরেছিলেন তিনি বাউন্ডারির বাইরে কত ক্ষণ থাকলেন বা কত বার গেলেন সেটা দেখা হত না। কিন্তু এখন সেই নিয়ম কিছুটা বদলেছে।
আরও পড়ুন:
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, বাউন্ডারির বাইরে এক বারই যেতে পারবেন কোনও ফিল্ডার। তিনি যদি ক্যাচ ধরার সময় হাওয়ায় থাকেন, তা হলে ধরা হবে যে তিনি বাউন্ডারির বাইরে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বল অন্য ফিল্ডারের দিকে ছুড়ে দেওয়ার পর যত ক্ষণ না ক্যাচ সম্পূর্ণ হচ্ছে, তাঁকে বাউন্ডারির ভিতরেই থাকতে হবে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় বার আর বাউন্ডারির বাইরে পা রাখতে পারবেন না তিনি। তা হলেই ধরা হবে যে ক্যাচ ধরার সময় তিনি বাউন্ডারির বাইরে চলে গিয়েছেন। ফলে ব্যাটার আউট হবেন না। তবে সে ক্ষেত্রে ব্যাটারকে ছয় রানও দেওয়া হবে না। যেমনটা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে। সাদাকাত আউট না হলেও রান পাননি। ক্যাচ ধরার মুহূর্তে দুই ব্যাটার ক্রস না করায় এক রানও পাননি তাঁরা।
ভারত-পাক ম্যাচে সাদাকাতের বল যখন ওয়াধেরা ধরেছিলেন, তখন তিনি লাফিয়েছিলেন। ফলে তখনই ধরে নেওয়া হয়েছে যে, তিনি বাউন্ডারির বাইরে রয়েছেন। নমনের দিকে বল ছুড়ে দেওয়ার পর আবার ওয়াধেরা বাউন্ডারির বাইরে পা রাখেন। ফলে নমন বাউন্ডারির ভিতরে বল ধরলেও ওয়াধেরা দ্বিতীয় বার বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ায় সেই ক্যাচ বাতিল করেন তৃতীয় আম্পায়ার। ক্রিকেটের নিয়ম মেনেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ধরনের ক্যাচে যে নিয়ম বদলেছে, তা হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটারেরা জানতেন না। তাই আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান তাঁরা।
ক্যাচ বাতিল হওয়ার খেসারত ভারতকে দিতে হয়েছে। প্রথমে ব্যাট করে ১৯ ওভারে ১৩৬ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। ১৩.২ ওভারে রান তাড়া করে ৮ উইকেটে জেতে পাকিস্তান। ৪৭ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচের সেরা হন সাদাকাত।